• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

আশা জাগাচ্ছে গ্রামীণ কৃষি পর্যটন

প্রকাশিত: ১৩:৫৯, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

আপডেট: ১৬:২৯, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

ফন্ট সাইজ
আশা জাগাচ্ছে গ্রামীণ কৃষি পর্যটন

একটি গ্রাম। যেখানে একসংগে আছে কামার, কুমোর, চাষী, জেলেসহ কৃষিনির্ভর বাংলার সব নমুনা। আছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, সবুজ সতেজ ফল-ফসল।

অপরূপ সাজে সাজানো এই গ্রামের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়েছে গ্রাম ঘেঁষে বয়ে যাওয়া শান্ত ভৈরব নদ। রাস্তার ধারে প্রায় চার শতাব্দী ধরে দাঁড়িয়ে থাকা জগডুমুর বৃক্ষ আবেদন আরও বাড়াচ্ছে। সংগে আছে গ্রামবাসীর অনিন্দ্য আপ্যায়ন। যা কেড়ে নিচ্ছে পর্যটক মন।

বলছি, যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জয়রামপুর কৃষি পর্যটন গ্রামের গল্প। আবহমান বাংলার কৃষি ঐতিহ্য বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে এই গ্রামকে গড়ে তোলা হয়েছে দেশের প্রথম কৃষিভিত্তিক পর্যটন গ্রাম হিসেবে। যা এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পরিচিতি অর্জন করছে বিশ্বের বুকে। আকর্ষণ করছে বিশ্ব পর্যটকদের।

২০২০-এ এই গ্রামকে কৃষি পর্যটন গ্রাম ঘোষণা করা হয়। যার মূল লক্ষ্য ছিলো বিদেশী পর্যটকদের কাছে বাংলার গ্রামীণ কৃষি সংস্কৃতি তুলে ধরা। কিন্তু করোনা’র কারণে সেই প্রক্রিয়া থমকে গেলেও মাঝে মাঝেই এখানে আসছেন দেশীয় পর্যটকরা। ঘুরে দেখছেন কৃষির অনুষঙ্গগুলো। অল্প সময়ের জন্য হলেও সাজছেন কৃষক, থাকছেন কৃষকেরই কুঁড়ে ঘরে।

দূর দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের নিজের ঘরে আপ্যায়ন করতে পেরে আনন্দ পান গ্রামবাসীও। চাহিদাভেদে বিল্ডিং, টিনের ঘর বা মাটির ঘরে থাকার সুযোগ রাখা হয়েছে। আছে কটেজ বা তাঁবুতে থাকার সুযোগ। পর্যটক এলে আয়োজন করা হয় দেশীয় সংস্কৃতির নানান খেলাধুলারও।

গ্রামটিকে একখণ্ড বাংলাদেশ বলে পরিচয় দিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। বলছেন, উদ্যোগ পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে বিশ্ব পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ হবে জয়রামপুর গ্রাম।

জয়রামপুর কৃষি পর্যটন গ্রাম-এর উদ্যোক্তা কামরুল বাশার রয়েল বলেন, কৃষি পর্যটন গ্রাম হিসেবে বাছাইয়ের জন্য আমরা দেশের ২৪টি জেলায় ঘুরেছি। সবচেয়ে সেরা গ্রাম পেয়েছি জয়রামপুরকে। এজন্য এই গ্রামটিকে নিয়েই কাজ শুরু করেছি। আমাদের মূল লক্ষ্য বিদেশী পর্যটকদের এখানে নিয়ে আসা। যদিও করোনা’র কারণে গত এক বছরে সফলতা আনতে পারিনি। আশা করছি অনুকূল পরিবেশ পেলে এই বছরই জয়রামপুর গ্রামকে পুরোপুরি প্রস্তুত করে ফেলবো।

তিনি আরও বলেন, আমরা এখন দেশীয় পর্যটকদের আনছি। তারা অনেকেই এসে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। আশা করছি বিদেশীরা আরও বেশি সন্তুষ্ট হবে। তবে বিদেশীদের জন্য সেবার ভাষাগত ও খাদ্য ব্যবস্থাপনার দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে। সেটি মাথায় রেখে আমরা ইতিমধ্যে গ্রামের তরুণ-তরুণীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছি। আসা করছি এক বছরের মধ্যে এটা একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি পর্যটন গ্রামে রূপ পাবে এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করবে।  

আমরা সবাইকে বলবো জয়রামপুরে এসে দেখে যান একখণ্ড বাংলাদেশ, উল্লেখ করেন উদ্যোক্তা কামরুল বাশার।

জয়রামপুর কৃষি পর্যটন গ্রাম-এর সমন্বয়ক মামুন শেখ মুন্না বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, আমাদের গ্রামে হিন্দু, মুসলিম ও খ্রিস্টান তিন ধর্মের মানুষের বসবাস হলেও আমাদের মধ্যে ধর্মী ও রাজনৈতিক সম্প্রীতি রয়েছে। এটি আমাদের বড় সম্পদ। আমাদের গ্রামটি ভৌগলিকভাবেই সুন্দর। চারপাশে কৃষির সব ধরনের উপাদান থাকা ও বিভিন্ন ধর্মের সংস্কৃতি বিদ্যমান থাকায় পর্যটনের জন্য গ্রামটি সম্পদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের মানুষগুলো পর্যটক পেলে অনেক খুশি হয়। তাদের যেমন গ্রাম ঘুরে দেখায় তেমনি নিজের সক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ আপ্যায়নেরও চেষ্টা করে। এটাকেই আমরা কাজে লাগিয়ে গ্রামটিকে পর্যটন গ্রাম হিসেবে সাজিয়েছি। আমাদের এখানে পর্যটক এলে মাটির ঘর, টিনের ঘর, বিল্ডিং ঘর যে কোনো ঘরে থাকতে পারবে। এছাড়া, আমাদের প্রজেক্টের কটেজ এবং তাবুতে থাকার ব্যবস্থাতো আছেই।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপ্লোরার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সাগর বলেন, আমরা সাংগঠনিকভাবে শুরু থেকেই জয়রামপুর পর্যটন গ্রামের সংগে আছি। এখানকার ইতিবাচক দিক হলো গ্রামের মানুষগুলো খুব আন্তরিক। যদিও করোনা’র কারণে কিছুটা পিছিয়ে গেছে তবে আমরা আশাবাদী একটু অনুকূল পরিবেশ পেলে এবং উদ্যোগটি যথাযথ বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে এই গ্রামটি।

এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ বলেন, আমি এখনো যেতে পারিনি তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রামটি সম্পর্কে জেনেছি। যতটুকু জেনেছি তাতে মনে হচ্ছে গ্রামটি পর্যটন খাতে আশার আলো দেখাবে। আমি নিজেই যাবো গ্রামটিতে, এলাকাবাসীর সংগে কথা বলবো এবং বিশ্ববাসীর কাছে গ্রামটিকে তুলে ধরতে আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ করবো।

পর্যটন যেহেতু সেবামূলক পণ্য তাই এখানে দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে পর্যটন কেন্দ্রের সংগে সম্পৃক্ত গ্রামবাসীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এখানেও তাঁরা চাইলে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা পেলে গ্রামীন পর্যটন নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। কেননা এখন মানুষ প্রকৃতির কাছে যেতে চায়। গ্রাম এবং কৃষিতো প্রকৃতিরই অংশ। তাই আগামীতে গ্রামীণ পর্যটন আমাদের গ্রামীণ উন্নয়নের হাতিয়ার হবে বলে আমি মনে করি।

 

বিভি/কেএস/রিসি 

মন্তব্য করুন: