• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

নতুন বিভাগের নাম বিতর্কঃ বিকল্প হতে পারে ফেনী

আলাউদ্দিন আদর

প্রকাশিত: ১৭:৩৬, ২৬ অক্টোবর ২০২১

আপডেট: ১৭:৩৭, ২৬ অক্টোবর ২০২১

ফন্ট সাইজ
নতুন বিভাগের নাম বিতর্কঃ বিকল্প হতে পারে ফেনী

আলাউদ্দিন আদর, ফাইল ছবি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিভাগের ব্যাপারে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, দুইটি নদীর নামে দুইটি বিভাগ বানাবো। 

গত বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) সকালে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে   প্রধানমন্ত্রী  বলেন, ‘একটা পদ্মা আর একটা মেঘনা। ‘কু’ নাম দিয়ে আমি কোনো বিভাগ দেবো না। ফরিদপুর বিভাগ হবে পদ্মা নামে আর কুমিল্লা বিভাগ হবে মেঘনা নামে।’

এরপর থেকে গত কয়েক দিন ফের বিভাগ বিতর্ক ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলে চরমে উঠেছে। এই বিষয়ে আমার নিজস্ব মতামত তুলে ধরার পূর্বে একজন বিখ্যাত মনীষীর একটি মন্তব্য এবং নিকট অতীতের  সামান্য ইতিহাস উল্লেখ করছি।

ড. আহমদ শরীফ চট্টগ্রামের ইতিকথায় বলেছেন, প্রাচীনকালে আধুনিক ফেনী অঞ্চল ছাড়া নোয়াখালীর বেশির ভাগ ছিলো নিম্ন জলাভূমি। তখন ভুলুয়া (নোয়াখালীর আদি নাম) ও জুগিদিয়া (ফেনী নদীর সাগর সঙ্গমে অবস্থিত) ছিলো দ্বীপের মতো।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরবর্তী সময়ে ১৯৬০ সালে ত্রিপুরা জেলার নামকরণ করা হয় কুমিল্লা। কুমিল্লার   আদিনাম কমলাঙ্ক-এর অপভ্রংশ, যার অর্থ পদ্মফুলের দীঘি।

১৮২১ সালের পূর্ব পর্যন্ত শাহবাজপুর, হাতিয়া, বর্তমান নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ড, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, ত্রিপুরার কিছু অংশ, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও মীরসরাই নিয়ে ছিলো ভুলুয়া পরগনা। ১৮২১ সালে ভুলুয়া নামে স্বতন্ত্র জেলা প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত এই অঞ্চল ত্রিপুরা জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিলো। ১৮৬৮ সালে ভুলুয়া জেলাকে নোয়াখালী জেলা নামকরণ করা হয়।

অথচ সতের শতকে কবি মির্জা নাথান-এর ফার্সী ভাষায় রচিত বাহরিস্তান-ই-গায়েবীতে ফেনী নামটি পাওয়া যায়। আঠারো শতকের শেষার্ধে কবি আলী রজা প্রকাশ কানু ফকির তার পীরের বসতি হাজীগাঁও এর অবস্থান সম্পর্কে লিখছেন-

ফেনীর দক্ষিণে এক ষর উপাম
হাজীগাঁও করিছিল সেই দেশের নাম।

কবি মুহম্মদ মুকিম তার পৈতৃক বসতির বর্ণনাকালে বলেছেন- ফেনীর পশ্চিমভাগে জুগিদিয়া দেশে...

শুধু তাই নয়, ফেনী নদীর তীরে রঘুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বীর বাঙ্গালী শমসের গাজীর রাজধানী ছিলো। তিনি দীর্ঘ দিন এই পুরো অঞ্চল সুনামের সংগে শাসন করেন। পরে তিনি এখান থেকে যুদ্ধাভিযানে গিয়ে রৌশনাবাদ ও ত্রিপুরা রাজ্য জয় করেন। 

ইতিহাস নিয়ে অনেক আলোচনা হলো। বর্তমানে ফেরা যাক, ফেনী বাংলাদেশের অখণ্ডতা রক্ষাকারী জেলা। বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে ফেনীকে মুছে দিলে বাংলাদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাবে। ৯২৮ বর্গকিলোমিটারের এই ছোট্ট জেলাটি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ জেলা। বাংলা সাহিত্যে ফেনী নিয়ে যতো পদ্য, গদ্য আছে তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। ফেনী নিয়ে সম্ভবত সবচেয়ে সেরা কবিতাটি লিখেছে এই সময়ের বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি জাহিদুল হক।

কাজেই আপনি যেভাবেই বিচার করেন, বিভাগের নামের বিচারে- নোয়াখালী, কুমিল্লা নাম দু’টি থেকে ফেনী নামটি প্রাচীন এবং ঐতিহাসিকও বটে। এই অঞ্চলের প্রথম আধুনিক শহর ফেনী শহর। প্রথম পূর্ণাঙ্গ আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফেনী হাই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে। তখন শিক্ষা গ্রহণের জন্য বর্তমান কুমিল্লা ও নোয়াখালীর মানুষ আমাদের ফেনীতে ছুটে আসতো।

হ্যাঁ, আমি স্বীকার করছি আমরা জাতীয় পর্যায়ের অঞ্চল প্রেমিক নেতা-নেত্রী তেমন একটা পাইনি। আমাদের ফেনী থেকে যারাই জাতীয় পর্যায়ে গেছে, দেশের নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের অধিকাংশই ফেনীর ব্যাপারে ছিলো উদাসীন। চট্টগ্রামের মানুষ হয়ে কবি নবীনচন্দ্র সেন ফেনীর শিক্ষা ও সংস্কৃতির আধুনিকায়নে যতোটুকু মনোযোগী ছিলেন। ফেনীর মাটিতে জন্ম নিয়েও ফেনীর প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ফেনী নিয়ে এমনটি ভাবেনি।

যেহেতু প্রধানমন্ত্রী নদীর নামে নতুন দু‘টি বিভাগ করতে চান এবং বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলে পদ্মার বিকল্প নেই; একটা বিভাগ পদ্মার নামে হোক।

আরেকটা হোক ফেনী নদীর নামে ফেনী বিভাগ। ফেনী নদীর হাজার বছরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় এনে ফেনী বিভাগ, এই অঞ্চলের প্রাণের দাবি।

এখন আমাদের কোনো মন্ত্রী নেই, নেই জাতীয় পর্যায়ে বড় কোনো নেতা। কুমিল্লা ও নোয়াখালীর কিন্তু আছে। ফলে ক্ষমতার জোরে তারা চাইবে বিভাগের নাম তাদের জেলার নামে করতে। কিন্তু আমরা তা মানবো না। ক্ষমতার নোংরা প্রতিযোগিতায় আমরা হেরে যেতে চাই না। তার চেয়ে চট্টগ্রাম বিভাগে থাকা আমাদের জন্য অধিকতর সম্মানের...

লেখকঃ কবি ও সাহিত্যিক

বিভি/এওয়াইএইচ

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2