• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

জবি শিক্ষার্থী অবন্তিকার আত্মহত্যা: দীর্ঘ স্ট্যাটাস অভিযুক্ত আম্মানের

প্রকাশিত: ১৬:৫০, ১৬ মার্চ ২০২৪

আপডেট: ১৬:৫৪, ১৬ মার্চ ২০২৪

ফন্ট সাইজ
জবি শিক্ষার্থী অবন্তিকার আত্মহত্যা: দীর্ঘ স্ট্যাটাস অভিযুক্ত আম্মানের

ফাইরুজ অবন্তিকা ও আম্মান সিদ্দিকী

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা। তিনি আত্মহত্যার আগে সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে দায়ী করেছেন। এদিকে অবন্তিকার মৃত্যুর পর ক্যাম্পাস ও কুমিল্লায় চলছে বিক্ষোভ। এরই মধ্যে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন অভিযুক্ত আম্মান। বাংলাভিশনের পাঠকদের জন্য তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

ফেসবুকে আম্মান সিদ্দিকী লেখেন, প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি ফাইরুজ সাদাফ অবন্তীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন। এবারে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সকলের কাছে অনুরোধ করবো পুরো ব্যাপারটা একটা ফেসবুক পোস্ট দিয়ে শুধু জাজ না করে ঘটনার আদ্যোপান্তটা জানার জন্য। ঘটনার সূত্রপাত ০৪.০৮.২০২২ সালে। একটা ফেইক আইডি থেকে আমাদের ১৪ জন শিক্ষার্থীর নামে গুজব ছড়িয়ে কয়েকজন বন্ধুদের কাছে পাঠানো হয়। যেখানে আমার নামেও অনেক মিথ্যা অপবাদ মূলক কথা ছিল। এমনকি অবন্তীর নিজের নামও সেই টেক্সটের মধ্যে ছিল।

যখন এমন ম্যাসেজ সামনে আসলো আমি সবাইকে নিয়ে কোতোয়ালী থানায় যায়। সেখানে অবন্তী নিজেও উপস্থিত ছিলো। পরবর্তী জিডি করা হয়। এবং জিডি করে ফেরার সময় অবন্তী স্বীকার করে যে ওই ফেইক আইডিটা সে নিজে খুলেছে। এবং অন্য একটি মেয়েকে ফাঁসানোর জন্য সে এই কাজটি করেছে। 

পরবর্তী দিন এস আই রুবেলকে, আইও(কোতোয়ালী থানা) আমরা জানাই যে আমাদেরই এক ফ্রেন্ড ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এস আই রুবেল আমাদের থেকে অবন্তীর আম্মুর ফোন নাম্বার নিয়ে কল করেন। কল ধরেন অবন্তীর বাবা। সেখানে এস আই রুবেল ভাই আঙ্কেলকে বলেন আপনার মেয়ের বন্ধুদের মধ্যেই যেহেতু বিষয়টি ঘটেছে সেহেতু নিজেরা বসে মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর মাধ্যমে সমাধান করে ফেলেন।  
আমরা সবাই যেহেতু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেহেতু প্রক্টর স্যারের কাছেও আমরা ব্যাপারটা অবহিত করি যাতে অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে যেন  প্রক্টরিয়াল বডি বিষয়টা সম্পর্কে অবগত থাকেন।

অবন্তী এই ঘটনার আগ পর্যন্ত আমার বা আমাদের বেশ ভালো বন্ধুই ছিল। যাই হোক, প্রক্টর অফিস থেকে ওর পরিবারের কাছে চিঠি যায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে অবন্তীর বাবা মা ক্যাম্পাসে আসেন। প্রক্টরিয়াল তদন্ত কমিটির সামনে পুরো ঘটনার বিস্তারিত স্বীকার করে অবন্তী এবং একটা মুচলেকা দেয়। সেই দিনই অবন্তীর আম্মা আমাদের সবার সাথে বাইরে এসে কথা বলেন এবং বলেন ভালোভাবে বাকী সময়টা যেন আমরা মিলে মিশে পার করি। উনি ওইদিন আমাদের সবাইকে কেকও কিনে খাওয়ান। তার পরবর্তী সময়ে আমি অবন্তীকার সাথে কোনো কথা বলি নি। আর ফেসবুকে তার সাথে আমার তারপর থেকে কোনো যোগাযোগই হয়নি। এমনকি তার সাথে আমার ওই ঘটনার পরে কোনো মাধ্যমেই যোগাযোগ হয়নি। 

এবার আসি আমার জায়গা উপস্থাপনে। যারা পোস্টটি পড়ে এতরফা চিন্তা করছেন তারা একটু ঠান্ডা মাথায় এটা পড়বেন। একজন মারা গেছে তার জন্য দুঃখ পাওয়াটা অবশ্যই যৌক্তিক এবং স্বাভাবিক। আমি নিজেও ব্যথিত এবং মানতে কষ্ট হচ্ছে যে এমন একটা তুচ্ছ ঘটনাকে মাথায় রেখে ২ বছর পরে এসে এমন একটা কাজ অবন্তী করবে।

তবে একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখেন। এবং আমার কাছে প্রত্যেকটা বিষয়েরই ডকুমেন্টস আছে। সবাই যদি ডকুমেন্টসগুলোও স্পষ্ট করে দেখেন তাহলে হয়ত বুঝতে পারবেন। আর একটা প্রশ্ন কি আপনাদের মাথায় আসছে না যে " মেয়েটিকে যদি আমি অনলাইনে কোনোভাবে ডিস্টার্ব করতাম তবে সে সেটার স্ক্রিনশট অবশ্যই দিতে পারতো। সে সেটা কেন দিলো না? "

আসলে ওই ঘটনার পরে ওর সাথে আমার কোনো কথাই হয়নি। না ফেসবুকে না অন্য কোনো মাধ্যমে। ওই ঘটনাতে সে আমার নামে যেসব বাজে কথা বলেছিলো তারপরে আর তার সাথে কথা কোনো কথাই বলতাম না। তাকে কোনোভাবেই ডিস্টার্ব করার মতো মানসিকতা আমার কখনোই ছিল না। এই ছিলো পুরো ঘটনা। সে আমাকপ ব্লক করে রেখেছিলো। তার সাথে আমি আজকে পর্যন্তও ফেসবুকে বা অন্যকোনো মাধ্যমে কথাই বলি নি। এই ছিল আমার সাইডের বাস্তবতা এবং সত্যি বিষয়টি। আমি সবগুলো তথ্যই প্রমাণসহ তুলে ধরছি। বিশ্বাস করা না করাটা একান্তই আপনাদের উপর। তবে আমি যা বলেছি একদম সজ্ঞানে সত্যি বলেছি।

উপরন্তু বলে রাখা ভালো, এই ঘটনার কয়েক মাস পরে অবন্তীকার বাবা মারা যান। হতে পারে অবন্তীকা তার মনে ক্ষোভ বেঁধে রেখেছিলো যে আমাদের কারণেই তার বাবা কষ্ট পেয়ে মারা গেছেন। হতে পারে এই ভাবনা থেকে অবন্তীকার মনে আমার বিরুদ্ধে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং তীব্র প্রতিশোধ প্রবণ চেতনা থেকেই হয়ত আজকের এই ঘটনা ঘটানো তার দ্বারা।

আরো বলা উচিত দ্বীন ইসলাম স্যারের সাথে আমার একজন শিক্ষার্থী হিসেবে যতটুকু সালাম বিনিময় যোগ্য সম্পর্ক ততটুকুই ছিল। এর বাইরে খুব বেশি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না যে স্যার আমার হয়ে অবন্তীকে কয়েকটা কটু বাক্যও বলতে পারে। স্যারকে আমি ডিফেন্ড করছি ব্যাপারটা এমন না, তবে স্যারকে ক্যাম্পাসের সবাই বেশ সহজ সহরল মানুষ হিসেবেই চেনেন। পাবলিক সেন্টিমেন্ট অনেক বড় বিষয়। তাই একপাক্ষিক চিন্তা না করে পুরো বিষয়টা চিন্তা করে একটা মতামতে উপনীত হওয়ার জন্য অনুরোধ করবো সকলকেই।

অবন্তীকার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি আমি এবং সবসময় তা করবো ইনশাআল্লাহ। তবে সবাই আমার দিকটাও ভাববেন। ভাববেন আমি ওর সাথে কোনো যোগাযোগ না রেখেও অযথা একটা ভুল বোঝাবুঝির স্বীকার হচ্ছি। আমি আজ পর্যন্তও ওর সাথে কোনো যোগাযোগ করিনি কোনো মাধ্যমেই। আমি নিজেই মাথায় সার্বিক পরিস্থিতির চাপ মাথায় নিয়েই পুরোটা লিখলাম। রায়হান সিদ্দিকী আম্মান, আইন বিভাগ, জবি।’

এর আগে, শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকায় নিজ বাসায় গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন ফাইরুজ অবন্তিকা। মৃত্যুর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে দায়ী করে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন তিনি।

ফেসবুকে দেওয়া অবন্তিকার স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো, আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন ও অনলাইনে থ্রেটের (হুমকি) উপর রাখতো সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানানভাবে ভয় দেখায়, আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার। 

আমি জানি এখানে কোনো জাস্টিস (বিচার) পাবো না। কারণ দ্বীন ইসলামের অনেক চামচা ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। এই লোককে আমি চিনতামও না। আম্মান আমাকে সেক্সুয়ালি এবিউজিভ কমেন্ট করায় আমি তার প্রতিবাদ করলে আমাকে দেখে নেওয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের শরণাপন্ন করায়। আর দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে নারীজাতীয় গালিগালাজ করে। সেটা অনেক আগের ঘটনা হলেও সে এখনো আমাকে নানাভাবে মানহানি করতেসে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন কথা বলে। 

আর এই লোক কুমিল্লার হয়ে কুমিল্লার ছাত্র কল্যাণের তার ছেলেমেয়ের বয়সী স্টুডেন্টদের মাঝে কী পরিমাণ প্যাঁচ ইচ্ছা করে লাগায় সেটা কুমিল্লার কারো সৎ সাহস থাকলে সে স্বীকার করবে। এই লোক আমাকে আম্মানের অভিযোগ এর প্রেক্ষিতে ৭ বার প্রক্টর অফিসে ডাকায় নিয়ে ".... (প্রকাশ অযোগ্য শব্দ) তুই এই ছেলেরে থাপড়াবি বলসস কেনো? তোরে যদি এখন আমার জুতা দিয়ে মারতে মারতে তোর ছাল তুলি তোরে এখন কে বাঁচাবে? 

আফসোস এই লোক নাকি ঢাবির খুব প্রমিনেন্ট ছাত্রনেতা ছিল। একবার জেল খেটেও সে এখন জগন্নাথের প্রক্টর। সো ওর পলিটিক্যাল আর নষ্টামির হাত অনেক লম্বা না হলেও এতো কুকীর্তির পরও এভাবে বহাল তবিয়তো থাকে না এমন পোস্টে। কোথায় এই লোকের কাজ ছিল গার্ডিয়ান হওয়া, আর সো কিনা আমার জীবনটারেই শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি দিলো না। আমি উপাচার্য সাদোকা হালিম ম্যামের কাছে এই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক হিসেবে বিচার চাইলাম।  

আর আমি ফাঁসি দিয়ে মরতেসি। আমার উপর দিয়ে কী গেলে আমার মতো নিজেকে এতো ভালোবাসে যে মানুষ সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে। আমি জানি এটা কোনো সলিউশন না কিন্তু আমাকে বাঁচতে দিতেসে না বিশ্বাস করেন। আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইছিলাম! আর পোস্ট মর্টেম করে আমার পরিবারকে ঝামেলায় ফেলবেন না। এমনিতেই বাবা এক বছর হয় নাই মারা গেছেন, আমার মা একা। ওনাকে বিব্রত করবেন না। এটা সুইসাইড না এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার। আর আম্মান নামক আমার ক্লাসমেট ইভটিজারটা আমাকে এটাই বলছিল যে আমার জীবনের এমন অবস্থা করবে যাতে আমি মরা ছাড়া কোনো গতি না পাই। তাও আমি ফাইট করার চেষ্টা করসি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সহ্য ক্ষমতার।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: