তালেবান সরকারকে প্রথম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিলো রাশিয়া

ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। আল-জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারের মনোনীত নতুন রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছে। এই পদক্ষেপটি আফগানিস্তানের বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপনের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের বিশ্বাস, আফগানিস্তান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করলে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার হবে এবং পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়নে তা সহায়ক হবে।
আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এ ধরনের সাহসী পদক্ষেপ অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয় হয়ে উঠবে। তিনি আরও বলেন, স্বীকৃতির প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে এবং রাশিয়া প্রথম দেশ হিসেবে এতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।
আফগানিস্তানের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ২০২১ সালের আগস্ট মাসে দেশটির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেনাবাহিনী আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করে নেয়। এর ফলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত তৎকালীন আফগান সরকার পতনের মুখে পড়ে।
ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের উপর নিবিড় নজর রাখা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র আফগান সরকারের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ হিমায়িত করে রেখেছে। এর ফলে আফগানিস্তানের ব্যাংকিং ব্যবস্থা কার্যত আন্তর্জাতিক আর্থিক নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
আগে আফগানিস্তানের বর্তমান প্রশাসনকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করত রাশিয়া। ২০০৩ সালে তারা এই সরকারকে সন্ত্রাসবাদী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল। তবে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট আফগান সরকারের নাম ওই তালিকা থেকে মুছে ফেলেছে।
আফগানিস্তানের বর্তমান শাসন ব্যবস্থা এখন রাশিয়ার কাছে একটি বাস্তব পরিস্থিতি এবং সম্ভাব্য কৌশলগত সহযোগী হিসেবে গৃহীত হয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২৪ সালের জুলাই মাসে আফগানিস্তানের বর্তমান প্রশাসনকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একজন মিত্র হিসেবে উল্লেখ করেন।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী সের্গেই লাভরভ মন্তব্য করেন, কাবুলের নতুন সরকার এখন একটি স্বীকৃত বাস্তবতা এবং তাদের উচিত বাস্তবসম্মত নীতি গ্রহণ করা।
যদিও এখনও কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। এখনও তাদের ডি ফ্যাক্টো প্রশাসন হিসেবে উল্লেখ করে জাতিসংঘ। এদিকে রাশিয়ার এই উদ্যোগকে আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব আরও শক্তিশালী হতে পারে।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: