সমর্থকদের কাছ থেকে চাল উপহার: জাপানের কৃষিমন্ত্রীর পদত্যাগ

ছবি: সংগৃহীত
চাল নিয়ে একটি বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন জাপানের কৃষিমন্ত্রী তাকু এতো। সম্প্রতি তিনি তার এক মন্তব্যে বলেছেন, তাকে কখনও চাল কিনতে হয়নি, কারণ তার সমর্থকরা তাকে চাল উপহার দিয়ে থাকেন। এই মন্তব্যটি এমন এক সময় তিনি করেছেন, যখন দেশের সাধারণ মানুষ চালের দাম বাড়ায় ভোগান্তিতে রয়েছে।
সাগা প্রিফেকচারে আয়োজিত তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে কৃষিমন্ত্রী এমন মন্তব্য করায় দেশজুড়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ঘটনার পর ২১ মে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। অনেকের মতে, তার এমন কথাবার্তা দেশের বর্তমান কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীনতার ইঙ্গিত দেয়। এ নিয়ে তার ভোটার ও আইনপ্রণেতাদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে জাপানে চালের দাম ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। কম উৎপাদনই এর পেছনের অন্যতম কারণ। এই পরিস্থিতিতে, জনগণের দুর্ভোগ নিয়ে মন্ত্রী এতো যে মন্তব্য করেছেন তা অসংবেদনশীল হিসেবে সমালোচিত হয়েছে। পদত্যাগের সময় তিনি বলেন, চালের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ যখন ভোগান্তিতে রয়েছেন, তখন তার এমন মন্তব্য করা ছিল অত্যন্ত অনুচিত।
জাপানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তাকু এতোর পদত্যাগের পর তার জায়গায় সাবেক পরিবেশমন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমিকে কৃষিমন্ত্রীর পদে বিবেচনা করা হচ্ছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক বছরে জাপানে চালের মূল্য দ্বিগুণ হয়েছে। নাগরিকদের আয় মূল্যস্ফীতির গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জাপান সরকার চলতি বছরের মার্চ থেকে জরুরি রিজার্ভ চাল বাজারে সরবরাহ করা শুরু করলেও, তাতে বাজারে ইতিবাচক কোনো প্রভাব পড়েনি।
এদিকে চাল নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার পরও প্রথমে এতোকে বরখাস্ত না করায় প্রধানমন্ত্রী ইশিবাও তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হন। বিরোধী দলগুলো তখন হুমকি দেয় যে, তারা পার্লামেন্টে এতোর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনবে। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ইশিবা এতোর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন।
কৃষিমন্ত্রীর এই পদত্যাগ প্রধানমন্ত্রী ইশিবার জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এদিকে আগামী জুলাই মাসে জাপানের উচ্চকক্ষের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে গত বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত আগাম নির্বাচনে তার লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) এবং জোটসঙ্গী কোমেইতো নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়।
কিওডো নিউজের এক জরিপে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী ইশিবার জনপ্রিয়তা কমে ২৭.৪ শতাংশে পৌঁছেছে। একই সাথে, চালের দাম নিয়ে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপে ৯০ শতাংশের কাছাকাছি ভোটার অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: