এবার চাঁদাবাজির দায়িত্ব কে নেবে?
গত দেড় যুগ ধরে নদী, চর, অটোরিকশা, পাবলিক টয়লেট থেকে শুরু করে ড্রেন পর্যন্ত দখল করে চাঁদাবাজি করেছে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের লোকজন। তবে শেখ হাসিনার পতনের দু'এক সপ্তাহ যেতে না যেতে ভ্রাম্যমাণ বাজার, পরিবহণ থেকে সব জায়গায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাঁদাবাজ নিয়োগ হয়ে গেছে। লোক পরিবর্তন হলেও থেকে গেছে আমাদের সেই চিরচেনা অভ্যাস ও রীতিনীতি।
দেশের আদালতের কর্মচারি, রেজিষ্ট্রি অফিস, ভূমি অফিস, রাজস্ব অফিস, এমনকি হাসপাতালে সিট পেতেও এখনও গুনতে হচ্ছে টাকা। সরকারের কর্মচারিরা এখন নিজের দায়িত্ব পালনের চেয়ে মানুষের উপকার করে বেশি। যার কারণে মানুষ তাদের নাকি খুশি হয়েই এসব দেয়। সরকারি অফিসগুলোর বিশেষ করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারিদের কাছে তো ঘুষ শব্দটি ছোঁয়ানোই যায় না। ঘুষ না নেয়ার কথা বললেই বলে, এখন মানুষের উপকার করলেই বুঝি যত দোষ...
এদিকে বিএনপির নেতারাও জোর গলায় বলছেন বিএনপির নামে কেউ চাঁদাবাজি করলে তাকে ধরিয়ে দিতে। কিন্তু শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর পরই একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দখলে নিতে যায় এক বিএনপি নেতা। এরপর সেখান থেকে ২-৩ কোটি টাকা চাঁদা নিয়ে দু'দিন পর সেই নেতা আবার ইসলামী ব্যাংক দখলে গেলেও উত্তম-মাধ্যম খেয়ে ফিরে আসে। পরে তার নামে মামলা হলেও এখনও তিনি ধরা-ছোঁয়ার বাইরে আছেন।
চাঁদা দেয়া-নেয়া এবং চা-পানি খাওয়ার টাকা দেয়া-নেয়া আমাদের বাংলাদেশিদের এক মুদ্রাদোষে পরিণত হয়েছে। সেই চিরচেনা অভ্যাস, সেই চিরচেনা স্বাদ। দেশে যত বিপ্লবই হোক, যত নিত্য-নতুন স্বাধীনতাই আসুক না কেন, আমরা মনেহয় এ অভ্যাস থেকে ফিরে আসতে পারবো না। যেদিন এ দেশে চাঁদাবাজি ও ঘুষের আদান-প্রদান বন্ধ হবে সেদিন আমাদের কেউ কেউ ডায়েরিয়া কিংবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারেন।
বিভিন্ন অফিসে এখন আগের ছবিগুলো নামিয়ে নতুন ছবি টানানো হয়েছে। নতুন লোকদের আনাগোনা বাড়ছে। নতুন অতিথিদের দখলে যাচ্ছে চর থেকে পাবলিক টয়লেট সবকিছু। এদিকে দেশের ছাত্রসমাজ ও সচেতন নাগরিক সমাজ পুরাতন অভ্যাস বদলানোর বিপক্ষে স্লোগান দিলেও তারা কদিন টিকে থাকতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। এখনও সকল জায়গা দখলে না গেলেও ধীরে ধীরে সর্বত্র আয়ত্বে নিচ্ছে নতুন চাঁদাবাজরা। একটু সময় লাগবে, এরপরই হয়ত আমরা আবার ফিরে পাবো সেই চিরচেনা চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেটের বাংলাদেশ।
লেখক: সংবাদকর্মী
(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: