যে কারণে হঠাৎ স্থগিত বাংলা একাডেমি পুরস্কারের তালিকা

ছবি: ফাইল ফটো
হঠাৎ স্থগিত করা হয়েছে বাংলা একাডেমি পুরস্কারের জন্যে ঘোষিত নামের তালিকা। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ তথ্য জানান। পরে বাংলা একাডেমি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তা নিশ্চিত করে।
উপদেষ্টা ফারুকী জানান, ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কারের জন্য ঘোষিত নামের তালিকা স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি এটাও বলা প্রয়োজন, যে আজব নীতিমালা এই ধরনের উদ্ভট এবং কোটারি পুরস্কারের সুযোগ করে দেয়, সেগুলা দ্রুত রিভিউ করা আমাদের প্রথম কাজ। পাশাপাশি বাংলা একাডেমি কীভাবে পরিচালিত হবে, কোন সব নীতিতে চলবে—এই সব কিছুই দেখতে হবে। একাডেমির আমূল সংস্কারের দিকে আমরা যাব এখন। দেশের সংস্কার হবে, বাংলা একাডেমির সংস্কার কেন নয়?’
পরে বাংলা একাডেমি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার কমিটির এক সভা আজ (শনিবার) সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উদ্ভূত সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং পুরস্কার-তালিকাভুক্ত কারও কারও সম্পর্কে কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় পূর্বঘোষিত ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪’ এর পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন সম্পর্কে আলোচনা হয়। উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। এই অবস্থায় বাংলা একাডেমি পুরস্কারের পূর্বঘোষিত নামের তালিকা স্থগিত করা হলো। অনধিক তিন কর্মদিবসের মধ্যে পুনর্বিবেচনার পর তালিকা পুনঃপ্রকাশ করা হবে।’
গত বছর এই জানুয়ারি মাসেই প্রায় এক যুগ আগে পাওয়া সাহিত্য পুরস্কারের অর্থ ও সম্মাননা স্মারক কুরিয়ারের মাধ্যমে বাংলা একাডেমিতে ফেরত পাঠিয়েছিলেন সাহিত্যিক জাকির তালুকদার। ধারণা করা হয়েছিলো জাকির তালুকদারের এমন প্রতিবাদে হুশ ফিরবে বাংলা একাডেমির। কিন্তু না, বিপ্লব পরবর্তী এই প্রতিষ্ঠানের সাহিত্য পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক সকল মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
অভিযোগ, এবার যাদের পুরস্কার দেয়া হবে তাদের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বই লেখা দুই লেখক দুজন ফারুক নওয়াজ ও মোহাম্মদ হান্নান পুরস্কার পেয়েছেন। এ দুজন লেখক আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। প্রশ্ন উঠছে, বাংলা একাডেমি কি এখন দলীয় পুনর্বাসনের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে?
পুরস্কারের বিচারক প্যানেলে দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমের এক সম্পাদকের ভাই রেজাউর রহমান কীভাবে পুরস্কার পেলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। একইভাবে, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ এ বছর পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলা একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমি একই মন্ত্রণালয়ের অধীন দুটি প্রতিষ্ঠান। তাই একজন প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে, বিশেষত যখন তিনি দায়িত্বে আছেন, পুরস্কার দেওয়া সঙ্গত কিনা, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
এবারের পুরস্কারের তালিকায় কোনো নারী লেখকের নাম নেই। এটি একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। শুধুমাত্র ড. সলিমুল্লাহ খানকে পুরুস্কার দিয়ে বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে চেয়েছে বাংলা একাডেমি।
এদিকে অমর ২১শে বই মেলায় ড. সরকার আমিনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারের দোসরের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া অভিজ্ঞতার বেড়াজালে আটকিয়ে ইসলামী প্রকাশনা ও জাতীয়বাদী প্রকাশনাকে স্টল বরাদ্দ দেয়নি মেলা কর্তৃপক্ষ। অথচ গত একযুগের বেশি সময় ধরে এসব প্রকাশনাকে আওয়ামী লীগ সরকারের দোসররা মেলা থেকে ষড়যন্ত্র করে দূরে রেখেছে।
২০২০ সালের আগ পর্যন্ত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা করা হতো সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। এরপর থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে কাজ সারছে একাডেমি। প্রশ্ন উঠেছে, সাংবাদিকদের এড়িয়ে যাওয়ার জন্যই সংবাদ সম্মেলন না করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পুরস্কার ঘোষণা শুরু করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। এ বছর পুরস্কারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয় রাত ১০টায়। এ বিষয়কেও বাঁকা চোখে দেখছেন অনেকে।
বিভি/এমআর
মন্তব্য করুন: