• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

নরসিংদীতে জোড়া খুন: যে কারণে ঢাকায় থেকেও খোকন আসামি

মো: মাহজারুল পারভেজ,নরসিংদী

প্রকাশিত: ২২:০৭, ২৮ মে ২০২৩

ফন্ট সাইজ
নরসিংদীতে জোড়া খুন: যে কারণে ঢাকায় থেকেও খোকন আসামি

নরসিংদীর আলোচিত জোড়া খুন মামলার এজহারভুক্ত ২০ নং আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার সকালে মাধবদী থানা এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ আটক করে তাকে। গ্রেফতারকৃত সজিব (৩৫) নরসিংদী পৌর এলাকার জসিম উদ্দিন ভুইয়ার ছেলে। একই সঙ্গে এই ঘটনায় আসামি হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন।

এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের পর আজ পর্যন্ত ৪ আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আটক জেলা যুবদলের সভাপতি মোহসিন হোসাইন বিদ্যুতসহ তিন জনকে ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে জেল গেইটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এ হত্যাকাণ্ডেরর বিচার দাবী করে সকালে মানববন্ধন করেছে নিহত সাদেকের পরিবার ও তার প্রতিবেশীরা। নরসিংদী প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কালে নিহত আশরাফুলের পরিবারের কোন সদস্যকে দেখা যায়নি। নিহত সাদেকের ভাই, মামলার বাদী আলতাফ হোসেন মেম্বার বলেন, তার ভাইকে খায়রুল কবীর খুন করেছে। অথচ এই খায়রুল কবীর খোকনের জন্য সাদেক এহেন কোন রিস্ক নাই যা করেনি। অথচ আজ তার বাহিনীর হাতে আমার ভাইকে জীবন দিতে হলো।

যে কারণে ঢাকায় থেকেও সস্ত্রীক জোড়া খুনের আসামী হলেন খোকন

জেলা বিএনপির সভাপতি থাকা কালীন সময়ে খায়রুল কবীর খোকন বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব পদ লাভ করেন। এর পর দলের সিনিয়র নেতাদের ধারণা ছিল তিনি জেলা বিএনপির পদটি ছেড়ে দিবেন। কিন্তু তা না করে দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্ষীয়ান রাজনীতিক তোফাজ্জল হোসেন মাষ্টার, সিনিয়র সহ সভাপতি সুলতান উদ্দিন মোল্লা, ও সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলকে রীতিমত মাইনাস করে তিনি জেলা বিএনপির আহবায়ক ও মনজুর এলাহীকে সদস্য সচিব করে কমিটি নিয়ে আসেন। 

এরপর রাগে অভিমানে তোফাজ্জল হোসেন মাষ্টার দেশ ছেড়ে আমেরিকায় চলে যান। সুলতান উদ্দিন মোল্লা মিছিল মিটিং এ আসা বন্ধ করে দেন। সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলও মিছিলে না আসার মতই। এতে অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েন খোকন। এই সুযোগে সদস্য সচিব মঞ্জুর এলাহী রাজনীতিতে অনেকটা চাঙ্গা হয়ে উঠেন।

গেলো বছর শিবপুর থেকে নির্বাচন করলেও নরসিংদী সদর থেকে নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন এলাহী। এরইমধ্যে জেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা হয়। এলাহী সমর্থিত মাইন উদ্দিন ছিলেন সভাপতি প্রার্থী। তাকে দেয়া হয় সিনিয়র সহ সভাপতি। এরপর থেকেই এই মাইন উদ্দিনকে দিয়ে খায়রুল কবীর খোকনের বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটায়। এঘটনার পর দলীয় নেতাকর্মীরা মনজুর এলাহীকে দোষারপ করলেও তিনি তা অস্বীকার করেন। তারপরও ৫ বার খোকনের চিনিশপুরের বাড়িতে ও আদালত প্রাঙ্গনে খোকনের সমর্থকদের উপর বর্বর হামলা হয়।

শুধু তাই নয়, জানাজার নামাজে যাওয়ার পথে ইটখোলায় খোকেনের গাড়ী বহরেও হামলা চালিয়ে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। খোকন তার লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে ফাঁকা গুলি করে প্রাণে বেঁচে যান সেদিন। তাদের দাবি একটাই খোকনকে নরসিংদীতে দাঁড়াতে দিবে না। নিহত সাদেক মারা যাওয়ার দিন তার ফেসবুকেও এমন ইঙ্গিত দিয়ে যান।

কিন্তু অদৃশ্য কারণে এতে সবের পরও পুলিশ নীরব থেকেছে। বিএনপির কোন নেতাকর্মী যখন ঘর থেকে বের হতে পারে না, ঠিক তখনও মাইন উদ্দিন জেলা শহরে মিছিল নিয়ে কি করে খোকনের বাড়িতে হামলা চালায় তা নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। আর এই মিছিল মিটিং গোলাগোলির ঘটনা ঘটিয়ে মানুষ খুনের অপরাধে ডাকসুর সাবেক জিএসকে জোড়া খুনের মামলার আসামি হতে হলো।

দলীয় নেতাকর্মীদের মন্তব্য
বিএনপির সিনিয়র নেতারা কেউ মন প্রাণ খুলে কথা বলতে চান না। জেলা বিএনপির একাধিক নেতার সাথে কথা হলেও সবাই অজানা এক শংকার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, স্থানীয় প্রশাসন জেলায় আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলেও মনজুর এলাহীকে সঙ্গে নিয়ে বিরোধী দল দমনে শতভাগ সফল হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এতে করে দুর্দিনে বিএনপির অনেক ক্ষতি হয়ে গেলো বলে অভিমত তাদের। এ ব্যাপারে মন্জুর এলাহীর বক্তব্য জানার জন্য তাকে ফোন করলে তার ব্যবহৃত ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ দিকে নিহত সাদেকের বড় ভাই গুলজার বলেন, আর দুই দিন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবো । বিচার না পেলে আসামিদের যেখানে দেখবো সেখানেই প্রতিহত করা হবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) বিকালে শহরের অস্থায়ী কার্যালয়ের কাছে অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে জেলা ছাত্রদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান সাদেক (৩২) ও আশরাফুল ইসলাম (২০) গুলিবিদ্ধ হন। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাদেকুর রহমান সাদেক (৩২) মারা যান। শুক্রবার সকালে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আশরাফুল ইসলাম (২০)।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: