যুক্তরাজ্য-ইইউর নতুন বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তি (ভিডিও)
২০১৬ সালে ঐতিহাসিক এক গণভোটের মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় ব্রিটেন। স্বাধীনতার স্বাদ নিয়ে ব্রেক্সিটের সেই রাতকে আনন্দের সাথে উদযাপন করেছিলো ব্রিটিশ নাগরিকেরা। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ নয় বছর।
তবে নতুন এক বাস্তবতায় আবারও দরজায় কড়া নাড়ছে সেই পুরোনো বন্ধুত্ব। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে নতুন চুক্তিতে পৌঁছেছে যুক্তরাজ্য। বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, মৎস্যসম্পদ, ভ্রমণ এবং যুব স্কিম নিয়ে বহুমুখী এই চুক্তিতে সই করেছে দুই পক্ষ। ১৯মে লন্ডনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যের যৌথ সম্মেলনে এই চুক্তির বিষয়ে সমঝোতা হয়। ব্রেক্সিটের পর দু’পক্ষের মধ্যে এমন বড় ধরনের সমঝোতা এটিই প্রথম।
নতুন এই চুক্তির ফলে ব্রিটিশ খাদ্য ও কৃষিপণ্যের ইইউতে প্রবেশ সহজ হবে এবং সীমান্তে কাগজপত্র ও চেকিং কমবে। ফলে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য রপ্তানি সহজ হবে এবং খাদ্যের দাম কমবে। এছাড়া ব্রিটেন ও ইইউর মধ্যে ভ্রমণ ও পণ্যের চলাচল সহজ করতে ই-গেট সুবিধাসহ নতুন ব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা চলছে। ইইউ ও ব্রিটিশ জেলেরা পরবর্তী ১২ বছর একে অপরের জলসীমায় মাছ ধরার সুযোগ পাবে, যা ইইউর জন্য বড় সুবিধা।
নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তির আওতায় সামরিক চলাচল, শান্তিরক্ষা ও হাইব্রিড হুমকি মোকাবিলায় সহযোগিতা বাড়বে। দুই পক্ষ যৌথভাবে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয় ও বিনিয়োগে অংশ নেবে, যেখানে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো ইইউর ১৫০ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের যৌথ প্রতিরক্ষা প্রকল্পে অংশ নিতে পারবে। এছাড়া তরুণদের জন্য সীমিত ‘ইয়ুথ মোবিলিটি স্কিম’ চালু এবং ‘ইরাসমাস প্লাস’ নামের একটি ছাত্র বিনিময় কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং ইউরোপীয় নেতারা একে "নতুন যুগের সূচনা" হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। যদিও ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে দেশটির কিছু প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ স্টারমারের বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করছেন। ফলে বৈশ্বিক শক্তিগুলো তথাকথিত শত্রু-মিত্র সম্পর্কে বাইরে এসে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে নতুনভাবে সবকিছু বিবেচনা করতে শুরু করেছে।
চ্যাথাম হাউসে যুক্তরাজ্যের বিশ্ব কর্মসূচির পরিচালক ওলিভিয়া ও'সুলিভান বলেন, ''আমরা আমেরিকার এক প্রজন্মগত পরিবর্তনের মুখে দাঁড়িয়ে আছি। অর্থাৎ, ট্রাম্প প্রশাসনের পর অন্য কোনো প্রেসিডেন্ট এলেও, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ইউরোপের নিরাপত্তায় আগের মতো আগ্রহ দেখাবে না। তারা এখন সেনা মোতায়েন এবং অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে ইউরোপের চেয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দিকে বেশি মনোযোগ দেবে। আর এর জবাবে ইউরোপীয়দেরও ব্যবস্থা নিতে হবে। ''
দুই পক্ষের এই ঘনিষ্ঠতাকে স্বাগত জানাচ্ছেন ব্রিটিশ নাগরিকেরা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও এখন আফসোস করছেন তাদের অনেকে। বলছেন, ব্রেক্সিটের ফলে তারা আসলে বিশেষ কোনো সুবিধাই পান নি।
ইইউতে যোগদানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের কোনো আনুষ্ঠানিক পরিকল্পনা নেই। তবে জনমতের দিক থেকে ব্রিটেনের জনগণের মধ্যে ইইউর প্রতি মনোভাব অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ব্রিটিশ নাগরিক এখন ইইউতে থাকার পক্ষে, যা ২০১৬ সালের ব্রেক্সিট গণভোটের ফলাফলের থেকে ভিন্ন। ফলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে যদি আবার গণভোট হয় তাহলে ইইউতে থাকার পক্ষেই বেশি ভোট পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: