• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ২০ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

মোদির গদি: দিদিতে যদি

মোস্তফা কামাল

প্রকাশিত: ০০:৪০, ১০ মে ২০২৪

ফন্ট সাইজ
মোদির গদি: দিদিতে যদি

মোস্তফা কামাল

ভারতের বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য সময়টা বেশ টলটলে। কেবল টলটলে নয়, এর চেয়ে টলমলে পরিস্থিতি উৎরানোর হিম্মতও মোদি অনেকবার দেখিয়েছেন। অনেককে অবাক-হতবাক করে চমকিতভাবে কামিয়াবিও হয়েছেন। এবার চিত্র খানিকটা ভিন্ন। নানান যদি, তবে, কিন্তুর ওপর নির্ভর করছে গোটা পরিস্থিতি। এরপরও হাল ছাড়ছেন না রাজনীতি-কূটনীতির এই পাক্কা ম্যাজিশিয়ান। এরই আংশিক ম্যাজিক মালদ্বীপ থেকে অর্ধেকের বেশি ভারতীয় সেনা সরিয়ে আনা। মালদ্বীপের পক্ষ থেকে শুক্রবারের মধ্যে অর্ধেক সেনা সরিয়ে নেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। 

এর আগেই কাজটি সেরে ফেলেছেন মোদি। এ নিয়ে বিশ্লেষণ দু’রকমের। তিনি পিছু হটলেন, না-কি নয়া কোনো কৌশল নিলেন?-ঘুরছে প্রশ্নটি। গেল বছর ভারতবিরোধী শক্ত অবস্থানের সাফল্যে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাজিমাত করেন মোহামেদ মুইজ্জু। এরপর তিনি দীর্ঘদিনের মিত্র ভারতকে ছেড়ে আরও ঝুঁকে পড়েন চীনের দিকে। মুইজ্জু ও তার দলের অভিযোগ, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে মালদ্বীপকে ছারখার করে দিয়েছে ভারত। অভিযোগ পর্যন্তই নয়, দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙে দিল্লি সফর বাদ দিয়ে বেইজিং সফর করেন মুইজ্জু। এর সুফলও পান তিনি। তার দল সংসদ নির্বাচনেও ভালো করেছে। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে ভারতের বলয় থেকে বেরিয়ে চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠতার নজির তৈরি হয়েছে।

ভারত মহাসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে ভারত। মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশে চীনের প্রভাব সেই উদ্বেগে বাড়তি টোকা ফেলেছে। সময়টাও একটা ফ্যাক্টর। ভারতে চলছে লোকসভা নির্বাচন। শেষ হওয়া দফাগুলোতে ভোটারদের মনোভাব ও পারিপার্শ্বিকতা মোদির দল ক্ষমতাসীন বিজেপির জন্য উদ্বেগের। তাদের আত্মতুষ্টিতে ছেদ পড়েছে। ভোট শেষ হবে ১ জুন, ফলাফল ঘোষণা হবে ৪ জুন। ভারতের নির্বাচন কমিশন-ইসি সাত ধাপে সব আসনে ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের আগাম জরিপের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। কিন্তু মোদির আচরণ, ভাষা, ভাবভঙ্গির অস্থিরতার খবর চাপা থাকছে না। তার মুসলিমবিরোধী কিছু বক্তব্যের ঝাঁঝ কেবল ভারত নয়, আশপাশের দেশগুলোতেও পড়েছে। ’কংগ্রেস সরকার গঠন করলে ভারতে হিন্দুদের জমিজমা, সহায়-সম্পত্তি মুসলমানদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে দেবে’। 

মুসলমানদের ভারতীয় না বলে ‘অনুপ্রবেশকারী’ ও ‘গন্ডায় গন্ডায় বাচ্চা পয়দা করা লোক’ বলেও মন্তব্য করেছেন মোদি। কম কথার মানুষ অমিত শাহও কম যাননি। তিনি বলেই ফেলেছেন, বিজেপি হেরে গেলে ভারতে শরিয়াহ আইন চালু হয়ে যাবে। যা মোদি-অমিত শাহর অস্থিরতার প্রকাশ। কংগ্রেসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ, দলটির নেতা রাহুল গান্ধীর হেলিকপ্টারে তল্লাশি, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে কয়েদ করার মতো নিম্নমানের বাঙালিপনা ভারতের রাজনীতিতে নতুন সংযোজন। যা সাধারণ ভোটারদের তুষ্ট করার বদলে আরও রুষ্ঠ করেছে। 'প্রার্থী নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেই ভোট দিন'—এটাই বিজেপির মুখ্য প্রচারণা। মোদিই স্থিতিশীল হিন্দু ভারতের প্রতীক—সেটাই বিজেপি প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে।

পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি তো আগে থেকেই গোলমেলে। সেখানে লোকসভার আসন ৪২টি। উত্তর প্রদেশের ৮০টি ও মহারাষ্ট্রের ৪৮টি আসনের পরেই তৃতীয় বৃহত্তম সংসদীয় আসনের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। এই রাজ্যের বিধানসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ২০১৩ সাল থেকে টানা তৃতীয়বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতীয় রাজনীতিতে উল্কাসম, আন্দোলনের মাঠ গরম করতে কীর্তিমান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে লড়াই করছে বিজেপি। বিধানসভার ভোটে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একচ্ছত্র দাপট থাকলেও লোকসভায় গত নির্বাচনে ৪২টির মধ্যে বিজেপি ১৮টি আসন পেয়ে চমক তৈরি করে। সেখানকার মধ্যমণি দিদি মমতাকে আগে থেকেই চটিয়ে রেখেছেন মোদি। এবার তা আরও বেশি। মমতাকে বার বার দিদি-দিদি উচ্চারণে ভক্তির বদলে এক ধরনের ইয়ার্কি-মশকরা করছেন মোদি। নিয়মিত তাচ্ছিল্য করছেন আরও নানান শব্দ ও ভাষায়। বিরোধ থাকলেও আগে তা করেননি। 

এবার দিদি মমতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ৩৫টির বেশি আসন নেবে বলে নির্বাচনী প্রচারণা জোরদার করেছে মোদির দল। ব্যাপক ব্যবহার করছে সরকারের এজেন্সিগুলোকে। ইডি, সিবিআই, আয়কর বিভাগ পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলকে হয়রানি করছে মাত্রা ছাড়ানো পর্যায়ে। আবার মমতার দিক থেকেও ভিন্নতা। অন্যান্য রাজ্যে কংগ্রেস, বামপন্থী, তৃণমূলসহ আঞ্চলিক দলগুলোর সমবায়ে গঠিত ‘ইন্ডিয়া জোট’ বিজেপির মোকাবিলা করলেও পশ্চিমবঙ্গে ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। এখানে সম্মিলিত বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া জোট’ ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনে লড়তে ব্যর্থ হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের সঙ্গে ঐক্য করতে রাজি হননি। এখানে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট যৌথভাবে নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে। 
এর বিপরীতে তৃণমূল কংগ্রেসও বাংলার মেয়ে, মা-মাটির প্রতীক, লড়াকু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নির্বাচনে মুখ্য ফোকাস হিসেবে নিয়ে প্রচারণায় নেমেছে। বহিরাগতদের ঠেকাতে স্থানীয় দিদি মমতাই পশ্চিমবঙ্গের ভরসা, একমাত্র মমতাই পারে বিজেপিকে ঠেকাতে- এটাই তৃণমূল কংগ্রেসের মূল আপিল ভোটারদের কাছে। ‘ব্র্যান্ড মোদি’র বিপরীতে ‘ব্র্যান্ড দিদি’র এ লড়াই শেষতক মোদির কপালে কোন তিলক ফেলবে-সেই দোদ্যমানতাও চক্কর দিচ্ছে। সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের ভোটপ্রত্যাশী বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস ভোট ভাগাভাগি কাকে লাভবান করবে, সেটা জটিল হিসাব। পশ্চিমবঙ্গে পুরো সাত ধাপেই ভোট হবে। এর লক্ষ্য হচ্ছে, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক ও রাজ্যপ্রশাসন শক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। যদি তৃণমূলের মাঠপর্যায়ের বিস্তৃত শক্তিকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে বিজেপি, সেটা তাদের পক্ষে যাবে। ‘জিতে যাচ্ছে’ এই হাইপ তোলার চেষ্টা করছে বিজেপি—নানারকম এক্সিট পোলের ফল ও নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া দিয়ে। সেই হাইপ ঠিকমতো প্রভাব ফেললে, সংখ্যালঘু মুসলমান ভোট একাট্টা হতে পারে। এই ‘বিজেপিফোবিয়া’ কাজ করলে মুসলমান ভোটের এই মনোভাব তৃণমূলের দিকেও যেতে পারে।

অন্যবারের মতো এবারও সব হিন্দুভোট নিজেদের দিকে টানতে বিজেপি ভরসা রাখছে ধর্মের ওপরে। গত ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর দেশজুড়ে একটা সার্বিক ধর্মীয় আবহাওয়া তৈরি করতে সচেষ্ট হয়েছে বিজেপি। লাখো মানুষকে অযোধ্যায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেখানে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে, তা দেখাতে। যাতে তারা ফিরে সমাজকে জানাতে পারেন অযোধ্যায় দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, বাংলায়ও এই পরিবর্তন আনতে হবে। এই সাম্প্রদায়িক হাওয়াকে নির্বাচনের আগে বহু গুণে কাজে লাগাতে সচেষ্ট হয়েছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ-আরএসএস। সব মিলিয়ে এবারের লোকসভা নির্বাচনোত্তর ভারতীয় রাজনীতির অঙ্গনেও এক নতুন ঢেউয়ের সূচনার আলামত। এ ঢেউ পৃথিবীর অন্যতম বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের স্থানিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভবিষ্যৎ সাগরে না নদীতে নেবে- এ জিজ্ঞাসাও আছে। 

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন 
 

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2