মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ শুরু, সার নিয়ে কৃষকের কপালে ভাঁজ
প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হলেও এ বছর কয়েক দফায় বৃষ্টিপাতের কারণে কিছুটা দেরি হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে জমির খাজনা, পেঁয়াজের বীজ, সার-কীটনাশনসহ প্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির শঙ্কা কৃষকের।
তবে, অনুমোদিত ডিলারদের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী ভর্তুকির সার না পাওয়ায় অতিরিক্ত দামে বাইরে থেকে সংগ্রহ করে কৃষকের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে। কৃষকরা যেন চাহিদা অনুযায়ী ন্যায্যদামে সার পান, সেদিকে নজরদারি করা হচ্ছে বলে দায়সারা উত্তর দেন কৃষি কর্মকর্তা।
রাজবাড়ী জেলার পাশ দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা ও গড়াই নদীর চর ও উঁচু জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ করতে ব্যস্ত কৃষক। কেউ মুড়িকাটা পেঁয়াজের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন, কেউ রোপণ করছেন, কেউ সেচ দিচ্ছেন। যারা আগেভাগে আবাদ করেছিলেন, তারা চারা গাছের যত্ন নিচ্ছেন। কেউবা চারায় কীটনাশক দেওয়ার কাজ সেরে নিচ্ছেন।
কালুখালী উপজেলার হরিণবাড়িয়া চরের পেঁয়াজচাষি আমিনুল ইসলাম বলেন, গত বছরের থেকে এ বছর গুটি পেঁয়াজের দাম কিছুটা কম। তবে, সার-কীটনাশকের দাম বস্তা প্রতি বেড়েছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। তারপরও ডিলার ঠিক মতো সার দেয় না।
চাষি হাসান মোল্লা বলেন, গত বছর তো পেঁয়াজে লোকসান গেছে। বিঘায় খরচ পড়েছিল প্রায় লাখ টাকা। এবার গুটি পেঁয়াজের দাম কম। তবে, সার পাওয়া যায় না সময় মতো। তারপরও দাম বাড়তি। এবারও উৎপাদন খরচ আগের মতোই হবে। পেঁয়াজের দাম ৩ হাজারের কম হলে লোকসান যাবে।
চাষি আব্দুর রশিদ শেখ বলেন, সার, সেচ, চাষ, শ্রমিক খরচ সব আগের মতোই আছে। শুধু এ বছর গুটি পেঁয়াজের দামটা কম। গত বছর ১০-১৫ হাজার টাকা মণ কিনতে হয়েছিলো। এ বছর তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা মণ। তবে, বাজারে সার কম পাওয়া যাচ্ছে বলে তার অভিযোগ।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের তৃতীয় অবস্থানে রাজবাড়ী জেলা। সারা দেশের ১৪ শতাংশ পেঁয়াজ এই জেলায় হয়ে থাকে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ ও অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ শুরু করেন চাষিরা। মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণের ৯০ দিনের মধ্যে ফলন তোলা যায়। ফলে লাভের আশায় চাষিরা এ জাতের পেঁয়াজের আগাম চাষ করেন। কিন্তু, এবার সেপ্টেম্বর মাসের শেষ ও অক্টোবরের শুরুতে কয়েক দফায় বৃষ্টির কারণে কিছুটা দেরিতে পেঁয়াজ আবাদ শুরু হয়েছে।
সারের দাম নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারের দামের ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি। কোথাও কোথাও দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে, তবে আমরা কৃষকদের বলছি, সরকারি দামে সার নিতে হবে। সেই সঙ্গে ডিলারদেরও কড়া নজরে রেখেছি যেন কৃষকরা সঠিক দামে সব উপকরণ পেয়ে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষাবাদ করতে পারে।
শহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর জেলায় ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হবে, যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার টন।
বিভি/পিএইচ




মন্তব্য করুন: