• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

খেলাকে কেন্দ্র করে মারামারি: কি হচ্ছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে?

প্রকাশিত: ১৯:১৬, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৯:৩৩, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ফন্ট সাইজ
খেলাকে কেন্দ্র করে মারামারি: কি হচ্ছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে?

গত দু'দিন ধরে উত্তপ্ত সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি) ক্যাম্পাস। আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেখানে মারামারি ও হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত দুই দফায় মারামারিতে প্রায় ২৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, এদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা গুরুতর। আহতদের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। বুধবার(১১ সেপ্টেম্বর) এই ঘটনা ঘটে।

পরদিন বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আইন বিভাগে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেয় এবং প্রশাসনিক ভবন ও উপাচার্যের কক্ষের সামনে মিছিল করে। তারপরে সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে তারা গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (গবিসাস) কার্যালয়ের সামনে জমায়েত সৃষ্টি করে সংগঠন বন্ধ ও তালা মারার হুমকি দেয় এবং ক্ষমা চাওয়ার আল্টিমেটাম দেয়। সবশেষে উপাচার্যের সভা কক্ষে দাবি উপস্থাপনের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পক্ষ ও প্রশাসনের উপস্থিতিতে উপাচার্য তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। এসময় তিনি জানান, আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবে তদন্তকারী দল।

মারামারির ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীরা কি বলছেন?
খেলা দেখতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, ‘প্রথম দফায় বিএমবির সাথে আইনের মারামারির পরে ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। বিএমবির টিম মাঠ ছেড়ে চলে গেলেও আইন বিভাগের টিম মাঠ ছেড়ে যায়নি। আমি মাঠের দক্ষিণ পাশের গোল বারের দিকের ছাউনিতে বসে ছিলাম। আরেক ছাউনিতে বাংলা বিভাগের শীতল ভাই বসে ছিলো। আইন বিভাগের কিছু জুনিয়র ফুটবল নিয়ে খেলছিলো। তখন শীতল ভাইয়ের গায়ে কাঁদা ছিটে আসলে তিনি বিনয়ের সাথে তাদের আস্তে খেলতে বলেন। কিন্তু সে ভাইয়ের সাথে তর্ক করতে থাকে। তখন তাদের আইন বিভাগের শাওন নামে সিনিয়রকে ডাকা হয়, তিনি তার জুনিয়রকে ক্ষমা চাইতে বললেও ওই জুনিয়র তর্ক করতে থাকে। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে আইন বিভাগ এবং রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। ঘটনার সময় উভয় বিভাগকে আমি আমের ডাল ভাঙতে দেখি, পাশাপাশি আশেপাশে থাকা বিভিন্ন লাঠি, স্টাম্প, পতাকা স্ট্যান্ড ইত্যাদি নিয়ে তারা মারামারি শুরু করে। বাংলা বিভাগের শীতল ভাই যেহেতু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ খেলা আবাহনীর খেলোয়াড় ও বিশ্ববিদ্যালয় মূল দলের খেলোয়াড় তাই সেখানে  উপস্থিত বাংলা বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগের খেলোয়াড়রাও তাকে রক্ষা করতে আসে কিন্তু তাদের উপরেও আক্রমণ করা হয়।’

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী খন্দকার মোতাকাব্বির বিল্লাহ বলেন, 'ঘটনার দিন মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সোলায়মান ভাই রাজনীতি ও প্রশাসন বনাম মেডিকেল ফিজিক্স বিভাগের খেলা দেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। প্রথম দফায় আইন বিভাগ ও বিএমবি বিভাগের যে মারামারি হয় ঐখানে উনি কিছুই করেন নাই। সেখানে মারামারি লাগলে একটা সময় স্যাররা সিদ্ধান্ত জানালো ম্যাচ পরিত্যক্ত। এটা  আইন বিভাগ না মেনে মাঠের মাঝখানে বসেছিল। পরের ম্যাচ তারা হতে দিবেনা। তখন বার পোস্টের পিছনে শীতল ভাই, নাহিদ ভাই আর সোলায়মান ভাই বসে ছিলেন। আইনের একটা ছেলে বল নিয়ে খেলতেছিল, কাঁদার মধ্যে বল লাগলে কাঁদার ছিটা শীতল ভাইয়ের গায়ে লাগে৷ তখন শীতল ভাই বলেন, "এই তুমি আস্তে খেলো। তখন ঐ ছেলে বেয়াদবি করে বলে, 'এখানে বসছেন কেনো?' তখন এটা নিয়ে কথা কাটাকাটি থেকে ধাক্কাধাক্কি লেগে যায়। সোলায়মান ভাই প্রথমে উনাকে ঠেকাইসে, মারেন নাই। পরে নাহিদ ভাইয়ের গায়ে আইনের ছেলেরা হাত তুললো। এর মধ্যে রাজনীতি ও প্রশাসন আর আইনের একটা মারামারি লেগে গেলো। যার মধ্যে ভেটেরিনারি অনুষদ, বাংলা বিভাগ সহ সবাই ছিলো। আমরা যারা মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ছিলাম আমি, সোলায়মান ভাই, প্রকাশ দাদা সবাই প্রথমে মারামারি ঠেকাচ্ছিলাম। এসময় জাকারিয়া নামের একটা ছেলে সোলায়মান ভাইয়ের পিঠে ঘুষি মেরে বসে। তা দেখে আমাদের মাইক্রোবায়োলজির ইব্রাহীম, যোবায়েরসহ আমরা সবাই রাগান্বিত হয়ে যাই। মূলত মারামারি ঠেকাতে গিয়ে সোলায়মান ভাই, নাহিদ ভাই, শীতল ভাইদের আঘাত করায় আমরা সেখানে জড়িয়ে পড়ি।"

ঘটনার কেন্দ্রে থাকা বিভাগের শিক্ষার্থীরা কি বলছেন?
বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি(বিএমবি) বিভাগের খেলোয়াড় হাসিবুল শান্ত বলেন, 'খেলার শেষের দিকে মাত্র চার মিনিট বাকি থাকা অবস্থায় একটি উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। আইন বিভাগের দল উত্তর দিকের গোলপোস্টে আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে বিএমবি বিভাগের একজন খেলোয়াড় বল নিয়ে গোল লাইনের বাইরে চলে যান, যার ফলে প্রতিপক্ষ দল একটি কর্নার কিক লাভ করে। এসময় একটি দূর্ঘটনা ঘটে যখন আইন বিভাগের একজন খেলোয়াড় পিছলে পড়ে যান। দুই দলের খেলোয়াড়রা সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে কথা বলছিলেন, কিন্তু পরিস্থিতি হঠাৎ করেই জটিল আকার ধারণ করে যখন আইন বিভাগের কিছু উত্তেজিত দর্শক মাঠে প্রবেশ করে এবং খেলোয়াড়দের প্রতি আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রদর্শন করে। এসময় পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি ঘটে এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিএমবি বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই সংঘর্ষ থামাতে চেষ্টা করলেও, তাদের উপর আক্রমণ চালানো হয়। বিশেষ করে, জাবেদ নামে বিএমবির একজন শিক্ষার্থীকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালানো হয়। তার সহপাঠী সুমি সাহায্য করতে এগিয়ে এলে তাকেও আক্রমণ করা হয়। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন বিএমবি দলের সেরা খেলোয়াড় মোয়াজ হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেন। তাকে প্রথমে মুখে আঘাত করা হয় এবং পরে পিছন থেকে মাথায় আঘাত করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি চলতে থাকে। অবশেষে, রেফারি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া কমিটির কর্মকর্তারা খেলা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেন।'

তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, 'প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য এবং আইন বিভাগের শিক্ষক আল-আমিন স্যার, যিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করেননি। রেফারি যখন খেলা বাতিলের ঘোষণা দেন, বিএমবি দলের ম্যানেজার দীপু স্যার এবং অধিনায়ক মুকুল ভাই তাদের দলকে নিয়ে সম্মানজনক ভাবে মাঠ ত্যাগ করেন। অন্যদিকে, আইন বিভাগের ম্যানেজার আল-আমিন স্যার তার দল নিয়ে মাঠে থেকে যান এবং রেফারির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করতে থাকেন।'

অন্যদিকে আইন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম শিপন বলেন, ‘প্রথম দফায় বিএমবির সাথে যে মারামারির ঘটনা ঘটে সেটি ছিলো অনাকাঙ্ক্ষিত। খেলার এক পর্যায়ে আমাদের খেলোয়াড় পড়ে যায়, সে সময় তাকে আঘাত করতে আসে বিএমবির খেলোয়াড়। এটি দেখে উপস্থিত আইন বিভাগের দর্শকরা ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে এবং দু'পক্ষ মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। মারামারির এক পর্যায়ে বিএমবির একজন শিক্ষার্থী রড নিয়ে আসে ও আঘাত করার সময় তাদেরই একজন শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে যায় বলে আমরা জানতে পারি। এ ঘটনায় খেলা থেমে থাকে। রেফারিরা তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে দেরী করে। এসময় বিএমবির টিম দুইবার মাঠ থেকে বেরিয়ে যায়। নিয়ম অনুসারে বিপরীত টিম মাঠ থেকে বের হয়ে গেলে অপর টিমকে বিজয়ী ঘোষণা করার কথা। তবুও বিএমবির টিমকে ১০ মিনিট সময় দেওয়া হয় মাঠে ফেরার জন্য। কিন্তু ২০ মিনিট হয়ে গেলেও তারা মাঠে ফেরেনা। রেফারি তাদের বুঝানোর চেষ্টা করে, তবুও তারা না মানায় খেলা বাতিল করা হয়।

মারামারির দ্বিতীয় দফার বিষয়ে তিনি বলেন, 'এসময় আমাদের ২য় সেমিস্টারের কিছু জুনিয়র বল নিয়ে খেলতে মাঠের বিপরীতের গোলবারের দিকে যায়। সে সময় সেদিকে বসে থাকা বাংলা বিভাগের শীতল ও রাজনীতি প্রশাসনের জার্সি পরিহিত সোলাইমান তাদের গায়ে কাঁদা লাগার কথা বলে তাকে অন্য দিকে খেলতে বলে। সে সময় তাকে (মুন্না) ডেকে পরিচয় জিজ্ঞেস করা হয় ও জুনিয়র হয়ে সিনিয়রের সাথে তর্ক করার অভিযোগ করা হয়। পরে সেখানে উপস্থিত আমাদের আরেক শিক্ষার্থী শাওনকে ডাকা হয়। শাওন মুন্নাকে ক্ষমা চাইতে বলে, কিন্তু  কোন অপরাধ না করায় মুন্না ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে তার উপরে আক্রমণ করে বসে। সে সময় আইনের সাথে রাজনীতির ও বাংলা বিভাগ সংঘর্ষে জড়ায়। মার খেয়ে ফিরে আসার পরেও বাস্কেটবল কোর্টের কাছে আসার পরে তারা আবার আমাদের উপরে আতর্কিত আক্রমণ করা শুরু করে। তারা ফ্ল্যাগস্টান্ড, গাছের ডাল, স্টাম্প ও পায়ের বুট দিয়ে আমাদের আঘাত করতে থাকে। এসময় আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। সেখানে উপস্থিত আমাদের শিক্ষকদেরকেও তারা গালিগালাজ করতে থাকে। সেখানে বাংলা বিভাগের অনেকে রাজনীতি বিভাগের জার্সি পরিহিত ছিলো, বিধায় আমরা এটিকে পরিকল্পিত হামলা বলছি। ইতোমধ্যে আমাদের শিক্ষকরা প্রতিবাদলিপি জমা দিয়েছে। রবিবার আমরা উপাচার্য বরাবর প্রতিবাদলিপি জমা দিবো এবং সম্পূর্ণ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাইবো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলনে,  ঘটনাটা ঘটছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড়ের সাথে। তিনি বাংলা বিভাগের, আমাদের খেলা থাকায় অনেকেই আমাদের টিমের জার্সি বানিয়েছে।বাংলা বিভাগের ওই খেলোয়াড় আমাদের অনেক কাছের মানুষ। সবাই তাকে চিনে, সে অনেক ভদ্র। যখন তাকে মারা শুরু করেছে, তার পরই আমাদের ছাত্ররা সহ সকল বিভাগের ছাত্ররা সেখানে যায়। পরে আইনের ছাত্ররা তেড়ে আসলে নিজেদের বাঁচাতে ওই পরিস্থিতি তৈরি হয়।

গবিসাসে হামলার বিষয়ে তিনি বলনে, সেখানে (মারামারির ঘটনায়) সব বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত ছিলো, কিন্তু দোষ পড়লো রাজনীতির। সাথে নিউজও হইছে রাজনীতির ছাত্রদের নিয়ে। শুধু এটা শোধরাতেই তাদের যেয়ে বলা যে সঠিক নিউজ করার জন্য। একটা ছাত্রও গবিসাসের রুমে একটা টোকাও দেয় নাই।

খেলা পরিচালনাকারী রেফারি কি বলছেন?
ঘটনার দিন ম্যাচ পরিচালনাকারী ক্রীড়া শিক্ষক মো: হাবিব উদ্দিন বলেন, খেলার সময়ে উত্তর পাশের বারের দিকে দুই প্লেয়ার স্লাইড ট্যাকেল করে চলে যায়। একজন আইন বিভাগের আমিনুল আরেকজন বিএমবির খেলোয়াড়। দুইজনেই একটু রিয়েক্ট করে, এগুলো খেলার অংশ। গোলপোস্টের পিছনে আইনের শিক্ষার্থীরা ছিলো তারা হুট করে মাঠে ঢুকে বিএমবির খেলোয়াড়কে মারতে শুরু করে। পরবর্তীতে বিএমবির যারা ছিলো তারাও মারামারিতে জড়িয়ে যায়। আমরা রেফারি ছিলাম। গন্ডগোল যাতে না হয় সে চেষ্টা করছিলাম। এক পর্যায়ে দেখি বিএমবির এক খেলোয়াড়ের (মুয়াজ) মাথা ফেটেছে।

তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমি দুই দলেরই  দুইজন ম্যানেজার ও ক্যাপ্টেনকে ডাকি খেলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে। কিন্তু তারাও প্রথমে রাজি হয়না কারণ মারামারির পর মাঠে নামা কেউ নিরাপদ বোধ করছিলোনা। তাই খেলার ফলাফল আনার এক পর্যায়ে টাইব্রেকারের জন্য রাজি করলেও খেলার নিয়ম মানতে চায়না আইন বিভাগ। অন্যদিকে বিএমবিও খেলতে অস্বীকৃতি জানালে এক পর্যায় খেলা পরিত্যাক্ত ঘোষণা করি। এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে বিএমবি মাঠ ত্যাগ করলেও আইন বিভাগের কেউ মাঠ ছাড়ে না। তারা তাদেরকে বিজয়ী ঘোষণা করতে বলে। এসময় আমি ও আল আমিন স্যার যথেষ্ট চেষ্টা করি তাদের বুঝানোর। কিন্তু তারা এই সিদ্ধান্ত মানতে রাজি না হয়ে দাবি করে এতক্ষণ ধরে মাঠে ছিল তারা এখন মাঠ ছাড়বে না। আমরা যারা রেফারীর দায়িত্বে ছিলাম তাদেরকে ভুয়া ভুয়া বলে ডাকে। সাথে অনেক আজে-বাজে কথা বলে।

তিনি আরও জানান, দুপুর আড়াইটায় পরের ম্যাচ ছিল রাজনীতি-প্রশাসন ও মেডিকেল ফিজিক্সের। এই ঘটনার জন্য আমরা খেলা শুরু করতে না পারায় তারাও খেলা হবে কিনা জানতে চায়। তাদের বলি এই অবস্থায় ম্যাচ হবে কিনা ক্রীড়া কমিটি কমিটি সিদ্ধান্ত দিবে। দ্বিতীয় দফার মারামারি আমি দেখিনি। আইন বিভাগের প্রধান ও ক্রীড়া কমিটির সদস্য সহ বাকি শিক্ষকদের সাথে কথা বলার মাঝে জানতে পারি পুনরায় মারামারি হচ্ছে।

ফুটবল মাঠে রড, স্টাম্পের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড় বড় যে ছাতা থাকে ওইটার সাপোর্টের জন্য স্ট্যাম্প নেওয়া ছিলো, আর ঐগুলো দিয়ে ছাতা বাধা ছিলো। সকাল বেলা রড কিভাবে আসলো জানি না, তবে মাঠের পাশে মেহেগুনি গাছের ঐদিকে রড পড়ে থাকতে দেখেছিলাম সেদিন সকালে।

পরিত্যাক্ত ম্যাচের সিদ্ধান্ত কি হবে জানতে চাইলে তিনি জানান, আইন বিভাগ নাম প্রত্যাহার করার আবেদন জানিয়েছে। রবিবার মিটিংয়ের পর জানানো হবে। তারা যদি না থাকে বিএমবি জিতে যাবে। মেয়েদের টিমের ক্ষেত্রে তাদের পরবর্তী খেলার প্রতিপক্ষকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।

কি বলছেন প্রক্টোরিয়াল বডির অভিযুক্ত সদস্য?
ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মাঠে ঘটে যাওয়া ঘটনা এবং উপস্থিত প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন আসার ব্যপারে ঘটনাস্থলে থাকা প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য (সাময়িক অব্যহতি প্রাপ্ত) এবং ক্রিড়া কমিটির সদস্য আল আমিন হোসেন জানান, ১১ সেপ্টেম্বর খেলায় ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত, এই ঘটনার সাথে মাঠের খেলোয়াড়দের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। দুইটি ঘটনার মাঝে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টার ব্যবধান ছিলো। প্রথম ঘটনা (বিএমবি বনাম আইন) মাঠে উত্তেজিত দর্শক পক্ষের মধ্যদিয়ে ঘটেছে। যেখানে মাঠের খেলোয়াড়দের স্লাইড ট্যাকেলের পরিপ্রেক্ষিতে উত্তেজিত সমর্থকরা মাঠের মধ্যে ঢুকে পড়ে, ঘটনা চক্রে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সেখানে মাঠের মাঝে বাস্কেটবল কোর্টে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের সাথেই আমরা অবস্থান করছিলাম যেখানে সব মিলিয়ে ৬-৭ জন শিক্ষক ছিলেন। ঘটনা শুরু হওয়া মাত্রই সেখানে উপস্থিত হই এবং হাটু কাদাতে নেমে আইনের শিক্ষার্থীদের সংযত করতে চেষ্টা করি। সেখানে দু-পক্ষ কে নিবৃত করা হয় এবং খেলা হবে কিনা সে সম্পর্কে কথা চলে। রেফারির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনের আহত গোলকিপারের ব্যাপারে ফিফা রুল অনুযায়ী ফিল্ডের খেলোয়াড় থেকেই বদলি করা হয়। যেখানে বিএমবির ক্যাপ্টেন টিম ম্যানেজার সহ আমরাও সমর্থন জানাই। কিন্তু বিএমবির কতিপয় শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্যাপ্টেনের মতামত উপেক্ষা করেই মাঠ ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে ১০ মিনিট সময় বেধে দেওয়া হয় মাঠে ফেরত আসার জন্য যেটা তারা ফিরে আসেননি৷ পরবর্তীতে রেফারি সিদ্ধান্ত জানায় খেলা স্থগিত থাকবে। যেটা আইনের খেলোয়াড়রা মানতে নারাজ হন, ৩ ঘন্টা পরে কেনো এমন সিদ্ধান্ত আসবে এ ব্যপারেও তারা প্রশ্ন করেন। বরং আজই যেন ফলাফল জানানো হয়।

পরবর্তী ম্যাচ ছিলো রাজনীতি প্রশাসন বনাম মেডিকেল ফিজিক্স। প্রথম ঘটনার শেষ হতেই ২য় ঘটনার উৎপত্তি সেখানে মাঠের অন্য প্রান্তে দুজন শিক্ষার্থীর মধ্যকার কথা কাটাকাটির জের ধরে ভয়ানক ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানেও কোনো খেলোয়াড় সম্পৃক্ত না। কথা-কাটাকাটি একপর্যায়ে মারামারিতে রূপ নেয় এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। যেখানে আইনের অনেক শিক্ষার্থী আহত হন। অনেকে হাসপাতালেও ভর্তি ছিলেন।

তিনি আরো জানান, ঘটনা মোকাবেলায় প্রক্টরিয়াল বডি সহ মাঠে উপস্থিত সব শিক্ষকই সোচ্চার ছিলেন, এ-ব্যাপারে মাঠে উপস্থিত অন্যরাও বলতে পারবেন। এ মর্মে আইন বিভাগ থেকে বিচার চাওয়া হয়েছে। এই ঘটনার দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ইতিমধ্যেই প্রশাসন বরাবর লিখিত দেওয়া হয়েছে। স্পষ্টত কতিপয় দুষ্কৃতিকারী শিক্ষার্থীদের দায়ভার আইন বিভাগ নিবে না৷

ক্যম্পাসে উদ্ভূত পরিস্থিতি  নিয়ে সাবেক শিক্ষার্থীরা কি ভাবছে ?
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল ফিজিক্স এবং বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান ফয়সাল বলেন, 'আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীতে এমন বর্বর হামলার ঘটনার ইতিহাস নেই। এ ঘটনায় আমরা সাবেক শিক্ষার্থীরা স্তম্ভিত। একজন শিক্ষার্থীর আচরণ কেনো বর্বরের মতো হবে? এরা আসলে চায় কি? সকল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে নিত্য নতুন দাবি আদায় এবং নিজেদের মধ্যে মারামারির মতো ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে এমন কাজ সমর্থন করিনা। অপরাধীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

গবিসাসে হামলা এবং গবিসাস সদস্যদের হুমকির নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ। মুখকে বন্ধ করে দেওয়া মানে বিশ্ববিদ্যালয়কেই বন্ধ করে দেওয়া।  গবিসাস স্বাধীন একটি সংগঠন। এখানে কেউ সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারে না। গবিসাসের উপর হামলা চেষ্টা এবং হুমকি খুবই জঘন্য ধরনের একটি ঘটনা। আশা করি প্রশাসন এর সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক ব্যবস্থা নিবে।'

রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো: রিয়াদ হাসান যিনি বৃহস্পতিবার(১২ সেপ্টেম্বর) ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন তিনি জানান, আমরা চাচ্ছি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার। কারণ এর পূর্বে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদকে ট্রান্সপোর্ট চত্বরে জনসম্মুখে মেরে পঙ্গু করেছে। যথাযথ তথ্য প্রমাণ থাকার সত্বেও প্রশাসন এর কোন বিচার করেনি। আবার তার আগেও আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিনা অপরাধে ইভটিজিং এর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাদের শিহাব নামের এক শিক্ষার্থীকে  মারধর করে। ঘটনা সম্পর্কে জানতে আমাদের কিছু শিক্ষার্থী তাদের কাছে গেলে তাদের সাথে তর্কাতর্কি, হাতাহাতি এক পর্যায়ে দু'পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। প্রশাসনে বিচার যাওয়ার পরে তারা একপাক্ষিক বিচার করে ও অন্যায় ভাবে আমাদের দুই শিক্ষার্থীকে বিশ হাজার টাকা করে জরিমানা করে ও তাদের একজনকে এক সেমিস্টারের জন্য বরখাস্ত করে। প্রশাসনের সাথে আমরা সভাকক্ষে বসেছিলাম যাতে এবারের ঘটনার বিচার ধীরগতিতে না হয়, দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়েছি।

গবিসাস কার্যালয়ে হামলার চেষ্টা সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমরা তাদের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম। সেখানে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা সম্পর্কে আমি অবগত নই। কেউ কোন অপ্রীতিকর কিছু করে থাকলে তাদের সাথে আমরা সম্পৃক্ত নই।

গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি- গবিসাস কার্যালয়ে হামলা চেষ্টা
ঘটনাস্থলে উপস্থিত গবিসাসের সহ-সভাপতি ইউনূস রিয়াজ জানান, কিছু অতি উৎসাহী শিক্ষার্থী পেছন থেকে ইন্ধন দিয়ে এই কাজ করতে পারে। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিলো নিউজ পক্ষপাতী হয়েছে কিন্তু তারা এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। এসময় রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের একজন শিক্ষক ও কতিপয় শিক্ষার্থী মিলে তাদের বুঝাতে সক্ষম হই এবং তারা মিডিয়া চত্বর ত্যাগ করে। এসময় বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী গবিসাস কার্যালয়ের দরজায় লাথি মারে। কেউ কেউ কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেওয়া সহ নানা ধরনের হুমকি দিতে থাকে। এ ঘটনার সময় ধারণকৃত ভিডিও গবিসাসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততায় যাদের শনাক্ত করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর ভিত্তিতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিশ্চিত করেছেন। সংবাদের ক্ষেত্রে যদি কোন ভুল থাকে তাহলে সংক্ষুব্ধ পক্ষের অভিযোগ জানানোর সুযোগ আছে। প্রমাণসহ লিখিত আকারে কোন অভিযোগ জমা দিলে সেটা আমরা খতিয়ে দেখবো। স্বাধীন বাংলাদেশে সাংবাদিকতার উপর আক্রমণ কোনভাবেই কাম্য না।

প্রশাসনের সিদ্ধান্ত কি?
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি ও কিছু ভিডিও নিয়ে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে যায়। সবার কথা শুনে প্রশাসন থেকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ  দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়।

এসময় রাজনৈতিক প্রশাসনের শিক্ষার্থী আবিদের ঘটনার বিচার সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, 'আমাদের এই অভিযোগটি বর্তমানে স্থগিত রেখে প্রতিবেদন জমা করা হয়েছে। এটির মূল কারণ আবিদ নিজেই। সে আলাদাভাবে আইনী পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের কিছু না জানিয়ে সে মামলা করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তেও সাহায্য করেনি।'

অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের খেলা চালিয়ে যাওয়ার দাবির প্রেক্ষিতে এই বিষয়ে রবিবার সিদ্ধান্ত জানানো হবে এবং মঙ্গলবার থেকে আবার খেলা শুরু হবে বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করা হয়। এসময় গবিসাসে হামলা চেষ্টার ঘটনায় প্রশাসন থেকে নিন্দা জানানো হয়। একইসাথে প্রতিটি ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নিশ্চয়তা দেয়া হয়।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2