বাংলাদেশ-মিজোরাম সীমান্তে ভারতের নতুন ছক?

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সরকার বদলের পর থেকেই বাংলাদেশ সীমান্তে বিতর্কিত ও সন্দেহজনক নানান তৎপরতা বাড়িয়ে চলেছে ভারত। এসব নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। এরই মাঝে বাংলাদেশ সীমান্তে মোতায়েনের জন্য ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিএসএফ-এর জনবল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ-মিজোরাম সীমান্তে বিএসএফ-এর একটি ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার বা অগ্রবর্তী সদরদপ্তর স্থাপনেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
একই প্রকল্পের আওতায় ভারত-পাকিস্তান সীমান্তেও একটি ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেই সাথে ঐ সীমান্তেও বাড়ানো হবে সীমান্তরক্ষীর সংখ্যা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে প্রভাবশালী ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানিয়েছে, ১৬টি নতুন ব্যাটালিয়ন যুক্ত করতে সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বিএসএফ। এসব ব্যাটালিয়নের আওতায় বাড়ানো হবে ১৭ হাজার সীমান্তরক্ষী। সেই সাথে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সীমান্তে অর্থাৎ পূর্ব ও পশ্চিম কমান্ডে দুটি অগ্রবর্তী সদরদপ্তর স্থাপনেরও অনুমোদন দেয়া হবে। এরই মাঝে এসব ব্যাপারে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
ভারতীয় বিশ্লেষক ও গণমাধ্যমগুলো বলছে, গত বছর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশ সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্ক অবস্থায় আছে বিএসএফ। অন্যদিকে ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর থেকে পাকিস্তান সীমান্তেও চলছে ব্যাপক উত্তেজনা। সার্বিক প্রেক্ষাপটে সীমান্তরক্ষীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং অগ্রবর্তী সদর দপ্তর স্থাপনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সীমান্তে বিএসএফ-এর সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়বে। নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় এসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানাচ্ছে তারা।
প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া-পিটিআইকে বিএসএফ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খুব শিগগিরই এসব প্রকল্প কেন্দ্রীয় সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে বলে আশাবাদী তারা। অর্থ মন্ত্রণালয় শিগগিরই এ খাতে তহবিল বরাদ্দ দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এরই মাঝে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মিলেছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের পর দ্রুততার সাথে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। এগুলো শেষ করতে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানিয়েছে তারা।
পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সীমান্তে বিএসএফ-এর আছে ১৯৩টি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন আছে। প্রতিটি ব্যাটালিয়নে আছে ১ হাজার করে সদস্য।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নতুন বিএসএফ সদস্যদের বড় একটি অংশকে মোতায়েন করা হবে বাংলাদেশ ঘেঁষা সীমান্তে। বিশেষ করে বাংলাদেশ-মিজোরাম সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিতে নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে। বাকি সদস্যদের মোতায়েন করা হবে পাকিস্তান ঘেঁষা জম্মু-কাশ্মীর ও পাঞ্জাব সীমান্তে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের সাথে উত্তেজনা বৃদ্ধি ও পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় মিজোরাম সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আছে ভারতের। সে কারণেই এমন উদ্যোগ।
দ্রুত পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা বাস্তবতা, ভৌগোলিক অবস্থানসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিএসএফ-কে শক্তিশালী করার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দুই দেশ মিলিয়ে মোট ৬ হাজার ৭২৬ কিলোমিটার সীমান্ত পাহারা দেয় বিএসএফ। এর মাঝে কাশ্মীরের লাইন অব কন্ট্রোলে ৩৩৯ কিলোমিটারের বাইরে ভারত-পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সীমান্ত আছে ২ হাজার ২৯০ কিলোমিটার। অন্যদিকে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সীমান্তদৈর্ঘ্য অনেক বেশি, ৪ হাজার ৯৭ কিলোমিটার।
বিএসএফ-এর তথ্য মতে, দুই দেশের মোট সীমান্ত দৈর্ঘ্যের মাঝে নদী ও গভীর জঙ্গলের কারণে ১ হাজার ৪৭ কিলোমিটার কাঁটাতার বিহীন। এ বাদে বাকি অংশে বিএসএফ-এর সীমান্ত চৌকির সংখ্যা ১ হাজার ৭৬০টি।
বিভি/এইচজে
মন্তব্য করুন: