‘খালেদা জিয়া জানতেন হারিছ চৌধুরী দেশেই আছেন’ (ভিডিও)
নিজের রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর ঢাকায় অবস্থানের খবর জানতেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। রবিবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যায় বাংলাভিশন ডিজিটাল-এর সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী।
তিনি বলেন, আমার ফাইন্ডিংস বলে বেগম খালেদা জিয়া জানতেন হারিছ চৌধুরী বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তবে কোথায় থাকতেন সেটা জানতেন কি না জানি না।
সিনিয়র এই সাংবাদিক বলেন, হারিছ চৌধুরীর অবস্থান এবং তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে দু’বার লন্ডনে গিয়েছেন তিনি। সেখানে তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। দীর্ঘদিন তিনি লেগেছিলেন এটার পেছনে। তাঁর ইচ্ছা ছিলো ইন্টারভিউ করার। তা আর হয়নি। হঠাৎ করে একটি সোর্স তাঁকে জানান, হারিছ চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত। রাজধানীর এভার কেয়ারে ভর্তি। হাসপাতালে গিয়ে হারিছ চৌধুরী নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। খুঁজতে খুঁজতে জানতে পারি পরিবর্তন করা নাম মাহমুদুর রহমান নামে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, পান্থপথের যে বাসায় হারিছ চৌধুরী থাকতেন সেখানে একটি কিশোর ছেলে এবং কাজের বুয়া ছাড়া আর কেউ থাকতেন না। তারাই দেখাশুনা করতেন।
আরও পড়ুন:
- ছাত্রদলের কারণে আবারো বিব্রত মির্জা ফখরুল
- গানে গানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমি চাইলেন মেয়র আতিক
- গত ১০ বছরের উন্নয়নে শিশুরা এখন হালের বলদ চেনে না
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, তাঁর বাসার আশেপাশের অনেকেই বলেছেন-তিনি খুবই সাধারণ জীবন যাবন করতেন। একশ’ টাকা দামের একটি পাঞ্জাবী পড়তেন। সবসময় লুঙ্গী পড়ে থাকতেন। এছাড়া মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তেন। কোনো কোনো নামাজের ইমামতিও করতেন। পরিচয় দিতেন একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক হিসেবে।
দীর্ঘসময় আত্মগোপনে কিভাবে ছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, হয়তো এই বিষয়ের ওপর তিনি অনেক পড়ালেখা করেছেন। তাঁর নিজের লেখা ডায়েরি পাওয়া গেলে হয়তো আরো বিস্তারিত জানা যেতো। ওই বাসায় আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী এবং রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের কেউ আসতেন না। হারিছ চৌধুরীকে মানুষ দেখেছে ক্লিন সেভ। পান্থপথে থাকার সময়ে লম্বা দাড়ি, সাদা চুল। বয়স্ক মানুষ হিসেবে দেখেছে। যার কারণে কারোরই সন্দেহ হয়নি তাঁকে নিয়ে। তাছাড়া গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ধারণা করেছেন, হারিস চৌধুরী ভারত অথবা লন্ডনে আত্মগোপনে আছেন। যার কারণে তারা তাঁকে রিচ করতে পারেননি।
তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান নামে একটি পাসপোর্টও রয়েছে। ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে এটি ইস্যু করা হয়। যার নম্বর BW0952982। এতে ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করেছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। বাবার নাম লেখা আছে আবদুল হাফিজ। পাসপোর্টের ছবিতে সাদা লম্বা দাড়ি, চুলের রঙ সাদা। বার্ধ্যক্যের বেশ ছাপ রয়েছে।
হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, হাসপাতাল থেকে লাশ গোসল করিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সাভারের লালাবাদ কমলাপুরে। জামিয়া মাদ্রাসার প্রাঙ্গণেই দাফন করা হয় তাঁকে।
গোপনীয়তার বিষয়ে মেয়ে বলেন, ১৪ বছর যে মানুষটি আত্মগোপনে ছিলেন তার খবর প্রকাশ করা সহজ ছিলো না। নানা ভয় আর আতঙ্ক কাজ করেছে। তবে এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি অধ্যাপক মাহমুদুর রহমানই আমার বাবা হারিছ চৌধুরী। ডিএনএ টেস্ট করলেই এটা খোলাসা হয়ে যাবে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় হারিছ চৌধুরীর যাবজ্জীবন সাজা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ, এম, এস, কিবরিয়া হত্যা ও বিস্ফোরক মামলারও আসামি ছিলেন হারিছ চৌধুরী। বিগত ১৪ বছর গোয়েন্দারা তাকে হন্যে হয়ে খুঁজেছেন। কিন্তু তার সন্ধান পাননি।
বিভি/এনএম
মন্তব্য করুন: