• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

হুমায়ূন ফরীদি দ্য গ্রেট

শায়ের খান

প্রকাশিত: ১৪:৩৫, ৩০ মে ২০২৩

ফন্ট সাইজ
হুমায়ূন ফরীদি দ্য গ্রেট

হুমায়ূন ফরীদি ছিলেন বাংলাদেশের গ্রেগরী পেক

হুমায়ূন ফরীদি ভাই তখন অভিনয়ের জন্য মিনিট হিসেবে পেমেন্ট নেন । মানে নাটক যত মিনিটের, তত হাজার টাকা । আমার নাটক ৫০ মিনিটের । সেই হিসেবে তাঁকে নিলে আমার দিতে হবে ২ দিনে ৫০ হাজার টাকা । তাঁকে আমার নিতেই হবে দুটো কারণে ।  এক . তাঁর সাথে আমার ভীষণ ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক । আমাকে আদর করে পাগলা ডাকেন । দুই . স্ক্রিপ্টটা তাঁকে মাথায়  রেখেই লিখেছি । আমার চেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন ফরীদি ভাই । স্ক্রিপ্ট তাঁর ভীষণ পছন্দ হয়েছে । বললাম , 'বলেন কতো দিমু ? ৫০ হাজার দিতে পারমু না ।

 

 আমাদের মধ্যে এই ভাষায়ই কথা হতো । বললেন ,' তাইলে তুমিই বলো । আবার ২০-২৫ হাজার বইলো না কিন্তু পাগলা । ' বললাম ,' ২৫ হাজারই তো বলতে চাইসিলাম । আমার বাজেট ওইটাই । ঠিক আছে যান ৩০ হাজার । ' হাসলেন যেন  কাঁচা জোকস বললাম । বললেন ,' আরেন্নাহ মিয়া , আমি ৫০ হাজারের নিচে করিনা। তুমি দেইখা চান্স দিতেসি । ' বললাম ,' তাইলে আপনেই বলেন । আমি তো আমার বাজেট থেইকা বাড়লামই । ' বললেন , ' ফ্রিজ খুইলা ২টা ক্যান বাইর করো । ' দুটো ঠান্ডা ক্যান'স বের করলাম । বললেন ,' চিয়ার্স । তিন ঢোকের পর ফাইনাল অফার দাও । ' চতুর্থ তেতো ঢোকের পর বললাম ,' যাই বলেন , ৩৫ হাজারের বেশি দিতে পারমু না । ফাইনাল । ' চেয়ারে মাথাটা হেলান দিয়ে চুল টেনে ধরে চোখ বন্ধ করে বললেন ,' ৫০০ টাকার নোট দিবা । সবগুলা যেনো নতুন ঘ্রানওয়ালা হয় । ডান । ' 


মজা করে শ্যুট করেছিলাম আশুলিয়ার এক গ্রামে । মূল কাস্ট ছিলো খলিলুল্লাহ খান , পারভিন সুলতানা দিতি ও হুমায়ূন ফরীদি । নাটকটি প্রচার হয়েছিলো ঈদে । একটি কনটেস্টে ৩টি ডিপার্টমেন্টে নমিনি হয়েছিলো নাটকটি । আমিও জীবনে প্রথম সেরা নাট্যকার ডিপার্টমেন্টে নমিনি হয়েছিলাম । সেরা অভিনেতার পুরস্কারটি জিতেছিলেন ফরীদি ভাই ।   
হুমায়ূন ফরীদি ভাইয়ের সাথে আমার পেশাগত কাজের চাইতে ব্যাক্তিগত সম্পর্ক ছিলো বেশি । ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের একটা ঘটনা । বাংলাদেশ তখন কাঁচা টীম । জিম্বাবুয়ের কাছেও হারে । রাতে খেলা বাংলাদেশ - সাউথ আফ্রিকা । ফোনে ফরীদি  ভাইকে বললাম , আজকে বাংলাদেশ জিতবে । বললেন, ধ্যুর মিয়া । বাজি লাগবা ?    
১ লাখ টাকা ? বললাম, ওইটা আপনেও দিবেন না , আমিও দিমুনা । ২০ হাজার । বললেন ,ক্যাশ দিবা কিন্তু । বললাম, আপনেও ক্যাশ দিয়েন । খেলা শেষ । অলৌকিক ভাবে বাংলাদেশ জিতে গেলো । মধ্যরাতে রাস্তায় রাস্তায় মিছিল - বাংলাদেশ ! বাংলাদেশ !! ফরীদি ভাইকে কল দিয়ে দেখি ফোন বন্ধ । গার্লফ্রেন্ড আমাকে ফোন করেই হু হু করে কাঁদতে লাগলো । খুশির কান্না । ওর কান্নার দুটো কারণ - বাংলাদেশ জিতেছে আর ওর বয়ফ্রেন্ড শায়ের খান হারিয়ে দিয়েছে হুমায়ূন ফরীদিকে।

হুমায়ূন ফরীদি ছিলেন বাংলাদেশের গ্রেগরী পেক । তাঁর মতো অভিনেতা যুগে যুগে আসেনা, শতকে একবার আসে । আপনিই আমাকে বুঝিয়েছিলেন, বয়সে বড় ছো্টো বিষয় না, চিন্তার হাইট মিলে গেলে বন্ধুত্বটা যে কারো সাথেই যে কারোর হতে পারে। মিসিং ইউ ডিয়ার । 

লেখক - নাট্যকার - ফিল্ম মেকার

মন্তব্য করুন: