সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠন: ঐতিহাসিক বাস্তবতা

১৯৯৮ সালে চট্রগ্রাম মহানগরী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবির, ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ ঢাকায় এসে বেগম খালেদা জিয়া, হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ,অধ্যাপক গোলাম আযম ও আল্লামা আজিজুল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার করে ছাত্র ঐক্য গঠন করার পরামর্শ দেন।
এরপর ১৯৯৯ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের যৌথ প্যানেল ছাত্রলীগের বিপরীতে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে। এতে ছাত্রদল ভিপি (আশিক উর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম)সহ ৮ পদে,ছাত্রশিবির জিএস( সানাউল্লাহ মজুমদার), এ জিএস(শহিদুল ইসলাম) সহ ১১ পদে বিজয়ী হয়। রাত ১২টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসক নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে টালবাহানা করায় শিবির ও ছাত্রদলের নেতৃত্বে ডিসি বাংলো ঘেরাও করে ফলাফল ঘোষণা করতে বাধ্য করে।
নির্বাচিত নেতৃবৃন্দ ঢাকায় এসে বেগম খালেদা জিয়া, হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ, অধ্যাপক গোলাম আযম ও আল্লামা আজিজুল হকের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতৃবৃন্দকে( নাসির উদ্দীন পিন্টু,শাহাবুদ্দিন লাল্টু,এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, নুরুল ইসলাম বুলবুলকে সাথে নিয়ে সাক্ষাৎকার করে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠন করার পরামর্শ প্রস্তাব দেন।
এরপর বেগম খালেদা জিয়া ও অধ্যাপক গোলাম আজম এর একান্ত ইচ্ছায়,দেশ বাঁচাতে ছাত্র ঐক্য গঠন হয়।এরপর ২০০১ সালের শুরুতে সরকার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১০ টি ছাত্র সংগঠন নিয়ে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। ২০০১ সালের অক্টোবরে ৪ দলীয় জোটের বিজয় সেই আন্দোলনের ফসল।
নির্বাচনে বিজয়ী হবার পর ছাত্রনেতৃবৃন্দের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত ছিলো। ২০০৫ সালে ৬৩ টি জেলায় বোমা হামলার পর আবারো সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যকে চাঙা করা হয়।২০০৮ সালের নির্বাচনে ছাত্র ঐক্য ভূমিকা রাখে।সেনা সমর্থিত সরকার যদিও সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে কারচুপি করে ক্ষমতায় নিয়ে আসে।
আমি ২০০৫-২০০৬ সালে বি-বাড়ীয়া জেলা সভাপতি,২০০৭-২০০৮ সালে কুমিল্লা মহানগরী সভাপতি থাকাবস্থায় সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের সদস্য সচিব ছিলাম। আমরা জেলা সদর ও প্রতিটি উপজেলায় বড় বড় ছাত্র সমাবেশ করেছি।
২০০৯ -২০১০ সালে ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে সকল রাজনৈতিক দলের মহাসচিব ও ছাত্রসংগঠনের সাথে যোগাযোগ করে ছাত্র ঐক্য গঠন করার অনুরোধ করা হয়েছিল।২০১০ সালে চিন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ১ জানুয়ারি সম্মেলনে ১৯ টি ছাত্র সংগঠন অংশ গ্রহণ করেছিল।
সে সময় বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, জাতীয় পার্টীর কাজী জাফর আহমেদ, ইসলামী মোর্চার মুফতি ফজলুল হক আমিনী, জাগপা প্রধান শফিউল আলম প্রধান, পিনপি প্রধান শওকত হোসেন নিলু, খেলাফত মজলিসের মাওলানা ইসহকাকের সাথে শিবির সভাপতি রেজাউল করিম, সেক্রেটারি জেনারেল শিশির মনিরের নেতৃত্বে শিবির নেতৃবৃন্দ সাক্ষাৎ করে ছাত্র ঐক্য গড়ে তুলে জালিম সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে অনুরোধ করে।
জাতীয়বাদী ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দীন টুকু, শফিউল বারী বাবুর অনীহার কারণে ছাত্র ঐক্য আর আলোর মুখ দেখেনি। ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের সাথে আমি নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছিলাম ২০১১ সাল পর্যন্ত। ছাত্রদল ছাড়া বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের নিয়ে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে একাধিকবার।
দেশের মানুষের মুক্তি চাইলে আবারও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে ছাত্র সমাজকে। গড়ে তুলতে হবে সুদৃঢ় ঐক্য। কোনো বিভ্রান্তি কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই বয়ে আনবে।
লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা
(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: