• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

গঙ্গাধরের গর্জন, কুড়িগ্রামে নদীভাঙনে সর্বস্বান্ত শত পরিবার

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ১৫:৩৮, ২০ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ১৬:৫৬, ২০ অক্টোবর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
গঙ্গাধরের গর্জন, কুড়িগ্রামে নদীভাঙনে সর্বস্বান্ত শত পরিবার

অসময়ে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা ইউনিয়নের ধনিরামপুর, মধ্য ধনিরামপুরে গঙ্গাধর নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে শতাধিক বসতভিটা, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন জানান, গত ৭ দিনে ৩০টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন কবলিতরা আশ্রয়ের খোঁজে প্রতিদিনই তার বাড়িতে ভিড় করছে। কোথায় তাদেরকে আশ্রয় দিবেন, এনিয়ে তিনি ভীষণ চিন্তিত। এছাড়াও এ মৌসুমে শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে ৬৭ কিলোমিটার দূরে নাগেশ্বরী উপজেলার গঙ্গাধর নদী তীরবর্তী কচাকাটা ইউনিয়নের মধ্য ধরিরামপুর গ্রাম। নদী ভাঙনের কারণে জয়বরের তিনটি, ছালামের ৪টি, বেলালের ৩টি, কালামের ৫টি, আলামিনের ৩টি ঘর সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু, পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় যাবেন, এখনও ঠিক করেননি। তবে, তারা নদী ভাঙনে ৪ থেকে ৫ বার ঠিকানা বদল করেছেন।

তবে, নদীর ভাঙন রোধ ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ভাঙনকবলিত এলাকাবাসী। দুপুরে কচাকাটা ইউনিয়নের মধ্য ধনীরামপুর এলাকায় গঙ্গাধর নদীর তীরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তারা জানান, এ নদীর পূর্বতীরের ধনিরামপুর, মধ্য ধনিরামপুরসহ তিনটি ওয়ার্ডের দুই কিলোমিটারব্যাপী ভাঙনের মুখে পড়ে। ইতোমধ্যে শতাধিক ঘরবাড়ি, হাজার হাজার বিঘা আবাদী জমি বিলীন হয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে আছে পল্লী বিদ্যুতের সাবমেরিন ক্যাবল পয়েন্ট, বসতভিটাসহ সদ্যনির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন কচাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন মন্ডল, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুর মোহাম্মদ আল-আমীন, সাবেক চেয়ারম্যান হাসেম আলী সরকার, কচাকাটা থানা চর উন্নয়ন কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাকসহ অনেকে। দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানান বক্তারা।

এদিকে, কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, কুড়িগ্রামের ১৬টি নদনদীর অধিকাংশের উৎপত্তিস্থল ভারতে হওয়ায় তাদের মর্জির ওপর পানির গতিপ্রবাহ ওঠানামা করে।

কুড়িগ্রামে ১৬টি নদ-নদীর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এই ভাঙন ১৯৫৪ সাল থেকে চলছে। নদীগুলোর উৎস স্থল উজানে ভারতে হওয়ায় সবসময় বিশেষ করে বন্যার সময় পানির সাথে পলি এসে নদীর তলদেশ উঁচু হচ্ছে এবং অসংখ্য ডুবো চরের সৃষ্টি হচ্ছে। এই ডুবো চরে উজান থেকে পানি এসে আঘাত পেয়ে নদীর তীরগুলো ভেঙে যাচ্ছে। ফলে, মানুষ নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছে।

অন্যদিকে, সরকার ভাঙন প্রতিরোধে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও নদীর ডুবো চরগুলো অপসারণ করে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ দিকে নজর না দেওয়ায় ভাঙন চলছে। গত ১০ বছরে অন্তত এক লাখ মানুষ নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। সেই সাথে সামাজিক বন্ধন নষ্ট হচ্ছে। এসব নদীভাঙন কবলিত মানুষদেরকে এক শতাংশ জায়গাও কিনে বাড়ি ঘর করে দেওয়া হয়নি। তাছাড়া নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর হিসাবও সরকারের দপ্তরে নেই। নদী শাসন ও চরের জীবনমান উন্নয়নে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতো  চর বিষয়ক মন্ত্রণালয় দ্রুততম সময়ে গঠন করে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করেন অনেকেই।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, ৩৩টি পয়েন্টের নদী ভাঙন চলছিলো। তবে, আকস্মিক পানি বাড়ার কারণে ওই পয়েন্টগুলোর ভাঙনের পরিধি বেড়েছে। তবে, আড়াইশ’ কেজি বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করা হচ্ছে।

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2