• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

নির্বাচন দেশের, ভাবনা বিদেশের

মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিকী তালুকদার

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ১৫ নভেম্বর ২০২৩

আপডেট: ০০:৩৯, ১৬ নভেম্বর ২০২৩

ফন্ট সাইজ
নির্বাচন দেশের, ভাবনা বিদেশের

নির্বাচন সমাগত। ভিন্ন কিছু না ঘটলে বা গোলমাল না বাধলে সময় আছে মাস দুয়েক। জানুয়ারির প্রথম বা মধ্যভাগে হবে নির্বাচনটি। এ নির্বাচনেও যে জনগণ বা ভোটাররা ফ্যাক্টর হবে না তা এরইমধ্যে অনেকটা পরিষ্কার। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা ভারত কী ভাবে? তারা কে কোনদিকে? এসব হন্যে হয়ে খোঁজার একটি কাঙালিপনা চলছে বাঙালির মধ্যে। বাংলাদেশ কী ভাবে, সেই  হদিস নেই। 

এ বাস্তবতা বা নমুনা দেখেই বোধ হয় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের একটি বোমা ফাটিয়েছেন। তার মন্তব্য হচ্ছে- কেউ চাইলেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এবারও ইলেকশন নয়, সিলেকশনই হবে। জিএম কাদের নিজেও এর বাইরে নয়। বিশেষ করে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি এবং তার দলের সদস্যরা এই সিলেকশনেরই বেনিফিসিয়ারি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবার বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগাদা দিয়ে আসছে সেই বছর কয়েক ধরেই। ভারত ছিল এবার কিছুটা সংরক্ষণবাদী। তারা গেল দুবারের মতো ভূমিকা নিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে না বলে একটা ধারনা ছিল অনেকের। কিন্তু বেশ সময় ইনেয় সেই ধারনায় ছেদ ফেলেছে দিল্লি। 

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে। শুক্রবার ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের ‘টু-প্লাস-টু’ বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের বিদেশ সচিব ভিনয় কোয়াত্রা। তিনি বলেছেন, একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে সেদেশের মানুষ যেভাবে দেখতে চায়, সেই ‘ভিশন’কে ভারত কঠোরভাবে সমর্থন করে। তিনি এটাও বলেছেন, “বাংলাদেশের নির্বাচন সেদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং সেদেশের মানুষই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।“ ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকের পর বিশেষ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক। সেখানে এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব ভিনয় কোয়াত্রা জানিয়ে দেন, বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেদেশের মানুষ তাদের সংবিধান মতো নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ভারতের ম্যাসেজ পরিস্কার। আওয়ামী লীগ সরকারেরও এটাই চাওয়া, সংবিধান অনুযায়ি নির্বাচন। মানে তাদের অধীনেই নির্বাচন। গোলমাল তো এখানেই। দেশের বিরোধীমতের বেশিরভাগ দল চায় দলীয় সরকারের নয়, নিরপেক্ষ বা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাবিশ্বের তাগিদ সুষ্ঠু নির্বাচন। সরকার এতে কেয়ার করতে নারাজ। ভারতের সমান্তরালে চীনও চায় সংবিধানের আওতায় নির্বাচন। সরকার এতে অনেকটাই নির্ভার। 

যুক্তরাষ্ট্রকে এক হাত নেয়ার কাজে সরকার এখন আরো জোর পাচ্ছে। নানান কথাও রটাচ্ছে বেশ গর্বের সঙ্গে। দিল্লিতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দেন দরবারের সময় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকেও ডেকে নেয়া হয়েছে এমন রটনা বাদ দেয়নি। তা মোটামোটি বিশ্বাসও করিয়ে ছেড়েছে। এখন পিটার হাস এবং তার দেশ কী করে সেটা অপেক্ষা করে দেখার বিষয়। এর আগ পর্যন্ত মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে বলা হয়েছে, তাদের নজর আছে সেদিকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ধমক ছিল আরো কড়া। ধরপাকড়ের মাত্রা ও তীব্রতা নিয়ে ইইউ গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাবিশ্ব জাল অনেকটা গুটিয়ে এনেছে। দূর থেকে, কাছ থেকে – দুভাবেই দেখা প্রায় শেষ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র হাফ ডান বা আধাআধি কাজ করে না। হয় পুরো কাজ করে, নইলে করেই না। গায়ে মাখে না। কিন্তু, বাংলাদেশে কেবল গা মাখেনি, একদম লেপ্টে ফেলেছে। সরকার বিএনপিসহ কয়েকটি বিরোধীদল দমাতে গিয়ে নানা কাজে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে এক ধরনের যুদ্ধ ঘোষণা করে বসেছে। নানা আজেবাজে মেঠো মন্তব্যসহ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের অবশিষ্ট রাখেনি। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের জবাব কোমল-কুসুম। বাংলাদেশের জনগণ যা চায়, তারাও তা চায় জানিয়ে বলা হয়েছে, সহিংসতার যে কোনো ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্র অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্ব দেয়।  ঢাকায় তাদের একজন অভিজ্ঞ রাষ্ট্রদূত ও অবিশ্বাস্য প্রতিভাবান দল রয়েছে জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘আমরা পরিবেশ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছি’। 

চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতার পেটানোর প্রকাশ্য হুমকিকে 'অসহযোগিতামূলক আচরণ' বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল। সরকার এসব নিয়ে এখন আর ভাবছে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনাগুলো তারা খুব গুরুত্বের সাথে দেখছে জানিয়ে  মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, খুব কাছ থেকে দেখা হচ্ছে নির্বাচনী পরিবেশও। এমন একটি ঝড়ের আভাস সরকারের কাছেও ছিল। অগ্নিসন্ত্রাসের ভিডিও বিদেশি কূটনীতিকদের দেখিয়ে সুবিধা করতে পারেনি সরকার। সরকারের এডিটেড ফুটেজ দেখানোর ঢের আগেই ওইসবের র’ ফুটেজ চলে গেছে কূটনীতিকদের কাছে। তাতেও এখন আর ভয়ের কিছু দেখছে না সরকার। দিল্লি আছে আমরা আছি- এ বার্তা সগর্বে আগেই দিয়ে রেখেছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদতক ওবায়দুল কাদের।

এরই মধ্যে চীনেরও  সরকারকে অনেকটা ব্ল্যাঙ্ক চেয়ার মতো অবস্থা। অন্তত ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের ম্যাসেজ এমনই। আসন্ন নির্বাচনের পরে দ্রুত স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে আশা করে তিনি বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে নির্বাচনের ইঙ্গিত করেছেন। সেইসঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, চীনা বিনিয়োগকারীদের পছন্দের জায়গা হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশে চীনের ব্যাপক বিনিয়োগের কথা উল্লেখ করে আরো বিনিয়োগের আশ্বাসও দেন। চীনের এমন ভূমিকা বাংলাদেশের প্রধানবিরোধীদল বিএনপির জন্য বড় কষ্টের ও পীড়ার। কারণ তারাই ছিল বিএনপির ঐতিহাসিক মিত্র। চীন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বীকৃতিও দিয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের মিতালির সূচনা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। বিএনপির কিছু ভুলের সুযোগ নিয়ে সেই চীনকে আয়ত্ব করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই বেদনা এখন হজম করা ছাড়া গতিও নেই বিএনপির। দল থেকে চীনা রাষ্ট্রদূতের সেদিনের সরকারঘেঁষা বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়েছে শনিবার। 

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2