• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

বাংলাদেশে কি কোন সেরা নারী ক্রীড়াবিদ নেই!

মনজুরুল হক

প্রকাশিত: ১৫:২১, ৪ জানুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
বাংলাদেশে কি কোন সেরা নারী ক্রীড়াবিদ নেই!

সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশের সর্বস্তরে একটি স্লোগান ব্যাপকভাবে উচ্চারিত-নারী স্বাধীনতা, নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর সমঅধিকার। এই স্লোগানের আড়ালে কী ঘটে সেটা কাউকে বলে দিতে হবে না। এগুলো যে কেবল কথার কথা তার সর্বশেষ নজির রাখল ক্রীড়া সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ক্রীড়া লেখক সমিতি’। সমিতির ৬০ বছর পূর্তিতে স্বাধীনতার পর ৫০ বছরে ‘দেশের সেরা ১০’ ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব নির্বাচন করে সম্মাননা দিয়েছে তারা। এই তালিকায় ১ম সাকিব আল হাসান, ২য় কাজী সালাহউদ্দীন, ৩য় নিয়াজ মোর্শেদ। দ্বিতীয় হওয়ায় কাজী সালাহউদ্দীন সম্মাননা প্রত্যাখ্যান করেছেন। বাফুফে’তে তার আমলের অর্জন নিয়ে এখানে আলোচনার কিছু নেই। সেই ব্যর্থতা ‘দেশের সেরা ১০’ সম্মাননার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

 

 প্রশ্ন হচ্ছে এই তিনজন ছাড়াও আরও যাদের সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, সেখানে একজনও নারী ক্রীড়াবিদ নেই! তবে কি বাংলাদেশে সম্মাননা দেওয়ার মত কোনো নারী ক্রীড়াবিদ নেই? তাদের পাফরমেন্স কী এতটাই বাতিলযোগ্য?

 আসুন, দেখে আসি নারী ক্রীড়াবিদদের উপাখ্যান—

জোবেরা রহমান লিনু। টেবিল টেনিসে ১৬ বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন, জাতীয় পর্যায়ে সর্বাধিক বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য গিনেস বুকে স্থান পাওয়া
১। জোবেরা রহমান লিনু। টেবিল টেনিসে ১৬ বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন, জাতীয় পর্যায়ে সর্বাধিক বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য গিনেস বুকে স্থান পাওয়া। ১৯৭৩ সালে মাত্র ৯ বছর বয়সে জাতীয় পর্যায়ে টেবিল টেনিসে রানার্সআপ। ১৯৮০ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান টেবিল টেনিসে পঞ্চম স্থান। ১৯৮২ সালে ভারতের হায়দরাবাদের পেন্টাদুলায় আন্তর্জাতিক টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় ডাবলসে রানার্সআপ। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ টেবিল টেনিসের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত বিটিসি ইন্টারন্যাশনাল প্রতিযোগিতায় শিরোপা জয়। ১৯৮০ সালে এশিয়া চ্যাম্পিয়নশীপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেন।

মাবিয়া আখতার সীমান্ত
২। মাবিয়া আখতার সীমান্ত। ভার উত্তোলনে  ২০১৯ এসএ  গেমসে  স্বর্ন পদক। ২০১৬ সালে ভারতের গৌহাটিতে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান গেমসে ৬৩- কেজি শ্রেণীতে স্বর্ণপদক। ২০১৫ সালে ভারতের পুনেতে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ ভারোত্তোলন প্রতিযোগীতায় ৬৩- কেজি ওজন শ্রেণীতে সিনিয়র এবং জুনিয়র ক্যাটাগরীতে একটি স্বর্ণ পদক এবং দুটি রৌপ্য পদক।

মাহফুজা খাতুন শিলা
৩। মাহফুজা খাতুন শিলা।  ২০১৬ সালে ভারতের গৌহাটিতে অনুষ্ঠিত ১২তম এসএ গেমসে ১০০-মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে সাঁতারে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম স্বর্ণপদক অর্জন।

রাণী হামিদ
৪। রাণী হামিদ। বাংলাদেশের প্রথম মহিলা আন্তর্জাতিক দাবা মাস্টার। ১৯৮৫ সালে ফিদে আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার খেতাব অর্জন। ৩ বার ব্রিটিশ মহিলা দাবা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন।

বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে জিতেছে এশিয়া কাপের শিরোপা জয় করে
৫। বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে জিতেছে এশিয়া কাপের শিরোপা। প্রথমবারের মত ৫০ ওভারের ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। 

৬। বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলঃ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে শিরোপা জয় সাবিনা-সানজিদা-কৃষ্ণাদের।২০২০-২০২১
ক : এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ গার্লস রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৫, নেপাল। ২০ ডিসেম্বর ২০১৫
খ : এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ গার্লস রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৬
গ : এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ওমেন্স চ্যাম্পিয়ন্সশিপ ২০১৭, কোয়ালিফায়ার্স। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ফাইনাল। বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন।
ঘ :  সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৭, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ফাইনাল। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন।
ঙ : জকি ক্লাব গার্লস ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০১৮, হংকং। ১ এপ্রিল ২০১৮। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন।
চ : এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ওমেন্স চ্যাম্পিয়ন্সশিপ ২০১৯, কোয়ালিফায়ার্স, ঢাকা। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮। বাংলাদেশের মেয়েরা অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন।
ছ : সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৮, নেপাল। ৭ অক্টোবর ২০১৮। বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন।
জ: বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ মহিলা আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা ২০১৯, ঢাকা। ৩ মে ২০১৯। বাংলাদেশ অপরাজিত যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন।

নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে শিরোপা জয় সাবিনা-সানজিদা-কৃষ্ণাদের

 এতকিছুর পরও ‘ক্রীড়া লেখক সমিতি’র রাডারে নারীদের এইসব সাফল্যগাঁথা ধরা পড়ল না। সেটা কি রাডারের দোষ নাকি যারা এখানে আসন অলঙ্কৃত করে বসে আছেন তাদের মূর্খতা? দেশের অনেক ইনস্টিটিউটের মত স্পোর্টস ইনস্টিটিউটগুলোও ভেঙে পড়েছে। সেসব জায়গায় অকাট মূর্খরা দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। ক্রীড়া লেখক সমিতিই বা তার বাইরে যায় কী করে? তাদের চোখে ক্রিকেট ছাড়া কিছুই যেন চোখে পরেনা! কারণ ওখানে চার্ম, টাকা, খাতির সবই আছে। সেই বদান্যতায় তাদের প্রথম পছন্দ ক্রিকেট। আ গ্লোরিয়াস অনার গিভিং ইভেন্ট! ক্রিকেট ইজ আ হাই-ভ্যালু সেলেবল কমোডিটিজ!

 

(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার  বাংলাভিশন নিবে না।)

মন্তব্য করুন: