সাতক্ষীরায় অনিমেষ নামের এক সাইকেল ম্যাকানিকের মরদেহ উদ্ধার

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলায় বাড়ির পাশে ঝুলন্ত অবস্থায় অনিমেষ সরকার নামে এক সাইকেল ম্যাকানিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে শ্রীউলা ইউনিয়নের লাঙ্গলদাড়িয়া গ্রাম থেকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করেন। এদিকে, তাকে হত্যার পর গাছের ডালের সাথে গলায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
নিহত অনিমেষ সরকার লাঙ্গলদাড়িয়া গ্রামের নিরঞ্জন সরকারের ছেলে। তিনি বাড়ির পাশে বাজারে সাইকেল ম্যাকানিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন বলে জানা গেছে।
তার মা শেফালী সরকার ও স্ত্রী সঞ্জিতা সরকার জানান, প্রতিবেশী মৃত ওমর মল্লিকের ছেলে অহিদ মল্লিক ও আব্দুল মালেক মল্লিক অনিমেষকে নানা ভাবে মানসিক নির্যাতন, মারধর ও হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। তারা বলেন, আমাদের পুকুরের পানি সেচে স্যালো মেশিনের সাহায্যে বাড়ির পিছনের ছোট পুকুরে দেওয়া হচ্ছিল। পুকুরের পাশে অহিদ ও মালেকদের মাছের ঘের আছে। বুধবার তারা পুকুরের পানি তাদের ঘেরে পড়ে মাছ চলে যাচ্ছে দাবি করে গালিগালাজ করার এক পর্যায়ে অনিমেষকে ঘুষি মেরে পুকুরে ফেলে দেয় এবং মোবাইল পানিতে ছুড়ে দেয়। এনিয়ে অনিমেষ স্থানীয় মাতব্বরদের কাছে অভিযোগ করলে আফছার ও আলমগীরসহ অন্যরা সেখানে যায় এবং কথাবার্তা শুনে ওই আব্দুল মালেককেই বিষয়টি নিষ্পত্তির দায়িত্ব দিয়ে তারা চলে যায়। এসব ঘটনা নিয়ে অনিমেষ ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে পড়েছিল।
স্ত্রী সঞ্জিতা আরও বলেন, এদিন তার স্বামী ভালভাবে খাওয়া দাওয়া করতে পারেনি। বিকাল পর্যন্ত বাড়িতে ছিল। নিরাপত্তার জন্য ঢাকায় কাজে চলে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সন্ধ্যার কিছু আগে দোকানে যায়। রাত ৯ টা পর্যন্ত দোকানে ছিল। গভীর রাত পর্যন্ত বাড়িতে না ফেরায় মোবাইলে ফোন দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। বিভিন্ন স্থানে ফোনে যোগাযোগ করে তার সন্ধান পাইনি। সকালে খালেক মোল্যার ছেলে বাবলুর বাড়ির পাশে তার বেড়ের মধ্যে নিমগাছে নাইলনের রশিতে গলায় ফাঁস আটকানো ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়।
পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে মরদেহ উদ্ধার করেন এবং এসময় বাবলুর একতলা বিল্ডিং এর ছাদে অনিমেষের ব্যবহৃত মোবাইল, জাম্পার, জুতা, মানিব্যাগ, গ্যাস লাইট, সিগারেট ও ছাদের পাশের গাছে ট্রাউজার পাওয়া যায়। নিহতের পা কাদায় ভরা ও গায়ে কাদামাটি লাগানো ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
বাবলু মোল্যা জানান, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা। কিভাবে ছাদের উপর অনিমেষের জিনিসপত্র আসলো তা ভেবে পাচ্ছি না। সকালে লোকজনের চেচামেতিতে জেগে বিষয়টি জানতে পারি।
অভিযুক্ত অহিদ মল্লিকের স্ত্রী লাভলী জানান, পুকুরের মধ্যে আমাদের অর্ধেক জায়গা থাকলেও আমরা ব্যবহার করি না। ওরা আমাদের না জানিয়ে পুকুরে পানি আমাদের ঘেরে দেওয়ায় মাছ লাফিয়ে চলে যাচ্ছিল। এনিয়ে কথা বলাবলির সময় মহিলারা গালিগালাজ করে, এক পর্যায়ে অনিমেষ চাকু দেখিয়ে এগিয়ে এলে তাকে ধাক্কা দিলে সে পুকুরে পড়ে যায়। এসময় তার ফোন পড়ে গেলে উঠিয়ে তাকে দেয়া হয়।
এদিকে, এঘটনায় সহকারী পুলিশ সুপার (তালা সার্কেল) মো. হাসানুজ্জামান ও আশাশুনি থানার ওসি নোমান হোসেন ঘটনাস্থান পরিদর্শন করেছেন।
ঘটনাস্থান পরিদর্শন করে আশাশুনি থানার ওসি নোমান হোসেন জানান, ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা সেটি এখনও বলা যাবেনা। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
বিভি/এআই
মন্তব্য করুন: