• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

উন্নয়ন ও গণতন্ত্র: লি কুয়ান উই এবং অমর্ত্য সেনের বয়ান

মো.নিজাম উদ্দিন 

প্রকাশিত: ১৮:০৬, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
উন্নয়ন ও গণতন্ত্র: লি কুয়ান উই এবং অমর্ত্য সেনের বয়ান

মো.নিজাম উদ্দিন 

এক.

বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে একশ্রেণির মানুষ উন্নয়নের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।গণতন্ত্রের কথা বললে দেখবেন খুব স্মার্টলি কিছু মানুষ রিয়েক্ট করে। তারা বলতে চায়, বুঝাতে চায়-উন্নয়নের জন্য গনতন্ত্র সহায়ক নয়। উদাহরণ হিসাবে সিঙ্গাপুরকে টেনে আনা হয়। বলা হয় সিঙ্গাপুরে গণতন্ত্র নেই কিন্তু উন্নয়ন হচ্ছে! 

সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান উইকে এক্ষেত্রে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে উন্নয়নের চ্যাম্পিয়ন হিসাবে দাঁড় করানো হয়। যিনি সিঙ্গাপুরকে থার্ড ওয়াল্ড থেকে ফার্স্ট ওয়াল্ডের তালিকায় নিয়ে গেছেন। লি কুয়ান উই সিঙ্গাপুরের ক্ষমতাশীন দল পিপলস একশন পার্টির আমৃত্যু নেতা ছিলেন। লি কে যতই কর্তৃত্ববাদী শাসক বলা হোক তিনি কি আসলে বাংলাদেশের কর্তৃত্ববাদী শাসক গোষ্ঠীর চেয়ে বেশি নিষ্ঠুর কেউ ছিলেন কিংবা এদের মতোই ছিলেন? তিনি কি দুর্নীতিবাজ ছিলেন খুব? তাঁকে নিয়েও এখানে কাউন্টার আলাপ তুলা এখন প্রাসঙ্গিক। সিঙ্গাপুরের ভূরাজনৈতিক বৈচিত্র্য, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর অবস্থান, তাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা কী শুধুই একটা স্বৈরশাসক নিশ্চিত করেছে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা খুব জরুরী। যেহেতু বাংলাদেশে এই বিতর্কটা চলছে। 

১৯৯৩ সাল। ভিয়েনাতে সর্বজনীন মানবাধিকারে সম্পর্কে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। সেই সম্মেলনে চীন,সিঙ্গাপুর সহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ সমূহ সবার জন্য অভিন্ন মানবাধিকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলে প্রতিবাদ জানায়। তাদের বক্তব্য ছিল -উন্নয়নশীল দেশ গুলোর জন্য রাজনৈতিক অধিকারের চেয়ে অর্থনৈতিক অধিকার গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক অধিকার ও মানবাধিকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা তৈরি করে। কর্তৃত্ববাদী সরকার গণতান্ত্রিক সরকারের চেয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে অধিক উপযোগী। এইসব চিন্তার ঘোর সমর্থক ছিলেন সিঙ্গাপুরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান উই। যাকে আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক বলা হয়। তাঁর এই চিন্তাকে 'লি থিসিস' নামেও ডাকা হয়।ক থা হচ্ছে এই লি থিসিস বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কতটুকু প্রাসঙ্গিক?

দুই.

বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র প্রিয়। আজ থেকে কয়েক শতাব্দী পূর্বেও এ অঞ্চলে মানুষ গোপাল নামে একজন রাজাকে সরাসরি ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল। আমাদের স্বাধীনতার বয়স পঞ্চাশ হলেও, গণতন্ত্রের বয়স অনেক বেশি। লাখো মানুষের রক্তের অক্ষরে লেখা নাম বাংলাদেশ। জীবন দিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আর ১৯৬৫ সালে মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুরকে স্বেচ্ছায় স্বাধীনতা দিয়েছে! যুদ্ধ করতে হয়নি। এছাড়া সিঙ্গাপুরের অন্যতম রাজনৈতিক সংকট ছিল এটি কোনো ন্যাশন স্টেট নয়। ওখানে চাইনিজ,মালয় এবং ভারতীয় নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী মিলে একটা জাতি তৈরি করেছে। বাঙালিদের মতো এত বড় সংখ্যা গরিষ্ঠ জাতি সেখানে নেই! চাইনিজ ও মালয়দের অনুপাতের তফাৎ খুব বেশি নয়। আছে ভারতীয় জনগোষ্ঠীর রক্তও। মোটা দাগে তিনটি জাতি।এর মধ্যে বড় জনগোষ্ঠী চাইনিজ বংশধরেরা। লি কুয়ান উই এর পিতা মাতার রক্ত চাইনিজ। মালয় ও ভারতীয়দের অধিকার নিশ্চিত করতে পেরেছেন তিনি। ফলে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ভিন্ন মত কিংবা কোনো অসন্তুষ্টি দেশ পরিচালনায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। তবে লি থিসিসকে একজন গণতন্ত্রের কর্মীর সমর্থন করার কারণ নেই। 

তিন.

লি থিসিসের সমকালীন সবচেয়ে বড় সমালোচক হচ্ছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ভারতীয় অর্থনীতিবিদ নোবেল জয়ী অধ্যাপক ড.অমর্ত্য সেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন কর্তৃত্ববাদ কীভাবে উন্নয়নের সমর্থক না হয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মিস্টার সেন বলেছেন -দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় কর্তৃত্ববাদী শাসনের জন্য উন্নয়ন হয়নি। এখানে উন্নয়ন হয়েছে মূলত মুক্ত বাজার অর্থনীতির জন্য। লি থিসিস এটা প্রমাণ করে না যে কর্তৃত্ববাদী সরকার হলেই উন্নয়ন হয়,অর্থনৈতিক সংকট হয় না, দুর্নীতি-দুর্ভিক্ষ হয় না। কর্তৃত্ববাদী শাসনই কোথাও বরং দুর্ভিক্ষের কারণ হয়েছে অতীতে। যেমন চীনে একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার থাকার পরেও ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ সময়কালে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়। যাতে প্রায় তিন কোটি মানুষ প্রাণ হারায়। অন্যদিকে ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন বা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে ভারতে বড় ধরনের কোনো দুর্ভিক্ষ হয়নি। গণতন্ত্রকে সঙ্গী করেই ভারত ধাপে ধাপে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।ভারতের উন্নয়নে গণতন্ত্র কিন্তু সহায়ক শক্তি হিসাবেই কাজ করছে।

কর্তৃত্ববাদী সরকার ও শাসনব্যবস্থাকে কোথাও খুব সহজে মেনে নেওয়ার ইতিহাস নেই।দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়াতেও মানুষ লড়াই করেই গণতন্ত্র কায়েম করেছে। সিঙ্গাপুরে লির সাফল্যের কারণ হলো তিনি সেখানে সংখ্যা গরিষ্ঠ চাইনিজ ভাষাগোষ্ঠীর সমর্থনে চীনাভাষীদের কর্তৃত্ব রক্ষা করেছেন। বাংলাদেশে লি থিসিসকে সমর্থন করার নুনতম কোনো কারণ দেখি না। গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রশ্নে লি কুয়ান উই নয় বরং বাংলাদেশে অধ্যাপক ড.অমর্ত্য সেনের বক্তব্যই প্রাসঙ্গিক। 

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক

(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার  বাংলাভিশন নিবে না।)

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2