• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

পরকীয়ার প্রতিবাদে ভাই খুন, ৩১ বছর পর আসামি গ্রেফতার 

প্রকাশিত: ১৪:২৮, ২০ জুন ২০২২

আপডেট: ২০:২৪, ২০ জুন ২০২২

ফন্ট সাইজ
পরকীয়ার প্রতিবাদে ভাই খুন, ৩১ বছর পর আসামি গ্রেফতার 

বোনের সঙ্গে বন্ধু পরকীয়া করছে। এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর প্রতিবাদ করতে গিয়ে বন্ধুর হাতে খুন হয় পরকীয়ায় আসক্ত নারীর ভাই। এই ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামি কাওছার (৬৩) ৩১ বছর পর ধরা পড়লো র‌্যাবের জালে।

র‌্যাব জানিয়েছে, এতো বছর বিভিন্ন এলাকায় ছদ্মবেশে আত্মগোপনে ছিলো এই পরকীয়ায় আসক্ত খুনি কাওছার। রবিবার রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল।

সোমবার (২০ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মো. মোজাম্মেল হক। 

তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল মানিকগঞ্জের চাঞ্চল্যকর আজাহার (৪০) হত্যা মামলার দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে পলাতক আসামিকে গ্রেফতার করার জন্য ১৯ জুন রাতে রাজধানীর গুলশান থানাধীন বারিধারা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. কাওছারকে (৬৩) গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামির বরাত দিয়ে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামি মো. কাওছার (৬৩) ও ভিকটিম আজাহার (৪০) মানিকগঞ্জ জেলার চর হিজুলী গ্রামে বসবাস করতো এবং একই এলাকায় চাষাবাদ করতো এবং একসাথে ইরি ধানের ক্ষেতে পানি সেচের ব্যবসা করতো। সেই সুবাদে তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিলো। এক পর্যায়ে ভিকটিমের বিবাহিত বোন অবলার সাথে আসামি কাওছারের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে ঘটনার দিন দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে অবস্থানরত অবলা, অবলার তৎকালীন স্বামী ফালান, আত্মীয় ওমর, রুহুল আমিন, আসমান এবং রফিজসহ আরও কয়েকজন আসামি মো. কাওছারের পক্ষ নিয়ে ভিকটিম আজাহারকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করে। 

গ্রেফতারকৃত আসামি কাওছার ভিকটিমের মাথায় লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করলে ভিকটিমের মাথা ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে এবং ভিকটিম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় লোকজন ভিকটিমকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিম আজাহারকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃতের আপন ছোট ভাই মো. আলী হোসেন (বর্তমানে মৃত) বাদী হয়ে আসামি কাওছারসহ সর্বমোট ৭ জনকে আসামি করে একই দিন মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলা হওয়ার পর গ্রেফতারকৃত আসামি মো. কাওছারসহ এজাহারনামীয় বেশ কয়েকজন আসামি থানা পুলিশ কর্তৃক ধৃত হয়। গ্রেফতারকৃত আসামি কাওছার ২ মাস হাজত খেটে ১৯৯১ সালে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। অত্র মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা এজাহারনামীয় আসামি মো. কাওছার, ওমর, রুহুল আমিন, আসমান এবং রফিজকে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে একই বছর ডিসেম্বরে চার্জশীট দাখিল করেন এবং এজাহার নামীয় বাকি ২ আসামি অবলা ও তার তৎকালীন স্বামী ফালান উভয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশীট থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। পরবর্তী চার্জশিটের ভিত্তিতে বিজ্ঞ আদালত উক্ত মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ভিকটিম আজাহার হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে ১৯৯২ সালের শেষের দিকে মানিকগঞ্জ জেলার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ চার্জশীটে অভিযুক্ত আসামি মো. কাওছারকে মৃত্যুদণ্ড, অন্য আসামি ওমর, রুহুল আমিন, আসমান ও রফিজ প্রত্যেককে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা পাঁচ বছর সাজাভোগের পর বিজ্ঞ উচ্চ আদালতে আপিল করলে বর্তমানে আদালতের নির্দেশে জামিনে আছে। পলাতক আসামি মো. কাওছার মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দুই মাস হাজতে থেকে জামিনে বের হওয়ার পর থেকেই গত ৩১ বছর পলাতক ছিলো।

আসামির জীবন বৃত্তান্তঃ    

আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামি ১৯৬০ সালে মানিকগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন চর হিজুলী এলাকায় জন্মগ্রহণ করে। সে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। ব্যক্তিগত জীবনে আসামি ২টি বিয়ে করেছে। প্রথম স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের ঘরে তার একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে যিনি বর্তমানে বিবাহিত এবং রাজধানীর রামপুরায় স্বামী-সন্তান নিয়ে বসবাস করে। আসামি হত্যা মামলায় জেলে গেলে প্রথম স্ত্রী মনোয়ারা তাকে তালাক দিয়ে আবার বিয়ে করে চলে যায়। আসামি জেল থেকে জামিনে বের হয়ে ভিকটিম আজাহারের বোন ৫ সন্তানের জননী অবলাকে পালিয়ে নিয়ে যায় এবং অবলা তার স্বামীকে ডিভোর্স দেয় এবং তারা উভয়ই বিয়ে করে অদ্যবধি তারা একসাথে বসবাস করছিলো তবে তাদের কোনো সন্তানাদি নেই। 

প্রকাশ থাকে যে, অবলার পূর্ববর্তী স্বামী ফালান অবলা পালিয়ে আসার পরপরই রোগ-শোকে ভুগে মৃত্যুবরণ করে। ১৯৯১ সালের পর থেকে আসামি আর কোনোদিন মানিকগঞ্জে যায়নি। 

আত্মগোপনে থাকাকালীন আসামির জীবনযাপনঃ

আসামির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়ায় এবং ওই মামলায় সে মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে লোক চক্ষুর আড়ালে আত্মগোপন করেন। পরিচিত লোকজন থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য ১৯৯১ সালের শেষের দিকে ঢাকায় চলে আসে। গত ৩১ বছর ধরে আসামি মো. কাওছার নাম পরিবর্তন করে ইমরান মাহামুদ নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রথমে গাজীপুর, কালিয়াকৈর, পুবাইল, উত্তরা ও টঙ্গীসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলো। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আসামি নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য ক্রমাগতভাবে সে পেশা পরিবর্তন করে। প্রথমদিকে সে রাজমিস্ত্রী, ইলেক্ট্রিক ও স্যানিটারী মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করে। পরে সে ড্রাইভিং শিখে সিএনজি চালায় এবং বর্তমানে সে প্রাইভেটকারের ড্রাইভার হিসেবে আত্মগোপনে থেকে গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলো। 

আসামি পালিয়ে ঢাকায় চলে আসার পর নিজেকে আড়াল করার জন্য মো. ইমরান মাহামুদ নাম ধারণ করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরী করে। জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতা- শাহিন মাহামুদ, সাং- নান্দুয়াইন, থানা- গাজীপুর, জেলা- গাজীপুর’কে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করে।  গ্রেফতারকৃত আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

আরও পড়ুন:

বিভি/এসএইচ/এএন

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2