খবরদার! তাদের বিরুদ্ধে বলে রাষ্ট্রদ্রোহী হবেন না

একজন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শকের সীমাহীন দুর্নীতি ও জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদের তথ্য দেশের কয়েকটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলে তাকে নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের টাকায় পোষা রাষ্ট্রের একজন কর্মচারি হয়ে তিনি কখন, কিভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় এসব সম্পদ অর্জন করেছেন সেটি সবারই জানা।
এ সম্পদ অর্জন করতে গিয়ে হয়ত কাউকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে ভিত্তিহীন প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে হয়েছে, কাউকে চুক্তি করে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সৃষ্টি করে হত্যা করতে হয়েছে আবার কারো নামে শত শত মিথ্যা মামলা দিয়ে জর্জরিত করতে হয়েছে ইত্যাদি। এছাড়াও পুলিশ বিভাগের বদলি বাণিজ্য তো আছেই।
কিন্তু এ আইজিপির কৃতকর্মের মাধ্যমে যে সকল ব্যক্তিদের বিচার কার্য সম্পন্ন হয়েছে, তাদের কার কী অবস্থা এ ব্যপারে কি কোন খোঁজ খবর নেয়ার চেষ্টা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে করা হয়েছে? দায়িত্বের আড়ালে কর্মরত থাকা অবস্থায় এ আইজিপির মত একজন কর্মচারির রোষানলে পড়ে যাদের জীবন শেষ হয়ে গেছে, যাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে গেছে, যারা এখনও জিন্দা লাশ হয়ে বেঁচে আছে, তাদের হারানো অর্থ, জীবন, সম্মান ও তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া অপবাদ কী ফিরিয়ে দেয়া যাবে? এ প্রাক্তন আইজিপিকে হয়ত কয়েক হাজার বার ফাঁসি দিলেও তার কৃতকর্মের মাধ্যমে ভূক্তভোগী অনেকের ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব হবে না।
কিন্তু বর্তমানে পুলিশে এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে যে কর্মচারিরা কর্মরত আছে, তাদের জন্য নতুন আইন প্রণয়ন, তাদের সতর্ক করা এবং তারা অর্পিত দায়িত্ব যথাযত ভাবে পালন করছে কিনা তার খোঁজ রাখা কিন্তু অবশ্যই সম্ভব। একই সঙ্গে প্রাক্তন এ আইজিপির কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের ক্ষতি যতটুকু সম্ভব পুষিয়ে দেয়া অথবা যারা বিচার ব্যবস্থায় অন্যায়ের শিকার হয়ে যাদের স্বজন হারিয়েছে তাদের শান্তনা দেয়াও সম্ভব। কিন্তু রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কি সেটি করা হচ্ছে?
অথচ একজন পুলিশ কিংবা রাষ্ট্রের যেকোন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকালে কোন জনগণ যদি রাষ্ট্রের কর্মচারিদের অপকর্মের ব্যপারে প্রতিবাদ করে তার জীবন পরোক্ষভাবে তছনছ করে দেয়া হয়। তাকে পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে, ব্যাগে ফেনসিডিল ঢুকিয়ে এবং বিভিন্ন মামলার চার্জশিটে নাম ঢুকিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া হয়। আবার সুযোগ বুঝে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলাও দেয়া হয় তথাকথিত রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন মালিক জনগণের বিরুদ্ধে। কী হাস্যকর! এখানে রাষ্ট্রের মালিকরা রাষ্ট্রদ্রোহী আর কর্মচারিরা দেশপ্রেমিক।
অথচ অর্থনৈতিক দূরবস্থার কারণে দেশে যখন দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, অভাবের কারণে বাবা সন্তান বিক্রি করে দেয়, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, খরাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করে তখন রাষ্ট্রের কর্মচারিদের বেতন-ভাতা বাকি রাখা হয় না। বেতন কমানোও হয় না। দেশের মানুষের রক্ত-ঘাম পানি করে প্রদান করা হয় এ কর্মচারিদের বেতন।
যেখানে জনগণকে সংবিধানে রাষ্ট্রের মালিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, বলা হয়েছে জনগনেরই হাতে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা, সেখানে জনগণই দেশের থানাগুলোতে প্রবেশ করতে ভয় পায়। স্বয়ং আদালতের এজলাস কক্ষেও বিচারপ্রার্থী জনগণকে চেয়ার থেকে উঠিয়ে পুলিশ সদস্যদের জন্য চেয়ার খালি করে দেয়া হয়। সাধারণ জনগণের কাছে পুলিশ, আতঙ্ক ও ভয় এসব যেন একে অপরের প্রতিশব্দ। দেশের বেশিরভাগ পুলিশ স্টেশনই এখন বিভিন্ন অপকর্মের আখড়া। দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধীরা মাদকসহ বিভিন্ন চোরাচালান ও অপকর্ম কিন্তু পুলিশকে কমিশন দিয়েই সম্পাদন করতে হয়। আবার পুলিশের ইচ্ছাই সে কমিশন ওঠানামা করে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেখানে পুলিশ শব্দটি শুনলে মানুষের মনে স্বস্তি ও নিরাপত্তা অনুভব হয় আমাদের সোনার বাংলায় পুলিশ শব্দটি শুনলেই অপরাধী ও নিরপরাধ সবারই গলা শুকিয়ে যায়। নিরপরাধীরা আতঙ্কে থাকে কখন আবার তার ঘাড়ে কোন অভিযোগ চাপিয়ে শুকনো ঝামেলায় ফেলা হয়। সহস্র শহীদের রক্তেভেজা সোনার বাংলায় ‘পুলিশ আসছে’ বলে ছোট বাচ্চাদের কান্না থামানো হয়, ঘুম পাড়ানো হয়।
লেখক: সংবাদকর্মী
(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: