• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

তোফায়েল ক্যাডার থেকে আবেদালী ক্যাডার

মোস্তফা কামাল

প্রকাশিত: ১০:৫২, ১২ জুলাই ২০২৪

ফন্ট সাইজ
তোফায়েল ক্যাডার থেকে আবেদালী ক্যাডার

কান টানলে এখনো মাথা আসে। কেঁচো খুড়তে গেলে সাপ বেরুয়। দিন কয়েক আগে মতিউরপুত্রের ছাগল ধরে টান দেয়ায় বের হয়েছে ব্রাহামা জাতের গরুর বাছুর। কিন্তু, বাছুরগুলোর মা-বাবা অধরা-অজানা।এখন কোটার বোটায় টানাটানি। কে বেশি পাচ্ছে, কম খাচ্ছে, কার পাতে বেশি পড়ছে –কতো যেকথামালা।

চুলকানিটা বেশি গিয়ে পড়ছে মুক্তিযোদ্ধা কোটার দিকে। তারওপর কখনো কোটা সংস্কার,কখনো কোটা বাতিল। আইন-আদাল তো আছেই। এসব টানাটানিতে সামনে একটা মূর্তিমান আস্ত আবেদ আলী। এই আবেদ আলী কোটায় যে গত বছর কয়েকে কতোজন ঢুকেছে সেই ধারনাও নেই অনেকের।

দেশ স্বাধীনের পর ওপেন সিক্রেটভাবে সূচনা হয় তোফায়েল ক্যাডারের। জননেতা তোফায়েল ক্যাডারের সবাই পরিচিত। নাম ধরে ধরে তাদেরকে মানুষ চেনে। কিন্তু আবেদালী বিসিএস কারা,তাদের চেনা একটু কঠিন। মেয়াদ শেষ হতে হতে তোফায়েল ক্যাডারের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে কবেই। ঘটনা ও রাজনৈতিক ঘটনার পরম্পরায় তোফায়েল আহমেদের নাম জড়ানো ক্যাডারটি খবরদারিসহ প্রশাসনে ওই ক্যাডারটি অনেক কিছু করেছে। কেঁচো পাওয়ার পর আমাদের সাপ খোঁজা হয়ে ওঠে না। সাপ ছাড়া
কেঁচোরা এতো বাড় বাড়ে না। 

শুধু কোটা সংস্কারকে ফোকাস করে সাময়িক আন্দোলন সাপ পর্যন্ত যাবে না। এক সময় কোটা উঠেও যেতে পারে। প্রশাসন বা ক্যাডার তো থাকবে। নিয়োগও হবে। রাজনৈতিক প্রভাব, প্রশ্ন ফাঁস, উত্তরপত্র জালিয়াতি ইত্যাদির মাধ্যমে নিয়োগের কী হবে? দুয়েকটি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে আবেদালীরা বিল গেটস হয়নি। কোটা আন্দোলনকারীদের দাবি আদালতের কাছে নয়, সরকারের কাছে। বিশেষ করে সরকারের নির্বাহীবিভাগের কাছে। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া আন্দোলনটা ছিল কোটা সংস্কারের, কোটা বাতিলের নয়।সরকারি চাকরিতে মাত্রাতিরিক্ত কোটাব্যবস্থাই এর মূল কারণ। এই মাত্রাতিরিক্ততা অনেকটাইঅযৌক্তিক পর্যায়ে। যে কারণে সংস্কারের আবশ্যকতা। কিন্তু, সরকারের নির্বাহী বিভাগ সংস্কারনা করে একবারে বাতিলই করে দেয়। এতে বাধে আরেক বিপত্তি। রাজনীতির চেয়েও বেশি রাজনীতি বাঅতিরাজনীতির জেরে জটিলতা আরো বাড়ে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ কয়েকটি শ্রেণি এর বিরোধীতাকরে। পরে যথাকোটা আবার বলবত করে দেয়া হয়। গোটা বিষয়টিই হয়ে যায় লেজেগোবরে। হতে হতে এখন হয়েগেছে আদালতি বিষয়। এমন একটি সরকারি বা রাজনৈতিক বিষয়কে আদালতে টেনে নিয়েযাওয়ার দুষ্টরাজনীতি সামগ্রিক পরিস্থিতিকে আরো জটিলতায় নিয়ে গেছে। তারওপর বিষয়সুচি চলে গেছে আবেদ আলীতে। এমনিতেই তালিকা, ভাতা, কোটা ইত্যাদির নামে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের মুক্তিযোদ্ধাদের বিতর্কিত ও ছোট করার আর কিছু বাকি রাখা হয়নি। বছর কয়েক ধরে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলতে ছেলে-মেয়ে নয়, নাতিপুতি। এ নিয়ে রয়েছে চিকন রাজনীতি। তারওপর মুক্তিযোদ্ধা বলতে আসল না নকল-এ অপমানজনক প্রশ্ন রয়েছে। যা তাদেরকে এই প্রজন্মের প্রতিপক্ষ করে দিয়েছে। ব্যাপারটি গড়িয়েছে মেধা বনাম কোটায়। সেইসঙ্গে নানা মন্দ কথা তো আছেই। নকল-ভুয়া, মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানদের নিয়ে সমালোচনার তীর গিয়ে পড়ছে একেবারে মুক্তিযুদ্ধের ওপর। আর এই সুযোগে প্রশ্নফাঁস কোটা চেপে বসেছে।

হালে ঘটনাচক্রে ফাঁস হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে চলা আবেদ আলী কোটা। যে কোটায় এ পর্যন্ত কতোজনের কতোভাবে চাকরি হয়েছে, গুণে শেষ করার মতো নয়। আবেদ আলীর হাত ধরে কতোজন বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। বিভিন্ন ক্যাডারে তারা এখন উচ্চাসনে। ২৫তম ব্যাচে প্রশ্নফাঁস বিষয়টি ধরা পড়ে। এই ড্রাইভার আবেদ আলীর নেতৃত্বে একটি গ্রুপ সাফল্য এবং স্মার্টনেসে এ কাজ করেছে। কাস্টমার যোগাড় করেছে দক্ষতার সাথে। প্রার্থীদের বিভিন্ন জায়গায় রেখে দুয়েকদিন আগে প্রশ্নপত্র দেওয়া হতো। পরে পরীক্ষায় তারা উচ্চ নম্বর পেত। ওই সময় দলীয় নেতাদের তালিকাও আসতো। তালিকা অনুযায়ী টাকা নেয়া হতো। নিজেদেরটা রেখে নেতাদের ভাগ দেয়া হতো। স্বাস্থ্যের আলোচিত ড্রাইভার মালেক, ঠিকাদার মিঠুও বিশ্বস্ততার সাথে এ কাজ করতো মেডিকেল সেক্টরে। কেবল চাকরি নয়, পোস্টিং, পদ-পদায়নও চলতো। এ কাজে শত শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন আবেদ আলীরা। আর বিসিএসসহ উচ্চমানের চাকরিতে ধন্য হয়েছেন হাজার হাজার জন। তারা এখন বিভিন্ন সেক্টরে এক একজন মহোদয়-মহাশয়।


আবেদ আলীদের কাণ্ডকীর্তি একেবারে অজানা ছিল না। এক দশক আগে পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীকে প্রশ্নপত্র ফাঁস সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে চিহ্নিত করেছিল থানা-পুলিশ। তখন সৈয়দ আবেদ আলীকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্রও দেওয়া হয়েছিল। তাতে কি? তাকে বাঁচানোর কতো শক্তিমান কর্তা বসে আছেন পদে পদে। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে পাবলিক পরীক্ষা আইনে করা মামলায় ২০১৪ সালে সৈয়দ আবেদ আলীসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জসিট দেয় শেরেবাংলা নগর থানা-পুলিশ। ৯ বছরে এ মামলার ১২ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র দুজন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে রাষ্ট্রপক্ষ। ফলে আবেদ আলীর বিচারও হয়নি। এতে তার মার্কেটিং ও এ কাজে দক্ষতার সুনাম আরো ছড়িয়ে পড়ে। কাস্টমার আরো বাড়তে থাকে। অন্যদিকে, রাস্তায় চেচাচ্ছে মেধাবী এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। তারা মালুমও করতে পারছেন না, তাদের বিবাদে ব্যস্ত রেখে মধূ খাচ্ছে ডিজিটাল জমানার এক উপাখ্যান এই আবেদ আলীরা।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন

বিভি/এমএফআর

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2