• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

সুকান্ত ভট্টাচার্যের ৭৬ তম প্রয়াণ দিবস

মাত্র ৬ বছর লিখেছেন সাধারণের কবি সুকান্ত

মনজুরুল হক

প্রকাশিত: ১২:৩৮, ১৩ মে ২০২৩

আপডেট: ১২:৫৬, ১৩ মে ২০২৩

ফন্ট সাইজ
মাত্র ৬ বছর লিখেছেন সাধারণের কবি সুকান্ত

সুকান্ত ভট্টাচার্য

সুকান্ত ভট্টাচার্য মোটের ওপর ২১ বছর বেঁছিলেন। তাই তাঁকে হরেদরে ‘কিশোর কবি'ও বলা হয়। আক্ষেপ করা হয়; তিনি আরও বেশি বাঁচলে আরও স্মরণযোগ্য কী কী অবদান রাখতেন তা নিয়ে। যদিও বিশ্বের অজস্র বড় মানুষ খুব অল্পদিন বেঁচেছিলেন। বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম সাহিত্যিক মানিক বন্দোপাধ্যায়ও মাত্র ৪৮ বছর বেঁচেছিলেন। মহামতি লেনিন, চারু মজুমদার এঁরা ৫৫ পার হতে পারেননি। ইংরেজি ভাষার অনেক কবি-সাহিত্যিক ৫০ পেরুনোর, এমনকি ৩০ বছরের আগেই মারা গেছেন। তার পরও তারা যা সৃষ্টি করে গেছেন তার মূল্য নিরুপণ ধৃষ্ঠতা। হয়ত আরও বেশি বাঁচলে নেতিবাচকও কিছু হতে পারত। তাই সুকান্তকে আমরা তাঁর কবিত্ব এবং সমাজবীক্ষণে তাঁর ভূমিকা দিয়েই বিচার করব।



আজ ১৩ই মে। ১৯৪৭ সালে বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার কবির মৃত্যু ঘটে। যদিও তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়া থানার উনশিয়া গ্রামে, কিন্তু সেই গ্রাম বা জেলায়, এমনকি বাংলাদেশের কোথাও তাকে নিয়ে স্মরণযোগ্য কিছু নেই। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে প্রাণদানকারী অনেক বিপ্লবীর জন্ম পূর্ববঙ্গে হলেও কেবলমাত্র রবীন্দ্রনাথ এবং কাজী নজরুল বাদে তাদের অবদানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে মর্যাদা দেওয়া হয় না। তাঁদেরকে সম্মানিত করা হয় না। কে জানে, হয়ত ওইসকল বিপ্লবী, স্বদেশি, কবি-সাহিত্যিকদের ‘অবিভক্ত ভারতীয় বা শুধুই ভারতীয়’ ভাবা হয় কী-না?     

যা হোক, সুকান্ত ১৯৪৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় ফেল করেন। হয়ত তাতেই আমরা এক বিস্ময়কর কবিপ্রতিভা পেয়েছিলাম। পাশ করে একাডেমিস্ট হয়ে গেলে কী হতো বলা যায় না। এ সময় ছাত্র আন্দোলন ও বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে তিনি আনুষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি টেনে দেন। তাঁর কাছে তখন ওইসব একাডেমিক পড়াশুনোর চেয়ে দেশের কাজ বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল। এরপর তিনি দেশের সেই চরম উথাল-পাথাল দিনে নিরলস বিপ্লবী দায়িত্ব পালন করে গেছেন। সংসার, শরীর এসব তাঁর ভাবনাতে ঠাঁই পায়নি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মম্বন্তর, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেন এবং একের পর এক ‘বিস্ফোরণ’ ঘটাতে থাকেন। ১৯৪৪ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। সেই বছরই ‘আকাল’ নামক একটি সংকলনগ্রন্থ তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। সুকান্ত কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা দৈনিক স্বাধীনতার (১৯৪৫) ‘কিশোর সভা’ বিভাগ সম্পাদনা করতেন। সুকান্তের সাহিত্যের মূল জায়গা ছিল কবিতা। সাধারণ মানুষের জীবনসংগ্রাম, যন্ত্রণা ও বিক্ষোভ তাঁর কবিতার প্রধান বিষয়বস্তু। তাঁর রচনায় গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাণীসহ শোষণহীন এক নতুন সমাজ গড়ার অঙ্গীকার উচ্চারিত হয়েছে তীব্রভাবে, যা একজন কমিউনিস্ট-এর হওয়া কর্তব্য। রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কবিতার বৈপ্লবিক ভাবধারাটি যাঁদের সৃষ্টিশীল রচনায় সমৃদ্ধ হয়েছে, সুকান্ত তাঁদের অন্যতম। তাঁর কবিতার ছন্দ, ভাষা, রচনাশৈলী এত স্বচ্ছন্দ, বলিষ্ঠ ও নিখুঁত যে, তাঁর বয়সের বিবেচনায় বিস্ময়কর ও অসাধারণ। অথচ জীবৎকালের মাত্র ছয়-সাত বছরই পেয়েছিলেন লেখালিখি করবার জন্য!

এবার গতানুগতিক কথাবার্তা: তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলো যথাক্রমে- ছাড়পত্র (১৯৪৭), পূর্বাভাস (১৯৫০), মিঠেকড়া (১৯৫১), অভিযান (১৯৫৩), ঘুম নেই (১৯৫৪), হরতাল (১৯৬২), গীতিগুচ্ছ (১৯৬৫)। পরবর্তীকালে উভয় বাংলা থেকে সুকান্ত সমগ্র নামে তাঁর রচনাবলি প্রকাশিত হয়। সুকান্ত ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পিসঙ্ঘের পক্ষে আকাল (১৯৪৪) নামে একটি কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা করেন। বাংলাদেশে মুক্তধারা থেকে প্রকাশিত তাঁর ‘সুকান্ত সমগ্র’র সম্পাদনা করেন রণেশ দাশগুপ্ত এবং ভূমিকা লেখেন বদরুদ্দীন উমর।

টানাপোড়েনের সংসার, নিজের প্রতি উন্নাসিক সুকান্ত পার্টি ও সংগঠনের কাজে মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে  প্রথমে ম্যালেরিয়া, পরে দুরারোগ্য যক্ষায়  আক্রান্ত হন। তিনি ১৯৪৭ সালের আজকের দিনে (১৩ মে) কলকাতার ১১৯ লাউডট স্ট্রিটের রেড এড কিওর হোমে মারা যান। 

 

মন্তব্য করুন: