ফ্রাই ডে
সেন্টমার্টিনে হুক্কাহুয়া
সময় বুঝে ঠিক মতো আওয়াজ একটা দিতে পারলেই হয়ে যায়। ওই ডাকে বিশেষ প্রাণীর মতো হুক্কাহুয়ায় মেতে ওঠার বাতিক আমাদের অনেকেরই আছে। হালে সেটা চলছে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন নিয়ে। সেখানে যেতে পর্যটকদের রেজিস্ট্রেশন লাগবে আওয়াজটা বেশ বাজার পেয়েছে। আসলে কী-নকলে কী; জানার বড় গরজ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের।
তলা খুজতে গিয়ে আওয়াজটার কিছু মাজেজা পাওয়া গেছে। সেন্টমার্টিন যেতে হলে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে অনুমতি লাগবে-এই কিছিমের একটা কথা বলেছিলেন পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আব্দুল হামিদ। ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজারে সেন্টমার্টিন দ্বীপে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে কনসালটেশন সেমিনারে তার কথাটি বলার সাথে সাথেই ব্যাপক ভাইরাল। ড. আব্দুল হামিদ বলছিলেন- ‘সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় অনেক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে সেন্টমার্টিনে পর্যটক সমাগম সীমিত করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা হবে। এখানকার প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যগুলোকে রক্ষা করতে হবে। এক পর্যায়ে তিনি প্রশ্ন রাখেন- সেন্টমার্টিনে রাতযাপন করতে পারে ৯০০ মানুষ। সেখানে ৯ হাজার মানুষ থাকলে বিপর্যয় ঠেকানোর কোনও উপায় আছে কী।
ব্যাস আর যায় কই? ভাইরাল আইটেম হতে সময় লাগেনি। সেন্টমার্টিন মার্কিনীদের দিয়ে দেয়া হচ্ছে, তাই রেজিস্ট্রেশন ছাড়া সেখানে যাওয়া যাবে না। ভবিষ্যতে ভিসাও লাগতে পারে। এর আগে ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বরও একই আদে জারি করেছিল বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। সে সময়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পর্যটকদের সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ করতে হলে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এ ছাড়া দ্বীপে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ফিও দিতে হবে পর্যটকদের। এমনকি দ্বীপে দিনপ্রতি সঠিক ধারণক্ষমতা অনুযায়ী পর্যটক নিশ্চিত করবে কর্তৃপক্ষ। এই নিয়মে কিছুদিন সেন্টমার্টিন পর্যটক যাওয়ার পর স্বাভাবিক নিয়ম চালু হয়। তখন এ নিয়ে কিছু হৈচৈ হয়েছে। তবে, সেন্টামার্টিন দখল হয়ে যাচ্ছে- এ ধরনের ভাইরাল আইটেম হয়নি। এবার আওয়াজ ও অবস্থার তোড়ে ৫ সেপ্টেম্বরেই পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়েছে। বলতে হয়েছে, সেন্ট মার্টিন যেতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, এমন সিদ্ধান্ত হয়নি।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরো বহু বছর বড় ইস্যু হয়ে থাকবে। ইস্যুটিকে মোটাতাজা করার মহলও আছে। এর ফের অনেকেরই কম-বেশি জানা। মাস দুয়েক আগে একবার শোরগোল উঠেছিল- সেন্টমার্টিন মিয়ানমার নিয়ে গেছে। এখন তারা কবে বাংলাদেশকে এটি ফিরয়ে দিল? লা জবাব। শুধু সেন্টমার্টিন নয়, আমাদের এমন যতোগুলো পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা আছে তার ম্যানেজমেন্ট নিয়ে তো ভাবতেই হবে। ঢাকা বা কোনো শহর-বন্দরে একটা ভবন ভেঙ্গে কয়েকটা ভবন করা যাবে। একটা সুন্দরবন,আরেকটা সেন্ট মার্টিন,কুয়াকাটা, রাতার গুল কি বানানো যাবে?
আমরা পর্যটন কেন্দ্রে গিয়ে তাকে যেভাবে নস্ট করি পৃথিবীর আর কেউ তা করে না। অথচ আমরা যতো জ্ঞানী ও নীতিকথা জানি তারা তা জানে না। এভাবে কথার কচলানি-চাতুরিও জানে না। সেন্টমার্টিনসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলো নিয়ে পারিপার্শ্বিক দিক ও সময় বিবেচনায় কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। সেন্টমার্টিন একটু বেশি স্পর্শকাতরও। বাংলাদেশের সমুদ্রবেষ্টিত এই ছোট দ্বীপটিকে মাঝেমধ্যেই পেয়ে বসে মিয়ানমার। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর অবস্থানও সেখানে বেশ কঠোর। আমাদের চলমান সময়টাও কঠিন। কোনো কিছু নিয়ে বিশেষ করে সেন্টমার্টিনের মতো বিষয়ে ট্রল-ভাইরালএ একটু সাবধান হওয়ার দরকার আছে। হুক্কাহুয়ায় মেতে ক্যাচাল বাধানো এখন নয়, কখনোই কাম্য হতে পারে না।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন
মন্তব্য করুন: