• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

বাংলাদেশের পর্যটন আয় হাতিয়ে নিচ্ছে বিদেশি বুকিং সাইট!

প্রকাশিত: ২১:২৭, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

আপডেট: ১০:৩৩, ১ মে ২০২৪

ফন্ট সাইজ
বাংলাদেশের পর্যটন আয় হাতিয়ে নিচ্ছে বিদেশি বুকিং সাইট!

বছর দুয়েক আগেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা সবার কাছে পরিচিত ছিল দেউলিয়া হিসেবে। চরম সংকটের মুখে দেশটি ঋণ নিয়েছিল বাংলাদেশ থেকেও। অথচ বছর না ঘুরতেই সব বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশটির অর্থনীতি। বর্তমানে তাদের মূল্যস্ফীতিও বাংলাদেশের চেয়ে কম। গেল বছর তারা বাংলাদেশ থেকে নেওয়া ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণও শোধ করেছে। যার সবাই সম্ভব হয়েছে পর্যটনের মাধ্যমে।

করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে চলা নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ার পর দেশটি আবারও আদাজল খেয়ে নামে পর্যটক আকর্ষণে। পর্যটকরাও লুফে নেয় তাদের সুবিধাগুলো। ফলশ্রুতিতে, বছর না ঘুরতে খাদের কিনারা থেকে ফিরে চাঙ্গা হয়েছে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি।

শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশেরও রয়েছে বিস্তর পর্যটন খাত। একদিকে আছে বিশাল সমুদ্র, আরেকদিকে সংস্কৃতির প্রাচুর্যে ভরা পাহাড়। অন্যদিকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শক্তিতে বুক উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সুন্দরবন, দেশজুড়ে আছে প্রকৃতির বহু স্বর্গরাজ্য। ছবির মতো দেখতে সুজলা-সুফলা প্রতিটি গ্রামতো আছেই, ঘাটতি নেই ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনারও। সব মিলিয়ে পর্যটনকেন্দ্রে ভরপুর বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের করা দেশের পর্যটনের মহাপরিকল্পনার তথ্য বলছে, সারাদেশে ১ হাজার ৪৯৭টি পর্যটন স্পট রয়েছে। কিন্তু এত এত পর্যটন কেন্দ্র থাকার পরও পর্যটন থেকে রেমিটেন্স আয়ে দেউলিয়া শ্রীলঙ্কার থেকেও অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জিডিপিতে পর্যটনের অবদান ১০ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে মাত্র ৩ শতাংশ অবদান রাখছে এই খাত। 

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের তথ্য বলছে, গত ২০২২ সালে বাংলাদেশে বিদেশ থেকে এসেছেন অন্তত ৫ লাখ পর্যটক। ২০১৯ সালের তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় ২ লাখ বেশি। সংস্থাটির তথ্যমতে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ৩ লাখ ২৩ হাজার ২৯৫ জন বিদেশি পর্যটক এসেছিল। ২০১৮ সালে বিদেশি পর্যটক এসেছিল ২ লাখ ৬৭ হাজার ২০৯ জন। ২০১৭ সালে ২ লাখ ৩৭ হাজার। 

আয়ের হিসেবে পর্যটন থেকে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের আয় ছিল ১ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে ২ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। ২০২২ সালের আয়ের পরিমাণ না জানালেও সেবছর বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটনের অবদান ৩.০২ শতাংশ ছিলো বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো ৩ লাখ ২৩ হাজার পর্যটক আসা ২০১৯ সালেও পর্যটনে জিডিপি আয় ছিল ২০২২ সালের মতোই ৩.০২ শতাংশ! অর্থাৎ পর্যটক বাড়লেও আয় বাড়েনি। কিন্তু কেন?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে শুভঙ্করের বিশাল ফাঁকি। অনুসন্ধান বলছে, দেশের পর্যটনের আয় হয়ে যাচ্ছে বেহাত। চলে যাচ্ছে অন্য দেশে! বিশেষ করে বিদেশি বুকিং সাইটের মাধ্যমেই কোটি কোটি টাকা চলে যাচ্ছে ভিনদেশে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টদের দাবি, এটা সত্য যে, ব্যবসাসহ নানান কারণে বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটক আসার সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে তাদের ভ্রমণের কোনো টাকাই পাচ্ছে না বাংলাদেশ। ওই সকল পর্যটক হোটেল বা রিসোর্ট বুকিং দেন বিদেশি ট্যুর অপারেটর ও হোটেল বুকিং ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে। কিন্তু ওইসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন না করায় এই খাতে বিপুল অংকের টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে। যার বড় অংশই যাচ্ছে অবৈধ পথে। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের বাজারে রাজত্ব করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হোটেল বুকিং ও পর্যটন সেবা দাতা প্রতিষ্ঠান বুকিং ডটকম ও আগোডা ডটকম। সেই সঙ্গে দাপট দেখাচ্ছে মার্কিন আরেক প্রতিষ্ঠান এয়ার বিএনবি, বিল গেটসের মালিকানাধীন এক্সপেডিয়া ডট এমএক্স, ভারতীয় কোম্পানি মাইট্রিপ, চীনা কোম্পানি সিট্রিপসহ আরও বেশ কিছু আন্তর্জাতিক বুকিং সাইট। অনলাইনভিত্তিক এসব পর্যটন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশের অন্তত ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল বা পর্যটন সংশ্লিষ্ট সংস্থা।

তথ্য বলছে, দেশের অধিকাংশ তারকা মানের হোটেলের ৩০-৪০ শতাংশ রুমই বুকিং হয় বিদেশি অনলাইন বুকিং সাইটের মাধ্যমে। তারকা ছাড়া স্ট্যান্ডার্ড মানের হোটেলগুলোও একই পদ্ধতিতে যুক্ত রয়েছে বিদেশি সাইটগুলোর সঙ্গে। এসব রুম বুকিংয়ের ক্ষেত্রে বিদেশি বুকিং সাইটগুলোকে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দিচ্ছে হোটেলগুলো। কিন্তু বুকিং ডটকমের মতো বিদেশি সাইটগুলোর বাংলাদেশে কোনো শাখা নেই, বাংলাদেশে নেই তাদের কোনো ট্রেড লাইসেন্স বা নিবন্ধন। এমনকি বাংলাদেশি ব্যাংকিং চ্যানেলেও লেনদেন নেই তাদের। ফলে তারা কমিশনের যে টাকা নিচ্ছে সেটির কর বাবদ বছরে শত কোটি টাকার কর বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এছাড়াও তথ্য পাওয়া গেছে, কোনো বৈধ গেটওয়ে না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্ত কমিশনের পুরো টাকা নিচ্ছে অবৈধ পথে।

অপরদিকে, বাংলাদেশের বেশ কিছু চেইন হোটেলের মালিক বিদেশি কোম্পানি। এসব হোটেলের মাদার কোম্পানি চুক্তিবদ্ধ রয়েছে বুকিং ডটকম, আগোটা ডটকম, এক্সপিডিয়ার মতো অনলাইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক ট্যুর অপারেটর কোম্পানিগুলোর সঙ্গে। দেশের ভেতরে রুম বুকিং হলেও তারা লেনদেন করছে দেশের বাইরের মাদার কোম্পানির সঙ্গে। ফলে দেশে অবস্থিত হোটেলটি তাদের মাদার কোম্পানির নির্দেশে বাংলাদেশে আসা পর্যটকদের সব সেবা দিচ্ছে কিন্তু লেনদেনের কোনো অংশই তাদের মাধ্যমে হচ্ছে না। ফলে পর্যটক এলেও তার মাধ্যমে কোনো টাকা আসছে না বাংলাদেশে! এতে ওই ট্যুরিস্ট থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হোটেল ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশের বাজারে এখন সবচেয়ে বেশি আধিপত্য মার্কিন কোম্পানি বুকিং ডটকমের। তারা অন্তত শতাধিক ওয়েসাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশের পর্যটনের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু এগুলোর কোনোটিরই বাংলাদেশে অফিস নেই। বুকিং ডটকমের নিকটবর্তী অফিস আছে কলকাতায়। তারা বাংলাদেশের বেশ কিছু হোটেলের সঙ্গে সরাসরি ব্যবসা করছে আবার কিছু হোটেলের সঙ্গে এজেন্টের মাধ্যমে ব্যবসা করছে। মানভেদে সরাসরি হলে ট্যুরিস্ট প্রতি ১৫% এবং এজেন্টের মাধ্যমে হলে ২০% কমিশন নেয় বুকিং ডটকম। সাধারণত ট্যুরিস্টের কাছ থেকে টাকা হোটেলগুলোই নেয়, পরে মাস শেষে বুকিং ডটকমকে কমিশনের টাকা পাঠায়। কোনো হোটেল এই টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাঠায়, কেউ পাঠায় ক্রেডিট কার্ডের ডুয়াল কারেন্সির মাধ্যমে। কিছু হোটেলের পেঅথরাইস আছে। তারা পেঅথরাইসের মাধ্যমে লেনদেন করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজারের স্ট্যান্ডার্ড এবং তারকা মানের অন্তত ৪৫টি হোটেল-রিসোর্ট যুক্ত রয়েছে বুকিং ডটকমের সঙ্গে। এর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড মানের হোটেল রয়েছে ১৮টি, তারকা হোটেল আছে ২৭টি। রুম বুকিংয়ের কমিশন বাবদ প্রতি মাসে স্ট্যান্ডার্ড হোটেলগুলো বুকিং ডটকমকে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়ে থাকে। তারকা মানের হোটেলগুলো মাসে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত কমিশনের টাকা পাঠায় বুকিং ডটকমের কলকাতা অফিসে। এই হিসেব পর্যালোচনা করে গড়ে ৫০ হাজার টাকা করে ধরলেও কক্সবাজারের হোটেলগুলো থেকে বুকিং ডটকম মাসে কমিশন পাচ্ছে ২০ লাখ টাকারও বেশি। যার বড় অংশই যাচ্ছে অবৈধ পথে!

অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সারা দেশের ২৮৯টি হোটেল এবং ১৬টি রিসোর্ট যুক্ত রয়েছে। রেস্টুরেন্টসহ আরও বিভিন্ন সেবা মিলিয়ে বাংলাদেশি প্রায় ৪শ প্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত বুকিং ডটকমের সাথে। একই পদ্ধতিতে সবগুলো প্রতিষ্ঠানের কমিশনের ধারণগত হিসেব করলে মাসে দেড় কোটি টাকার বেশি বুকিং ডট কমে চলে যাওয়ার চিত্র পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে বিদেশি ট্যুরিস্ট আকর্ষণে কাজ করা দেশীয় ট্যুর অপারেটরদের অভিযোগ, বিদেশি এজেন্সিগুলোর এই তৎপরতার কারণে শুধু সরকারের আয় কমাই নয়, দেশের পর্যটন সেক্টরে কর্মহীনতা সৃষ্টির শঙ্কাও তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে পর্যটন সংক্রান্ত বিভিন্ন দফতরে অভিযোগও করেছেন তারা।

এ বিষয়ে ট্যুরিজম ডেভেলপার অ্যাসোসিয়েশন (টিডাব) এর পরিচালক এম জেড আই ডালটন জহির বলেন, আমরা ব্যবসার জন্য সরকারের নিয়ম মেনে ট্রেড লাইসেন্স করেছি, পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধন নিয়েছি, নিয়মিত ভ্যাট-ট্যাক্সও দিচ্ছি। অথচ বাংলাদেশের কোনো হোটেল মোটেলে আমাদের ব্যবসার জন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই, বিমান ফেয়ারেও আমরা বঞ্চিত। হোটেলগুলো অনলাইনভিত্তিক বিদেশি বুকিং সাইটগুলোকে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দেয়, অথচ আমাদেরকে ১০ শতাংশও দিতে চায় না। হোটেলগুলো নিজেরা ১০-১২ শতাংশ ডিসকাউন্ট অফার দেয়। একজন ট্যুরিস্ট নিজে হোটেলে গেলে এটা পায়, আবার পেমেন্ট গেটওয়ে থেকে ক্যাশব্যাকও পায়। অথচ আমি যখন কোনো ট্যুরিস্ট নিয়ে যাই আমাকেও সাধারণ পর্যটকের মতো সেই ১০-১২% ডিসকাউন্টেই হোটেল নিতে হচ্ছে, তাহলে আমি যে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে বিদেশ থেকে একজন পর্যটক নিয়ে আসলাম আমার ব্যবসাটা কই? 

বিদেশি বুকিং সাইটের অবৈধ তৎপরতা, বিমানের সিন্ডিকেট এবং হোটেল মালিকদের মূল্য নির্ধারণে অনিয়মের কারণে সরকারের নিবন্ধিত ট্যুর অপারেটর কোম্পানিগুলো বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে। এতে অসংখ্য মানুষ কর্মহীন হবে বলেও অভিযোগ করেন এই পর্যটন ব্যবসায়ী।

জানা গেছে, সম্প্রতি এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে অভিযোগ দিয়েছে দেশীয় ট্যুর অপারেটরদের বিভিন্ন সংস্থা। তারা বলছে, এখানে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। হোটেল ভাড়া নির্ধারণ, কোন হোটেল কাকে কতটুকু কমিশন বা ডিসকাউন্ট দিতে পারবে কোনোটিই নির্ধারণ করার ক্ষমতা পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নেই। কারণ এটি নিয়ন্ত্রণ হয় এনবিআরের মাধ্যমে। ফলে এই মন্ত্রণালয় কাউকে খবরদারিও করতে পারছে না। করলেও হোটেল তার কথা শুনছে না। অপরদিকে, আইনে বিদেশি বুকিং সাইটগুলোর বাংলাদেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা না থাকায় এবং বাংলাদেশে তাদের কোনো অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা না থাকায় তাদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারছে না পর্যটন মন্ত্রণালয়।

সমস্যা সমাধানে দ্রুত দেশি ট্যুর অপারেটর, হোটেল মালিক, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের ব্যবস্থা করা; সবাই মিলে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের পথ বের করা এবং অবাধ্যদের বাধ্য করার ব্যবস্থা করা; বিদেশি ট্যুর অপারেটর কেমন কমিশন পাবে, দেশিরা কেমন পাবে সেটির একটি নীতিমালা তৈরি করা এবং নতুন নীতিমালার মাধ্যমে বিদেশি ট্যুর এজেন্সিগুলোর বাংলাদেশে অফিস করা এবং বাংলাদেশের ব্যাংকিং গেটওয়েতে লেনদেন বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দিয়েছেন পর্যটন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম এন্ড হোটেল ওয়ার্কার্স-এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের আহ্বায়ক মো. রাশেদুর রহমান বলেন, আমরা যারা হোটেলে চাকরি করি এই বিষয় আমরা জানলেও আমাদের করার কিছু নেই। অথচ বিদেশি কোম্পানি বড় বড় পার্সেন্টিস নিয়ে যাওয়ায় আমাদের ইন্ড্রাস্ট্রি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, দিনশেষে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। যেই বুকিং ডট কমের মাধ্যমে আমাদের দেশে অবাধে ব্যবসা হচ্ছে সেই বুকিং ডটকম কিন্তু পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে এভাবে ব্যবসা করতে পারেনি। ভারতে স্থানীয় কোম্পানিকে নিয়ে বুকিং ডটকম ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড নামে পরিচালনা করতে হচ্ছে। ফলে ভারত সরকার এটার রেভিনিউ পাচ্ছে, তাদের পর্যটন খাতও উপকৃত হচ্ছে। অথচ আমরা এভাবে ছেড়ে দিয়েছি। দেশের স্বার্থে, দেশের পর্যটনের উন্নয়নের স্বার্থে শিগগিরিই এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ বাংলাভিশনকে বলেন, আমাদের হোটেলগুলো এবং বিমান কোম্পানিগুলো আমাদের তুলনায় বিদেশি কোম্পানিগুলোকে বেশি সুযোগ সুবিধা দেয়। সাধারণত এই ছাড় বা কমিশনগুলো কে কেমন ক্লায়েন্ট দিতে পারছে তার আলোকে নির্ধারণ হচ্ছে। বুকিং ডটকম গ্লোবাল প্রতিষ্ঠান, তারা বেশি ক্লায়েন্ট দিচ্ছে এজন্য সুযোগ সুবিধাও তারাই বেশি পাচ্ছে। তবে দেশের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে লোকাল কোম্পানিগুলোকে বেশি ছাড় দেওয়া উচিত। কিন্তু আমরা যারা দেশে আছি তাদের সে পরিমাণ ছাড় দেওয়া হয় না। আমাদেরকে যা দিচ্ছে তার থেকে করপোরেটকে আরও বেশি দিচ্ছে। একটা এলোমেলো অবস্থা চলছে এখানে।

তিনি আরও বলেন, বিমানের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। লোয়ার ক্লাসের টিকিটগুলো বাংলাদেশ থেকে বুকিং অফ করা। অথচ বিদেশ থেকে ঠিকই এগুলোতে বুকিং দিতে পারে। ফলে ১ লাখ টাকার টিকিটে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার প্রাইস ব্যবধান তৈরি হয়। 

গত ২-৩ বছর যাবত বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে বেশি কাজ করছে। এর আগে তেমন ছিল না। সেজন্য আলোচনাও ছিল না। এখন বিষয়টি আমাদের কাছে এলার্মিং হওয়ায় আমরা এখন সরকারকে জানাচ্ছি এবং তাদের সহযোগিতা চাচ্ছি- বলেন আটাব সভাপতি।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং হোটেল ও রেস্তোরাঁ সেলের নিয়ন্ত্রক মো. মনোয়ার হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলাভিশনকে জানান, বাংলাদেশে বিদেশি কোনো বুকিং সাইটের কাজ করা এবং কমিশন নেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2