• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

কাভার্ডভ্যান থেকে পোশাক চুরি ঠেকাতে বিজিএমইএ’র পাঁচ প্রস্তাব

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ১৫:৪৩, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
কাভার্ডভ্যান থেকে পোশাক চুরি ঠেকাতে বিজিএমইএ’র পাঁচ প্রস্তাব

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পোশাক শিল্পের শত শত কোটি টাকার রপ্তানিযোগ্য পণ্য কাভার্ডভ্যান থেকে চুরি ঠেকাতে চালক ও হেলপারদের ডেটাবেজ তৈরিসহ পাঁচটি প্রস্তাবনা জানিয়েছে বিজিএমইএ।

মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান উত্তরার বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাব দেন।

ফারুক হাসান বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পরিবহনকালে পোশাক শিল্পের শত শত কোটি টাকার রপ্তানিযোগ্য পণ্য কাভার্ডভ্যান থেকে চুরি হয়ে যাওয়া। বিষয়টি নিয়ে আমরা দফায় দফায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন আইন প্রয়াগকারী সংস্থার প্রধান এবং ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ওনার্স এসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করেছি, যা জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে।’ 

গত ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পোশাক শিল্পের পণ্য চুরির একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মূল হোতা শাহেদসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এজন্য বিজিএমইএ র‌্যাবসহ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং আশা করছি, তারা অনতিবিলম্বে এই চক্রের অন্যান্য অপরাধীদেরও গ্রেফতার করবেন। 

পোশাক শিল্প আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কতখানি উজ্জ্বল করেছে। বিশ্বব্যাপী নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের রোল মডেলের তকমা পেয়েছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প। বিগত ১০ বছরে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, শ্রমিকের কল্যাণ এবং পরিবেশবান্ধব শিল্প নির্মাণে যে পরিশ্রম আমরা করেছি, বিনিয়োগ করেছি এবং সফলতা পেয়েছি, তা সমগ্র বিশ্বের প্রশংসা অর্জন করেছে। 

আমাদের পোশাক কারখানাগুলো কেবল নিরাপদই নয়, বরং আরও গতিশীল, আধুনিক, জ্বালানি-সাশ্রয়ী এবং পরিবেশ বান্ধব হয়ে উঠেছে। ইউএসজিবিসি কর্তৃক প্রত্যয়িত সর্বাধিক সংখ্যক সবুজ কারখানার আবাসস্থল, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ এবং সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব পোশাক প্রস্তুতকারক। সারাদেশে এখন ১৮৭টি লিড গ্রিন কারখানা রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে ৬৩টি প্লাটিনাম রেটেড এবং ১১০টি গোল্ড রেটেড। বিশ্বের শীর্ষ ১২টি গ্রিন কারখানার মধ্যে ১০টি বাংলাদেশে অবস্থিত। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, ২০২২ সালে আমাদের ৩০টি কারখানা গ্রিন হয়েছে। কোন একক বছরে এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যক গ্রিন কারখানার সংখ্যা। 

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক ক্রেতারা পোশাক সোর্সিং করার জন্য বাংলাদেশেকে তাদের পছন্দের শীর্ষে রেখেছেন। পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশ আজ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ডেনিমের ক্ষেত্রে চীনকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এখন প্রথম অবস্থানে। সরকারের নীতিগত সহযোগিতায় ইউরোপের বাজারে আমরা অতি শিগগিরই এক নম্বর অবস্থান নিতে সমর্থ হবো, সে বিষয়ে আমরা আশাবাদী।

তিনি আরও বলেন, গত নভেম্বরে আমরা ‘মেইড ইন বাংলাদেশ উইক’ ইভেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে দেশ ও শিল্পকে নতুন করে ব্র্যান্ডিং করেছি। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প যখন বিশ্ব বাজারে এ রকম একটি গৌরবজনক অবস্থান অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে এবং আগামীতে আরও গৌরবময় স্থানে আসীন হওয়ার জন্য গভীর প্রত্যয় নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে, তখন স্থানীয় পর্যায়ে কিছু নৈরাজ্যকর ঘটনা শিল্পের তথা দেশের ভাবমূর্তি মাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করছে। পোশাক শিল্পের সফলতাগুলো ম্লান হয়ে যায়, যখন ক্রেতা রপ্তানিকৃত পণ্য হাতে নেয়ার পর দেখে যে কার্টনে রপ্তানি মালামালের পরিবর্তে অন্য  জিনিস রয়েছে এবং তারা তা আমাদেরকে জানায়।

প্রায় দেড় যুগ ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২ হাজারেরও বেশি কাভার্ড ভ্যান থেকে শত শত কোটি টাকার রপ্তানিযোগ্য তৈরি পোশাক পণ্য চুরি করেছে একটি চক্র। বিগত ২০২২ সালেই প্রায় ২০-২২টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ প্রসঙ্গে আমি অতিসম্প্রতি একটি ঘটনার প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

গত জানুয়ারি মাসের শুরুতে ব্রাজিল থেকে ক্রেতা ভিডিও এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারককে জানায় যে প্রায় বেশিরভাগ কার্টনের ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ পোশাক তারা বুঝে পায়নি। এমনকি কিছু কার্টন খালি ছিলো। ওই শিপমেন্টে ২৬ হাজারের বেশি পোশাক ছিলো। প্রায় ৮ হাজারের মতো পোশাক চুরি হয়। এ ঘটনা জানানো হলে র‌্যাব এই চক্রের হোতাসহ ৪জনকে গ্রেফতার এবং যে কাভার্ড ভ্যানে করে তারা ব্রাজিলের পণ্য চুরি করেছিলো, সেই কাভার্ড ভ্যান জব্দ এবং সঙ্গে চালানও সংগ্রহ করেছে। চক্রের প্রধান হোতা, গডফাদার শাহেদের বিরুদ্ধে ১৭/১৮টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দু’টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাও আছে। ধরা পড়ার পর শাহেদ জানিয়েছে যে, ক্রেতাদের স্যাম্পল দেখে তারা সেই স্যাম্পলের বাজার দর যাচাই করে। যদি পণ্যের মূল্যমান ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকার মধ্যে হয়, তবেই তারা এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে।

পোশাক মালিকদের সংগঠনের সভাপতি বলেন, অবাক হয়ে যাই, যখন দেখি যে, শাহেদের মতো একজন চোর কোটি কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির সম্পত্তির মালিক হয়েছে এবং বছরের পর বছর বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে। প্রায় বিরামহীনভাবে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে শাহেদ এই অপরাধ করতে পেরেছে। দুই বছর আগে বন্দর নগরীতে দায়ের করা ৬টি মামলায় আট মাস কারাগারে ছিল সে। কিন্তু প্রতিবারই জামিন পাওয়ার পর সে পুরানো পেশায় ফিরে এসেছে। এই ধরনের অপরাধীরা কিভাবে এত সহজে জামিন পায় সেটি আমাদের প্রশ্ন। এতে করে তারা পরবর্তীতে আরও গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়তে  দ্বিধা করে না। শুধু শাহেদ নয়, গার্মেন্টস পণ্য চুরির জগতে আরও মাস্টারমাইন্ড, আরও চক্র রয়েছে, যারা একই কাজ করছে ধরা পড়লেও প্রায় কোন শাস্তি ভোগ না করে আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসছে। এই অপরাধীদের কারণে আমাদের পোশাক শিল্প বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। 

এই চক্রগুলো অত্যন্ত সংঘবদ্ধ। তারা কিভাবে চুরি কার্যক্রম পরিচালনা করে, তার উপর আপনাদেরকে কিছু ধারনা দিচ্ছি। চক্রগুলো পরিকল্পিতভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পোশাক শিল্পের আমদানি- রপ্তানির মালামাল কাভার্ড ভ্যানের ড্রাইভারের যোগসাজশে চুরি করে আসছে। পরিবহন কোম্পানিগুলো যখন রপ্তানি মালামাল পরিবহন করার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষকে কাভার্ড ভ্যান সরবরাহ করে, তখন নিজেদের মালিকানায় কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে লাইন থেকে ভাড়া করেও কিছু কাভার্ড ভ্যান সরবরাহ করে। অধিকাংশ চুরির ঘটনায় দেখা যায় লাইন থেকে ভাড়া করা গাড়ীর ড্রাইভারের যোগসাজশে এ ধরনের চুরির কার্যক্রম সংঘটিত হয়। পরবর্তীতে কাভার্ড ভ্যান পথিমধ্যে ওয়্যারহাউজ, ইটের ভাটা, গাড়ীর গ্যারেজে প্রবেশ করে সেখানে সুকৌশলে কাভার্ড ভ্যানের পিছনের লক ঠিক রেখে কব্জা খুলে প্রত্যেক কার্টন থেকে অধিকাংশ মালামাল সরিয়ে রাখে। তারপর সেখানে সমপরিমান ঝুট/মাটি দিয়েকার্টনের ওজন ঠিক রেখে চট্টগ্রাম কনটেইনার ডিপো’তে প্রেরন করে। ১/২ মাসপর ক্রেতার হাতে কার্টন পৌঁছানোর পর আমরা জানতে পারি পোশাকের পরিবর্তে ঝুট/মাটি ইত্যাদি প্রদান করা হয়েছে। এতে করে আমাদের ক্রেতা- বিক্রেতার আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে, দেশ মূল্যবান বৈদেশিক মূদ্রা হারাচ্ছে। আর আমরা মূল্যবান ক্রেতা হারাচ্ছি, যা কাম্য নয়।

মহাসড়কে পোশাক শিল্পের পণ্য চুরি রপ্তানিকারকদের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। বিজিএমইএ পোশাক শিল্পের চুরি রোধ করার জন্য বছরের পর বছর ধরে মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য দাবী জানিয়ে আসছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাব, ডিবিসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা সংস্থা একাধিক চক্রকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু চুরির মামলা হওয়াতে আইনের দুর্বলতার কারণে গ্রেফতারকৃত চোর চক্র ১৫ দিন/১ মাসের মধ্যে জামিন নিয়ে বের হয়ে আসে এবং পুনরায় একই কাজ করতে থাকে।

পোশাক শিল্পের যেসব অসৎ কর্মচারী এসব অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে এবং বায়িং হাউজ, শিপিং লাইন ও সিএন্ডএফ এর যেসব অসাধু কর্মকর্তা/কর্মচারী এসব কাজে জড়িত এবং পরিবহন কোম্পানিগুলোর ড্রাইভারসহ যে কর্মচারীরা চোর চক্রগুলোর সঙ্গে যোগসাজশ করে পোশাক শিল্পের রপ্তানি পণ্য লোপাট করছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান প্রদানের আহ্বান জানাই। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে সকল সংস্থার প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। 

উক্ত কমিটি বহুবার আলোচনা করে এ ধরনের চুরি বন্ধ করার লক্ষ্যে আইন সংশোধনসহ কতিপয় প্রস্তাবনা সরকারের কাছে পেশ করেছে যা এখনো সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে।

বিজিএমইএ’র পাঁচ প্রস্তাবগুলো হলোঃ

১) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের চলমান কাজ দ্রুততম সময়- আগামী মার্চ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা।

২) এ ধরনের কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক শাস্তি নিশ্চিত করা। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা।

৩)কতিপয় নাম সর্বস্ব কোম্পানি এসব চুরির মালামাল ক্রয় করে স্টকলট হিসেবে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। স্টকলট রপ্তানির ক্ষেত্রে মালের উৎস নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিজিএমইএ/বিকেএমইএ থেকে সনদপত্র গ্রহনের মাধ্যমে রপ্তানির অনুমোদন দেয়া যেতে পারে। 

৪) এদেরকে ধরতে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দাদেরও কাজে লাগাতে হবে।

৫) কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সী মালিক সমিতি, কাভার্ড ভ্যান চালক এবং হেলপারদের ডাটাবেইজ প্রস্তত করে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে শেয়ার করার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

আমাদের রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশ আসে পোশাকখাত থেকে। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পরিবহনকালে পোশাক শিল্পের পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধীদের অবশ্যই কঠোরতম শাস্তির মুখোমুখী হতে হবে। কারণ রপ্তানিমুখী পোশাক চুরির ঘটনা জাতীয় অর্থনীতিতে চুরির অন্যান্য ঘটনার তুলনায় অনেক বেশি প্রভাব ফেলে এবং যদি এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকে, তাহলে বিদেশি ক্রেতারা আমাদের দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, যা অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক নয়।

কোভিড মহামারি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর মধ্যেই পোশাক শিল্প আবারও নতুন করে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যার প্রভাব পড়েছে আমাদের পোশাক শিল্পে। আইএমএফের পূর্বাভাষ অনুযায়ী বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালে ৩.২শতাংশ থেকে ২০২৩ সালে ২.৭শতাংশ এ হ্রাস পাবে। পাশাপাশি, বিশ্ব বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালে ৪.৩শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৩ সালে ২.৫শতাংশ এ দাঁড়াবে। ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানিসহ প্রধান বাজারগুলোতে প্রবৃদ্ধি যে হ্রাস পাচ্ছে, তা দৃশ্যমান। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ সারা বিশ্বেই দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি। উন্নত দেশগুলোও কৃচ্ছ্রসাধন করছে। সেসব দেশের মানুষও কমিয়ে দিয়েছে কেনাকাটা। তাই, পোশাকের অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। আমরা দেখছি যে আমদানিকরা একসঙ্গে বড় অর্ডার না দিয়ে ছোট স্লটে অর্ডার দিচ্ছে। ক্রেতারা সহসা অর্ডার বাতিল করছেন, আবার অনেক ক্রেতা ডেফার্ড পেমেন্ট এর দিকে ঝুঁকেছেন। আমাদের জানামতে, এ মুহুর্তে পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করে কারখানা চালানোর মতো কোন অর্ডার কোন কারখানারই কাছে নেই। 

ফারুক হাসান আরও বলেন, গত দেড় বছরে সুতার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৬২শতাংশ, কন্টেইনার ভাড়া বেড়েছে ৩৫০শতাংশ-৪৫০শতাংশ, ডাইস ও ক্যামিকেলের খরচ বৃদ্ধি ৬০শতাংশ, গত বছরের শুরুতে মজুরি বৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ, গত ৫ বছরে পোশাক শিল্পে উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৪০ শতাংশ-৪৫ শতাংশ বেড়েছে। কোভিডের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা পরিচালনায় খরচ আরও বেড়েছে। 

অন্যদিকে, বিশ্ব জুড়ে চলমান জ্বালানি সংকটের কারণে স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যুতের অপ্রতুলতার কারণে কারখানাগুলোতে ডিজেল দিয়ে জেনারেটর চালানো হচ্ছে। 

গত জানুয়ারি মাসের ১২ তারিখে বিদ্যুতের মূল্য ৫শতাংশ এবং ৩০ তারিখে ৫শতাংশ করে শুধুমাত্র জানুয়ারি মাসেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে মোট ১০শতাংশ। ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে গ্যাসের দামও প্রায় আড়াই গুন বাড়ানো হয়েছে। এতে করে শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে, শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ক্রমবর্ধমানভাবে কমছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিল্পের ব্যয় বৃদ্ধিও এই ভার বহনের সক্ষমতা নেই। 

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম হ্রাস পেয়েছে। সরকারের কাছে আমাদের একান্ত অনুরোধ, বিশ্ববাজারে বিরাজমান জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের দেশে ধাপে ধাপে সহনীয় পর্যায়ে গ্যাসের দাম যৌক্তিকভাবে বাড়ানো হোক। এতে করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সেভাবে বাড়বে না, জনগণ উপকৃত হবে, শিল্পও উপকৃত হবে। গ্যাস সঞ্চালনে সিস্টেম লস কমিয়েআনা, অবৈধ সংযোগগুলো বন্ধ করার জন্যও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

শিল্পখাত, বিশেষ করে রপ্তানিমুখীখাত আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে, যার গুরুত্ব প্রতিটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতে উল্লেখ রয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্বনির্ভর ও উন্নত অর্থনীতির দেশ হওয়ার যে রূপকল্প নিয়ে আমরা কাজ করছি, তা অর্জনের জন্য রপ্তানিমুখী শিল্পায়নের কোন বিকল্প নেই। 

ফারুক হাসান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি নানাভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পূর্বাভাষ অনুযায়ী, আগামী এক-দুই দশকে এক ট্রিলিয়ন তথা এক লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পরিনত হতে পারে এই দেশ। গত ছয় বছরে দেশের গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.৪শতাংশ। সেটি যদি ৫ শতাংশেও নামে, তাতেও ২০৪০ সালের মধ্যেই এক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির মাইলফলক স্পর্শ করবে বাংলাদেশ। আর প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ হলে ২০৩০ সালেই সেখানো পৌঁছানো সম্ভব। পোশাকখাতের কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা আজ এ খাতটির উপর নির্ভরশীল। আগামীদিনে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে ভিশন তৈরি করেছে, তা বাস্তবায়নে পোশাকখাতের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই পোশাক শিল্পের পথ মসৃন ও রাখা জরুরি। 

আরও পড়ুন: 

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: