• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

বিপর্যস্ত সুন্দরবন (পর্ব-১)

সুন্দরবনে হরিণ খাচ্ছে মুড়ি, আইসক্রিম পাগল বানর!

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ২১ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ১২:৫০, ২৪ মার্চ ২০২৩

ফন্ট সাইজ

হরিণ খাচ্ছে মুড়ি আর বানর কেড়ে নিচ্ছে আইসক্রিম। আইসক্রিম, চিপসসহ মানুষের নানান খাবার নিয়ে এখানে প্রতিনিয়ত চলছে বানরে-মানুষে কাড়াকাড়ি। এমন চিত্র বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের। দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক এই বনের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে এখন এমন চিত্র চোখে পড়বে অহরহ। 

সুন্দরবন ঘুরে দেখা যায়- করমজল, কলাগাছিয়াসহ এই বনের বিভিন্ন পয়েন্টে বসেছে মানুষের নানান খাবারের বাজার। সেখান থেকে চিপস, আইসক্রিম, চানাচুর, মুড়িসহ নানা খাবার কিনে বন্যপ্রাণীদের দেন পর্যটকরা। যা এসব খাবার গ্রহণে অভ্যস্ত করে দিয়েছে বনের প্রাণীদের। ফলে এখন কোনো পর্যটক খাবার কিনে না দিলেও তার থেকে ছিনিয়ে নেয় এইসব বন্যপ্রাণীরা। 

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দিচ্ছে খাবার

সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে হরিণের বেষ্টনির দেওয়ালে বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে বন্যপ্রাণীদের খাবার দেওয়া নিষেধ। তার সামনেই বসে হরিণের খাবার বিক্রি করছেন লাল মিয়া। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে কিভাবে প্রকাশ্যে খাবার বিক্রি করছেন জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, এই খাবার বিক্রি না করলে বা দর্শনার্থীরা খাবার না দিলে হরিণগুলো না খেয়ে মরবে।
  
এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. গুলশান আরা লতিফা বলেন, বানরেরা কখনোই হিংস্র নয়। কিন্তু মানুষ তাদেরকে হিংস্রতায় অভ্যস্ত করে দিয়েছে। মানুষ খাবার দিতে দিতে এবং নানান খোঁচাখুচি করে তাদের অভ্যাস খারাপ করে দিয়েছে। তাছাড়া বন বিভাগ সম্ভাবত এই প্রাণীদের পর্যাপ্ত খাবারের খাবারের ব্যবস্থা রাখেনি। তাই এরা এখন মানুষের কাছ থেকে খাবার ছিনিয়ে খাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পর্যটকরা এভাবে খাবার দেওয়ার কারণে বানরগুলো নিজে খাবার সংগ্রহের প্রথা ভুলে যেতে পারে। যা বনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।

এই নিষেধাজ্ঞা থোড়াই কেয়ার করছেন পর্যটকরা

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, আমরা যে চিত্র দেখেছি এটি নিঃসন্দেহে এলার্মিং। এখানকার বানরগুলো পুরোপুরি মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়ে গেছে। তারা মানুষের কাছ থেকে খাবার কেড়ে নিচ্ছে। এতে করে তাদের মধ্যে বন থেকে খাবার সংগ্রহ করে খাওয়ার প্রবণতা কমে আসবে। এতে পরবর্তীতে কোনো সময় পর্যটকরা না গেলে বা খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিলে প্রাণিগুলো চরম বিপদে পড়বে। 

চিপস, আইসক্রিমের মতো খাবারগুলোতে নানান কেমিকেল থাকে। যা এইসব প্রাণিদের উপযুক্ত নয়। তাছাড়া মানুষের দেহেও নানান জার্ম থাকে। এসব খাবারের মাধ্যমে সেগুলো বনের প্রাণিদের শরীরেও প্রবেশ করতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) এই নেতা।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুধু খাবার দেওয়া নয়, মানুষ বনে গেলেই প্রাণিদের ক্ষতি হয় দাবি করে বন অধিদফতরের সুন্দরবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত (খুলনা অঞ্চল) বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, মানুষ বনে গেলেই বন্যপ্রাণিদের টুকটাক ক্ষতি হয়। আপনি যে সুন্দরবন গিয়েছেন আপনার পায়ের সেন্ডেলে কোনো জার্ম ছিল না, সেটি বনে ছড়ায়নি এমন কোনো নিশ্চয়তা কি আছে। টুকটাক সমস্যা হয়ই। 

সব দেশেই পর্যটন কেন্দ্রে খাবার বিক্রির স্টল আছে দাবি করে তিনি বলেন, যেহেতু দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন তাই তাদের স্বার্থে আমরাও কিছু স্টল রাখতে দিয়েছি। তবে আমরা পর্যটকদের প্রাণিদের না খাওয়ানো নির্দেশনা দিয়েছি। তাদের সচেতন করারও চেষ্টা করছি। তবু কেউ কেউ আবেগ দেখিয়ে খাবার দিয়ে দেয়। এটা দেখে বলা যাবে না যে প্রাণিদের খাবার নেই বলে তারা মানুষ থেকে চাচ্ছে। এটা বানরদের কমন স্বভাব। তারা মানুষের কাছে চলে আসে। মানুষের কাছ থেকে জিনিসপত্র নিতে পছন্দ করে।

হরিণ মুড়ি খাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কলাগাছিয়ার ওই হরিণগুলো দীর্ঘদিন ক্যাভটিব ছিল। তখন মানুষ তাদের নানান খাবার দিতে দিতে এমন অভ্যস্ত করে ফেলেছে। এখন বেষ্টনী নির্মাণের কাজের জন্য এদের উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে তবুও এরা মানুষের আশপাশেই ঘুরে। মানুষ যা দেয় তা খায়। তবে নতুন বেষ্টনী নির্মাণ হয়ে গেলে এটা আর থাকবে না। 

হাইকোর্টের নিদেশনা অনুযায়ী ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে উপকূলীয় এলাকায় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ হলেও উপকূলীয় এই বনের কোথায় মানা হয় না নির্দেশনা। পয়েন্টে পয়েন্টে বিক্রি হচ্ছে সব প্লাস্টিক মোড়কজাত পণ্য। ফলে সুন্দরবনের যত্রতত্র তৈরি হয়েছে প্লাস্টিক আবর্জনা। যা পরিবেশের পাশাপাশি বন্যপ্রাণীদের জন্যও চরম ক্ষতিকর বলছেন, বিশেষজ্ঞরা।

দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন: সমুদ্র গিলে খাচ্ছে সুন্দরবন

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: