• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী দুটি রাজবাড়ি ধ্বংসপ্রায়

প্রকাশিত: ১২:৫৩, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী দুটি রাজবাড়ি ধ্বংসপ্রায়

রাণীশংকৈলে টংক রাজার বাড়ি

ঠাকুরগাঁও জেলার ৫টি উপজেলায় ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় জিনিস। এরমধ্যে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী রাজা টঙ্কনাথের রাজবাড়ি ও হরিপুর উপজেলার রাজবাড়ি। যা সহজেই মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদের। কিন্তু দিনের পর দিন কোনো সংস্কার না হওয়ায় প্রায় ধ্বংসের পথে রাজবাড়ী দুটি।

সরেজমিনে দেখা যায় স্থানীয় মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে দর্শনীয় এ স্থানগুলো। জেলাবাসীর দাবি যেন ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ী দুটি সংস্কার করে আগামী প্রজন্মের জন্য ঠিকিয়ে রাখা হয়।

ঠাকুরগাঁও থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাণীশংকৈল উপজেলা। সেখান থেকে মাত্র ১০ টাকা রিকশা ভাড়ায় পৌঁছানো যায় এক কিলোমিটার দূরবর্তী রাজা টঙ্কনাথের রাজবাড়িতে। এই জনপদ ১১০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে মালদুয়া পরগণার অন্তর্গত ছিল বলে আগে এই রাজবাড়ি মালদুয়ার রাজবাড়ি হিসেবে পরিচিত ছিল। ব্রিটিশ সরকারের আস্থা লাভ করার জন্য রাজা বুদ্ধিনাথের ছেলে টঙ্কনাথ এখানে ‘মালদুয়ার কোট’ স্থাপন করেছিলেন। পরে রাজা টঙ্কনাথের স্ত্রী রাণী শংকরী দেবীর নামে এই এলাকার নাম হয় রাণীশংকৈল। এককালে জাকজমকপূর্ণ কারুকাজে খচিত এই প্রাচীন রাজভবনটিতে এখনও অনেক কারুকাজ করা দেওয়াল অবশিষ্ট আছে। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে রাজবড়িটি নির্মিত হয়। রাজা টংকনাথের পিতা বুদ্ধিনাথের আমলেই রাজবাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বুদ্ধিনাথের মৃত্যুর পরে রাজা টংকনাথ রাজবাড়ির অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন।

হরিপুর রাজবাড়িটি হরিপুর উপজেলার কেন্দ্রস্থলে। এই রাজবাড়ি ঘনশ্যাম কুন্ডুর বংশধররা প্রতিষ্ঠা করেছিল। মুসলিম শাসন আমলে আনুমানিক ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে ঘনশ্যাম কুন্ডু নামক একজন ব্যবসায়ী কাপড়ের ব্যবসা করতে হরিপুরে আসেন। তখন মেহেরুন্নেসা নামে এক বিধবা মুসলিম মহিলা এ অঞ্চলের জমিদার ছিলেন। তার বাড়ি মেদিনীসাগর গ্রামে। জমিদারির খাজনা দিতে হতো তাজপুর পরগনার ফৌজদারের নিকট। খাজনা অনাদায়ের কারণে মেহেরুন্নেসার জমিদারির কিছু অংশ নিলাম হয়ে গেলে ঘনশ্যাম কুন্ডু কিনে নেন। ঘনশ্যামের পরবর্তী বংশধরদের একজন রাঘবেন্দ্র রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বৃটিশ আমলে হরিপুর রাজবাড়ির কাজ শুরু করেন। কিন্তু তার সময়ে রাজবাড়ির কাজ শেষ হয়নি। রাঘবেন্দ্র রায়ের পুত্র জগেন্দ্র নারায়ণ রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে রাজবাড়ির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন। 

দুটি ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ীর দরজা, জানালাসহ মুল্যবান জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে। সন্ধ্যায় সে জায়গায় চলে মাদক সেবনসহ নানা অপকর্ম। তদারকি না থাকায় বাড়ির ছাদসহ বিভিন্ন স্থানে গজিয়েছে গাছপালা। খসে পড়েছে পলেস্তরা। জরাজীর্ণ অবস্থায় এই দুটি জমিদার বাড়ি। অনেকে আগ্রহ ভরে দৃষ্টিনন্দন এই জমিদার বাড়িটি দেখতে আসছেন দূরদূরান্তের মানুষ। কিন্তু এর ভগ্নদশা দেখে মন খারাপ করে ফিরছেন তারা। সংস্কার করা হলে এই বাড়িও হতে পারে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র এমন মন্তব্য দর্শনার্থীসহ এলাকাবাসীর।

বিভি/এনএ

মন্তব্য করুন: