উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চলতি বন্যা পরিস্থিতি : একটি এসেসমেন্ট
বন্যা তথ্য: ১৮ জুন, ২০২৪ইং।
আগামী ৭২ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা, সারিগোয়াইন, সোমেশ্বরী, যাদুকাটা, ঝালুখালি, পুরাতন-সুরমা নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। সুনামগঞ্জ জেলার নদীবিধৌত আরও কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
নেত্রকোনা জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চল ও মৌলভীবাজার জেলার কুশিয়ারা নদীবিধৌত নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিপদাীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত কয়েকটি স্টেশন:
কানাইঘাট (সুরমা) +১৩৩ সে.মি.
সিলেট (সুরমা) +২২ সে.মি.
সুনামগঞ্জ (সুরমা) +৬৭ সে.মি.
বন্যা পূর্বাভাস ওয়েবসাইট: http://ffwc.gov.bd/
বন্যা বুলেটিন: http://ffwc.gov.bd/images/fbull.pdf
উপরের তথ্য বন্যা পূর্বাভাস ওয়েবসাইট থেকে নেয়া:
কুরবানীর ইদ গেল গতকাল ১৭ জুন তাবিখ, বন্যার কারনে উপদ্রুত এলাকার লোকজন অনেকেই ইদের নামাজ পড়তে পারেন নাই এবং কুরবানী করতে পারেন নাই - কারন শুকনা স্থান নাই। আজ ১৮ জুন পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। আজকের আবহাওয়া তথ্য জানাচ্ছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়ে আগমী ৫ দিন বা ৭ দিন ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে, যা কিনা বাংলাদেশের ঐ এলাকায় বন্যা মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেবে।
লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো ভাটিতে কিশোরগঞ্জ জেলায় কিন্তু বন্যা পরিস্থিতি নাই, মানে কিশোরগঞ্জ এবং ভৈরবে পানি সমতল অনেক নীচে। মানে সিলেট সুনামগঞ্জের পানি খলিয়াজুরী হয়ে ভৈরব পর্যন্ত আসতে পারছে না। ভাগ্য ভালো যে বন্যা হচ্ছে জুন মাসের শেষে, যা এপ্রিলে বা মে মাসের প্রথম দিকে হলে হাওরে ব্যাপক ফসল হানি হতো।
২০১৭, ২০২২ এবং চলতি বছর ২০২৪ এই মাত্রায় বড় বন্যা দেখা গেলো। বলা যায় সম্প্রতি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বড় বন্যা ঘন ঘন হচ্ছে। এই এলাকায় বন্যার প্রধানতম কারন উত্তরে উজানে মেঘালয় পাহাড়ে ধারাবাহিক অতি বৃষ্টি।
তবে বিবেচনা করে দেখতে হবে, বন্যা কেন সিলেট সুনামগঞ্জে হচ্ছে, ভাটিতে তার তেমন প্রভাব পড়ছে না। মানে খালিয়াজুড়ি বা ভৈরব পর্যন্ত কেন সিলেট সুনামগঞ্জের পানি আসতে পারছে না।
নীচের বার চাের্ট (bar Chart) দেখানো হয়েছে সিলেট সুনামগঞ্জের তুলনায় খালিয়াজুড়ি এবং ভৈরবের পানি সমতল (Water Level)। দেখা যাচ্ছে ঐ দিন সিলেটের তুলনায় ভৈরবে পানি সমতল ৭.৯ মিটর কম বা নীচে আর সুনামগঞ্জের তুলনায় ভৈরবে ৪.৯ মিটর নীচে। আর শেষ গ্রাফে দেখা যােচ্ছ ১৭ এবং ১৮ জু তারিখের ঐসব স্থানে Water Level, যা দেখে বোঝা যাচ্ছ উজানে সিলেট সুনামগঞ্জে একদিনে ২৪ ঘন্টায় পানি বৃদ্ধি দৃশ্যমান হলেও খালিয়াজুরি এবং ভৈরবে বৃদ্ধি প্রায় নাই। আমরা জনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব পানি নেমে যাওয়ার একমাত্র পথ ভৈরব হয়ে ভাটির দিকে চাঁদপুর > বঙ্গপোসাগর। ২০২২ এর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচে প্রলয়ংকরী বন্যার সময়ও দেখা গেছে সিলেট সুনামগঞ্জের তুলনায় ভৈরবে পানি সমতল উল্লেখযোগ্য পরিমানে কম। পানি দ্রুত ভাটিতে খালিয়াজুড়ি এবং ভৈরবে নেমে গেলে উজানের সিলেট সুনামগঞ্জে এত বড় মাত্রার বন্যা হতো না।
লেখক: সাবেক প্রধান প্রকৌশলী
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড
বিভি/পিএইচ
মন্তব্য করুন: