• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

মোহাম্মদপুরে ছিনতাই: সেই ভুক্তভোগীর কাছে পুলিশের দুঃখ প্রকাশ

প্রকাশিত: ১৯:৩৬, ২৫ জুলাই ২০২৫

ফন্ট সাইজ
মোহাম্মদপুরে ছিনতাই: সেই ভুক্তভোগীর কাছে পুলিশের দুঃখ প্রকাশ

মোহাম্মদপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ভুক্তভোগীর সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ আমলে নিয়ে চার পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই ঘটনার জন্য ভুক্তভোগী আহমাদ ওয়াদুদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।

শুক্রবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় ফেসবুক পোস্টে পুলিশ জানায়, আহমাদ ওয়াদুদ-এর ফেসবুক স্ট্যাটাস "মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের সাথে এক ঘণ্টা" তাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

ভিকটিমের ফেসবুক পোস্টে বর্ণিত অভিযোগ আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট চার পুলিশ সদস্য (এসআই জসিম, এসআই আনারুল, কনস্টেবল নুরুন্নবী ও কনস্টেবল মাজেদুল ইসলাম)-কে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

পোস্টে আরও বলা হয়, পুলিশ সদস্যের অসদাচরণের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।

ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার হয়েছে এবং তিনজন আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানানো হয় পোস্টে।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ছিনতাইয়ের শিকার হন আহমাদ ওয়াদুদ নামে 'বণিক বার্তা' পত্রিকার একজন কর্মী। দ্রুত থানায় গিয়ে অভিযোগ দেন তিনি ও তার স্ত্রী। কিন্তু পুলিশ তাদের যথাযথ সহায়তার পরিবর্তে উল্টো অসদাচরণ করে বলে তিনি অভিযোগ করেন। ঘটনার পর দিবাগত রাত ৩টা ২৪ মিনিটে ফেসবুকে ‘মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের সাথে এক ঘণ্টা’ শিরোনামে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন ওয়াদুদ।

তার ফেসবুক পোস্টটি ছিলো এরকম-
আজ রাত ১১টার দিকে মোহাম্মদপুরে আমার সাথে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীরা আমার একটি মোবাইল ফোন এবং কিছু টাকাপয়সাসহ মানিব্যাগ নিয়ে যায়। আমাকে চাপাতি দিয়ে কিছু আঘাত করে। সৌভাগ্যবশত আঘাত গুরুতর নয়। আমার সঙ্গে আমার স্ত্রী ছিলেন। একটু দূরে থাকায় তিনি নিরাপদ ছিলেন।

ঘটনাস্থল থেকে মোহাম্মদপুর থানার দূরত্ব ৩ মিনিট। আমি এবং আমার স্ত্রী ঘটনার ৫ মিনিটের মধ্যে থানায় যাই। সোজা ডিউটি অফিসারের রুমে গিয়ে বলি, ৫ মিনিট আগে তিন রাস্তার মোড়ে আমার সাথে একটি ছিনতাই হয়েছে। তারা আমাকে বললেন, একটু অপেক্ষা করেন। দেখছি।

ডিউটি অফিসারের নাম এসআই জসিম। তার পাশে সাদা পোশাকে একজন পুলিশ সদস্য কাগজে অন্য একজনের অভিযোগ লিখছেন। সাদা পোশাকের ওই পুলিশ সদস্য আমার দিকে আঙুল তাক করে উগ্রভাবে বলেন, আপনার শার্টের বোতাম লাগান। আমি তখনই খেয়াল করলাম, ছিনতাইকারীদের আঘাতের সময় আমার একটি বোতাম খুলে গিয়েছিল। আমি ওই অফিসারের কথায় আহত হলেও কোনো ঝামেলায় না গিয়ে সরি বলে বোতামটি লাগিয়ে নিলাম। এরপর তিনি আমাকে আমার সবগুলো বোতাম লাগাতে বললেন। আমার তখন শুধু টাই-বাটন, অর্থাৎ একদম গলার সঙ্গে থাকা বোতামটি খোলা ছিল, যেটা সাধারণত আমরা কখনো লাগাই না। আমি বললাম, প্লিজ আমার অভিযোগটি নিন।

তারা বললেন, অভিযোগ লেখার লোক নেই। আমি তাদের বললাম, আমি নিজেই লিখে দিচ্ছি। আমাকে একটি কাগজ দিন। তারা কয়েক মিনিট পর আমাকে একটি সাদা কাগজ দিলেন। আমি একটি কলম দিতে অনুরোধ করলাম। অফিসার বললেন, আমাদের এক্সট্রা কলম নেই। অথচ সেখানে অনেকগুলো কলম পড়ে ছিল।

যাহোক আমার স্ত্রী নিজের ব্যাগ খুঁজে আমাকে একটি কলম দিলেন। আমি সেটা দিয়ে আমার অভিযোগ লিখলাম। ডিউটি অফিসার আমার অভিযোগের কোনো কপি দিলেন না। শুধু আমাকে একটি ফোন নাম্বার দিয়ে বললেন, এটা এএসআই আনারুলের নাম্বার। উনি এখন নবোদয় হাউজিংয়ে ব্যস্ত আছেন। আপনি ফোনে উনার সাথে কথা বলেন।

আমি তখন তাকে বিনীতভাবে বললাম, আমার মনে হয় এখন ঘটনাস্থলে গেলে ওদের পাওয়া যাবে। দয়া করে এমন কাউকে বলুন, যিনি আমাদের সঙ্গে এখন সেখানে যেতে পারবেন।

এসআই জসিম আমার কথায় প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে বললেন, এটা সম্ভব নয়। ওই এলাকায় ইনি ছাড়া আর কেউ যেতে পারবে না। এটা তার এলাকা। আপনি এখান থেকে এখন চলে যান। ওখানে গিয়ে ছিনতাইকারীদের পাবেন না।

আমি বললাম, আমার ধারণা ওরা ওখানে এখনো আছে। তবে এসআই জসিম বললেন, আপনার কমন সেন্স নাই? ছিনতাইকারী আপনার-আমার জন্য বসে থাকবে নাকি? আমি তবু তাকে অনুরোধ করলাম, কাছেই যেহেতু, যেন একবার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়।

আমি সেখান থেকে বের হয়ে ওসি সাহেবের রুমে যাই। ওসি ইফতেখার হাসান সাদা পোশাকে ছিলেন। আমি তাকে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি বললাম। তিনি বললেন, আমি ওসি হয়েও এই কম দামি ফোন ব্যবহার করি, আপনি এত দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই!

আমি তার কথায় কোনো উত্তর দিলাম না। আমি তাকে অনুরোধ করলাম, যেন এখনই আমার ছিনতাইয়ের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেন। তিনি পুর্বোক্ত এএসআই আনারুলের সাথে যোগাযোগ করে আমাকে তার জন্য বাসস্ট্যান্ড মোড়ে অপেক্ষা করতে বলেন।

আমি বাসস্ট্যান্ডসহ মোট তিনটি পয়েন্ট ঘুরে এএসআই আনারুলের সাথে দেখা করি। তার সঙ্গে আরো সাত-আটজন পুলিশ সদস্য ছিল। আনারুল সাহেব আমার কথা শুনে বলেন, চলেন আমরা ঘটনাস্থলে যাই। আমি তার সঙ্গে গাড়িতে করে ঘটনাস্থলে যাই। এর মধ্যে প্রায় ৪০ মিনিট পার হয়ে গেছে। তবে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর আমি ওই ছিনতাইকারীদের সেখানেই বসে থাকতে দেখি। আমি দূর থেকে তাদের দেখিয়ে দিলেও এএসআই আনারুল সেখানে না গিয়ে একটু দূরে অন্য একটি জায়গায় গিয়ে কিছু লোকের সাথে কথোপকথন করেন। মিনিট দুয়েক পরে তিনি ফিরে আসলে আমি এএসআই আনারুলকে আবার ওই সন্ত্রাসীদের দেখিয়ে দিই। তবে আনারুল সেখানে না গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় সন্ত্রাসীরাও পুলিশসহ আমাকে দেখে আস্তে আস্তে ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে থাকে। আমি অবাক হয়ে এএসআই আনারুলের দিকে তাকিয়ে থাকি!

ওরা চলে যাওয়ার পর এএসআই আনারুল আমাকে বলেন, এখন তো ওদের পাওয়া যাবে না। আমরা গভীর রাতে এসে এখানে অভিযান চালাবো। আপনারা এখন বাসায় চলে যান।

আহমাদ ওয়াদুদের এই ফেসবুক পোস্ট মুহূর্তে ভাইরাল হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনার পর তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান, এডিসি জুয়েল রানার তত্ত্বাবধানে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান ও একাধিক টিম সরাসরি অভিযান পরিচালনা করে। শুক্রবার দুপুরে আলাদা অভিযানে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

এদিকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ ওঠায় মোহাম্মদপুর থানার চার পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছেন— এসআই জসিম উদ্দিন, এএসআই আনারুল এবং দুই কনস্টেবল মাজেদুর রহমান ও মো. নুরুন্নবী।

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2