বাঙালির `আইডেন্টিটি` রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথ ঠাঁকুর
আজকের দিনে কলকাতায় জন্ম নিয়েছিলেন বাঙালির 'আইডেন্টিটি' রবীন্দ্রনাথ। না জন্মালে কী হতো সে প্রশ্ন অবান্তর। তবে তিনি বেঁচে থাকতে এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে প্রথমে অবিভক্ত বাংলায়, পরে দুই বাংলায় কত শত মানুষ যে বিদ্ব্যান বনে গেছে সে হিসেবও মেলে না। জমিদার, উচ্চবিত্ত, সাম্যবাদী নন, প্রজাহিতৈষী নন, দারিদ্র না বোঝা, সাম্প্রদায়ীক, উন্নাসিক.....অতঃপর 'হিন্দু কবি'! কতই না অভিধা তাঁর! অথচ সেই তাঁকে নিয়েই শত-সহস্র কবি-লেখক করে-কম্মে খাচ্ছেন! তাঁকে ফাতা ফাতা করে ফেলা হয়েছে। হচ্ছে। এমনকি তিনি কীভাবে আম কেটে খেতেন তা নিয়ে পুস্তক রচনা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে বাঙালি তাঁকেই 'ভাঙিয়ে খাচ্ছে'। উপায় নেই। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি অলঙ্কৃত করেননি। না, নেই।
আমার রাজনৈতিক মতবাদের দিক থেকে তিনি আমার নমঃস্য নন। আবার আমি এটাও মনে করি; তাঁর ছোটগল্প আর সংগীত বাদ দিলে বাঙালির ভাঁড়ার ঘর প্রায় শূণ্য।
সত্যি বলতে কি তাঁর গানকে আমার কেবলই সুরবদ্ধ ছন্দময় ঐক্যতান মনে হয় না। মনে হয় মহাকালের স্বপ্নময় বাস্তবতা! আমি আজও ভেবে পাই না এই মানুষটা কীকরে এমন সুর ও বাণী সৃষ্টি করতে পারল! এ আমার পরম বিস্ময়!
জন্মদিনে তাঁরই একটি গান নিবেদন করলাম
আমার যাবার বেলায় পিছু ডাকে
ভোরের আলোয় মেঘের ফাঁকে ফাঁকে
পিছু ডাকে পিছু ডাকে ...
বাদল প্রাতের উদাস পাখি উঠে ডাকি
বনের গোপন শাখে শাখে, পিছু ডাকে
ভরা নদীর ছায়ার তলে ছুটে চলে
খোজে কাকে, পিছু ডাকে ...
আমার প্রাণের ভিতর সে কে থেকে থেকে
বিদায় প্রাতের উতলাকে পিছু ডাকে ...
বাংলাদেশে এবার রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী পালিত হচ্ছে ২৫শে বৈশাখ। সেটাই তো হওয়ার কথা! বাংলা ১২৬৮ সনের ২৫শে বৈশাখেই তিনি জন্ম নিয়েছিলেন। মুশকিল হলো সেবার ইংরেজি তারিখ ছিল ৭ মে, ১৮৬১। তাতে সমস্যা কী? সমস্যা এটাই যে এবার দিনটা হচ্ছে ৮ মে। সে না হয় হলো, একদিনে কী-ই বা আসে-যায়? তা বলে ৯ মে হলেও আসবে-যাবে না? পশ্চিমবঙ্গের ক্যালেন্ডারে ২৫শে বৈশাখ হবে ৯ মে! তাহলে কী আমরা বাংলা সন না ধরে ইংরেজি সন-তারিখ অনুসরণ করব? সেটা করার আগে মনে করে
দেখুন-স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ 'হে নূতন দেখা দিক আর-বার' গানে বলছেন.........
"উদয়দিগন্তে শঙ্খ বাজে, মোর চিত্তমাঝে
চিরনূতনেরে দিল ডাক
পঁচিশে বৈশাখ"
রবীন্দ্রনাথ তাঁর শেষ জন্মদিনে এই গানটি রচনা করেন। তিনি যেন ঠিক বুঝতেই পেরেছিলেন আগামী দিনে তাঁর জীবনে কী আসতে চলেছে! আবার বাঁচার আশা! চিরনূতনেরে ডাক দিচ্ছেন! কতটা জীবনিশক্তি থাকলে তবেই এই ভাব গানের মাধ্যমে ব্যক্ত করা যায়!
এই মতে তাঁর জন্মোৎসব অবশ্যই বাংলা সন-তারিখ মেনে ২৫শে বৈশাখই পালিত হওয়া উচিৎ। অথচ দুই বাংলায় জাত্যাভিমানী ক্যারিকেচারে বাংলা তারিখ একদিন আগু-পিছু হয়েছে। এবার ঠেলাঠেলি লাঠালাঠি করুক 'আনন্দবাজার' আর 'কারওয়ানবাজার'। আগামীকাল ২৫শে বৈশাখ। তার একদিন আগে আমরা তাঁর শেষ জন্মদিনে লেখা গানটি শুনতে থাকি......
মন্তব্য করুন: