আজ শহীদ আসাদ দিবস
অনাড়ম্বর চলে যায় শহীদ আসাদ দিবস
আজ শহীদ আসাদ দিবস। আজ আমরা স্মরণ করি আপাত অসম্ভব গণঅভ্যুত্থান এদেশেই ঘটেছিল ১৯৬৯ সালে! রক্তমাখা সার্টের উত্তরাধীকারের কাজ তখনও বাকি। তাকে পালন করতে হবে গণঅভ্যুত্থানের নেতার দায়িত্ব। রক্তমাখা সার্ট নিয়ে তাৎক্ষণিক মিছিল হয়েছিল। এর পরও বহু বছর আসাদকে নিয়ে সগর্ব উচ্ছ্বাস দেখাত বাংলাদেশ। ১৯৬৯ সম্ভবত অনেক দীর্ঘ সময়! তাই আসাদ এখন বিস্মৃতির অতল গহ্বরে! অনাড়ম্বর চলে যায় শহীদ আসাদ দিবস। আমরা সম্ভবত অনেক কিছু নিয়ে বিজি থাকি।
ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ও কৃষক আন্দোলনের সংগঠক আসাদুজ্জামান আসাদের শহীদ হওয়ার সংবাদ পেয়ে ছাত্রসমাজ চরম ক্রুদ্ধ হয়ে উঠে। শহীদ আসাদের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে পরদিন ঢাকায় বের হয় শোক মিছিল। বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা ছুটে যান মোহাম্মদপুরের ‘আইয়ুব গেট’র সামনে।
১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বটতলায় সংক্ষিপ্ত সভা শেষে ছাত্রদেরকে নিয়ে ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ঢাকা হল ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আমানুল্লাহ মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ। পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং ফিরে যেতে বলে। কিন্তু, তাতে বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়েই আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে বিক্ষোভকারী ছাত্ররা 'আইয়ুব শাহীর গদিতে, আগুন জ্বালাও এক সাথে'সহ নানান স্লোগান দিতে দিতে চানখাঁরপুলের দিকে এগিয়ে যান।
মিছিলটি যখন চানখাঁরপুলের কাছাকাছি আসে তখন পুলিশ হামলা চালায়। সেসময় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের প্রায় ঘণ্টাখানেক সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে আসাদুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতা ঢাকা হলের পাশ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল পাদদেশে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে আসাদুজ্জামান আসাদকে লক্ষ্য করে গাড়ি থেকে রিভলভারের গুলি ছোঁড়েন পুলিশের এক কর্মকর্তা।
গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তখনই লুটিয়ে পড়েন আসাদ। গুরুতর আহত অবস্থায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ও কৃষক আন্দোলনের সংগঠক আসাদুজ্জামান আসাদের শহীদ হওয়ার সংবাদ পেয়ে ছাত্রসমাজ চরম ক্রুদ্ধ হয়ে উঠে। তার রক্তমাখা শার্ট হয়ে উঠে মুক্তির নিশানা। শহীদ আসাদের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে পরদিন ঢাকায় বের হয় শোক মিছিল। বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা ছুটে যান মোহাম্মদপুরের 'আইয়ুব গেট'র সামনে।
প্রতিবাদের ক্ষুব্ধ প্রতীক হিসেবে 'আইয়ুব গেট'র নামফলক গুঁড়িয়ে দিয়ে রক্ত দিয়ে সেখানে লেখা হয় 'আসাদ গেট'। আসাদের শহীদ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী গড়ে উঠে অবিস্মরণীয় গণজাগরণ। সারাদেশে তখন একটিই স্লোগান, 'আসাদের মৃত্যু বৃথা যেতে দেব না।'
এর পরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং তার পর পরই ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ। সে সময় এ ধরণের বড় বড় কাজগুলো করতেন বামপন্থীরা। এখন যারা বসে বসে তসবিহ গোণে……আর কল্পিত সাম্রাজ্যবাদকে ঘরে বসেই ধ্বংস করার নিনাদ করে।
আসাদকে যে মাপে সম্মান জানানো উচিৎ বাংলাদেশ তা পারেনি। খুব স্বাভাবিক যে বুর্জোয়া বড় বড় দলগুলো তাঁকে নেতা মানতে চাইবে না। আরও ঠিক যে তারা আসাদকে নাম কা ওয়াস্তে স্মরণ করবে।
বামপন্থীরাও কি বুর্জোয়াদের মত করছে না? গণঅভ্যুত্থানের শিক্ষাটা কোন কাজে লাগচ্ছে? স্রেফ ইতিহাসের বইতে? লেকচারে আর স্মৃতিতর্পণে নয়?
অক্ষম অসহায় আমরা আর কি করতে পারি? এই নির্দিষ্ট দিনে স্মৃতি স্মরণ। এই তো। শেষে একটা দুর্বল স্লোগান-আসাদের রক্তমাখা সার্ট আমাদের অঙ্গীকার।
মন্তব্য করুন: