এবার ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে লুক্সেমবার্গ (ভিডিও)
গাজায় ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞের প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ। গত জুলাই মাসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাখোঁ ঘোষণা করেছিলেন, ফ্রান্স ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চায়। একই মাসে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও এই ধরনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও বেলজিয়ামসহ অন্য দেশগুলো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এবার সে তালিকায় নাম লেখালো ইউরোপের শীর্ষ ধনী দেশ লুক্সেমবার্গ। ১৬ সেপ্টেম্বর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য জেরুসালেম পোস্ট।
প্রতিবেদনে বলা হয়, লুক্সেমবার্গের এক পার্লামেন্টারি কমিশনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী লুক ফ্রিডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেভিয়ার বেত্তেল। লুক ফ্রিডেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পরিস্থিতি অনেকটাই খারাপ হয়েছে। দুই রাষ্ট্র সমাধান এখনও প্রাসঙ্গিক। এজন্য লুক্সেমবার্গ সরকার আগামী সপ্তাহের জাতিসংঘ সম্মেলনে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে।’
আয়তনে ছোট হলেও লুক্সেমবার্গ একটি অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী ইউরোপীয় দেশ। ঐতিহাসিকভাবে দেশটি সরাসরি সামরিক বা আঞ্চলিক শক্তি না হয়ে মানবাধিকার, শান্তি, এবং আন্তর্জাতিক আইনের ইস্যুতে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তবে সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিউন ভিত্তিক যে ঐক্য দেখা যাচ্ছে, তার সাথে একটি স্বাধীন কণ্ঠস্বর হিসেবে দাঁড়াতে চাইছে লুক্সেমবার্গ।
বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, লুক্সেমবার্গ মতো ছোট দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোর সাথে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক গভীর করতে চায়। ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেওয়া আরব দেশগুলোর কাছে ইতিবাচক সিগন্যাল পাঠাবে—যা ভবিষ্যতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কেও সুবিধা দেবে। এছাড়া এই দেশগুলো মানবিক বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে বড় দেশের ছায়া থেকে বের হয়ে নৈতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
অনেক ইউরোপীয় দেশ মনে করে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের দিকে পক্ষপাতদুষ্ট। সেক্ষেত্রে ইউরোপের অনেক দেশ এখন নিজেদের আলাদা, ব্যালান্সড শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এর মাধ্যমে লুক্সেমবার্গ একধরনের কূটনৈতিক ব্যালান্সিংও করবে—যাতে পশ্চিমা জোটের বাইরে না গিয়েও সমালোচকদের কাছে নৈতিক অবস্থান ধরে রাখা যায়।
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পক্ষে একের পর এক পশ্চিমা দেশ অবস্থান নেওয়ায় আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে ইসরাইল। আর প্রথমবারের মতো সেটি স্বীকারও করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়, অবরুদ্ধ গাজায় চলমান যুদ্ধ ও তার সরকারের কট্টর ডানপন্থি নীতির কারণে আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে ইসরাইলের একঘরে এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন নেতানিয়াহু।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরাইলকেকে এখন স্বনির্ভর অর্থনীতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করার পর নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যকে একটি বড় ধরনের স্বীকারোক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: