ভূমিকম্প কিসের ইঙ্গিত? কোরআন ও হাদিসে যা বলা হয়েছে

ফাইল ছবি
ভূগর্ভের অভ্যন্তরে সৃষ্ট কম্পন-তরঙ্গের কারণে যে শক্তি উৎপন্ন হয়, তাকে ভূমিকম্প বলা হয়। এই কম্পন বিশেষ কোনো স্থানে শুরু হয় এবং সেখান থেকে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। ভূমিকম্প মহান আল্লাহর মহাশক্তির এক ছোট নিদর্শন। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে যেকোনো দুর্যোগের সময় ও বিপদে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে বলেছেন।
মহান আল্লাহ বলেন, আমি শুধু ভয় প্রদর্শনের জন্যই নিদর্শনসমূহ প্রেরণ করি। (সুরা ইসরা, আয়াত: ৫৯)
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে, কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে কিন্তু তার খেয়ানত করা হবে, জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে কিন্তু মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে, বন্ধুকে কাছে টেনে নিয়ে পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে, মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল হবে, জাতির সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসকরূপে আবির্ভূত হবে, সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি হবে নেতা, একজন মানুষ যে খারাপ কাজ করে খ্যাতি অর্জন করবে, তাকে তার খারাপ কাজের ভয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হবে, বাদ্যযন্ত্র ও নারী শিল্পীর ব্যাপক প্রচলন হবে, মদ পান করা হবে, লোকজন তাদের পূর্ববর্তী মানুষগুলোকে অভিশাপ দেবে, এমন সময় তীব্র বাতাস প্রবাহিত হবে, এমন একটি ভূমিকম্প হবে যা সেই ভূমিকে তলিয়ে দেবে। (তিরমিজি, হাদিস: ১৪৪৭)।
মহান আল্লাহ বলেন, বলো, আল্লাহ তোমাদের ওপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম। (সুরা আনআম: ৬৫)
আয়াতটি নাজিল হলে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে আল্লাহ, আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (বুখারি) শায়খ ইস্পাহানি (রহ.) আয়াতের তাফসিরে বলেছেন, এখানে ভূমিকম্প ও ভূমিধসের কথা বলা হয়েছে।
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, মানুষের গুনাহ, অনাচার, পাপাচার, প্রকৃতির প্রতি অবিচার ইত্যাদির কারণে আল্লাহ তাআলা মানুষকে বিভিন্ন দুর্যোগের মুখোমুখি করেন। এ কারণেই এসবকে মানুষের হাতের কামাই আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যে বিপদ-আপদই তোমাদের ওপর আসুক না কেন, তা তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই। আর আল্লাহ তোমাদের অনেক (গুনাহ) ক্ষমা করে দেন। (সুরা শুরা: ৩০)
ভূমিকম্প কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতার কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, হে মানুষ, তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো। কিয়ামতের ভূমিকম্প এক ভয়ংকর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা দেখবে, সেদিন স্তন্যদায়ী মা তার দুগ্ধপোষ্য সন্তানের কথা ভুলে যাবে আর সব গর্ভবতীর গর্ভপাত হয়ে যাবে। দৃশ্যত মানুষকে মাতালের মতো দেখাবে, আসলে তারা নেশাগ্রস্ত হবে না। মূলত আল্লাহর শাস্তি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। (সুরা হজ, আয়াত: ১-২)
হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামত কায়েম হবে না, যে পর্যন্ত না ইলম ওঠিয়ে নেয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে, হারজ বৃদ্ধি পাবে। (হারজ অর্থ খুনখারাবী) তোমাদের সম্পদ এত বৃদ্ধি পাবে যে, উপচে পড়বে। (বুখারি, হাদিস ৯৭৯)
কারণ পৃথিবীতে যখন ব্যাপক হারে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, অন্যায়-অবিচার ও বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ ঘটবে, তখন এ জাতি ভূমিকম্পের মুখোমুখি হবে। এক হাদিসে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
এ উম্মত ভূমিকম্প, বিকৃতি এবং পাথরবর্ষণের মুখোমুখি হবে। একজন সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, কখন সেটা হবে হে আল্লাহ রাসুল সা.। তিনি বলেন, যখন গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ ঘটবে, মদপানের সয়লাব হবে। (তিরমিজি, হাদিস ২২১২)
আর ভূমিকম্পের বিভীষিকা কত মারাত্মক, কোরআনের এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মানব সকল, তোমরা ভয় করো তোমাদের রবকে। নিশ্চয়ই কিয়ামত দিবসের ভূকম্পন হবে একটা মারাত্মক ব্যাপার। যে দিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, স্তন্যদায়ী মা তার দুগ্ধপোষ্য সন্তানের কথা ভুলে যাবে আর সব গর্ভবতীর গর্ভপাত হয়ে যাবে। দৃশ্যত মানুষকে মাতালের মতো দেখাবে, আসলে তারা নেশাগ্রস্ত হবে না। বস্তুত আল্লাহর শাস্তি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। (সুরা হজ, আয়াত ১-২)
রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এ দোয়া তিনবার পড়বে সে ভূমি ও আকাশের দুর্যোগ থেকে হেফাজতে থাকবে। এ ছাড়া যেকোনো দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে পড়তে পারেন- لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ-লিমিন। অর্থ: তুমি ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই, তুমি পবিত্র, নিশ্চয় আমি জালিমদের দলভুক্ত।
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: