• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

৩৮ কোটি টাকায় পি কে হালদারের কুমির খামার নিলামে বিক্রি

অমিত রায়, স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ২২:২৪, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আপডেট: ২২:২৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ফন্ট সাইজ
৩৮ কোটি টাকায় পি কে হালদারের কুমির খামার নিলামে বিক্রি

৩৮ কোটি টাকায় নিলামে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত বহুল আলোচিত পি কে হালদারের কুমির খামার। হাইকোটের অনুমোদন পেলে এই টাকা পরিশোধ করে খামারটি বুঝে নিতে চায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উদ্দীপন। ইতিমধ্যেই প্রায় ৮ কোটি টাকা জমা দিয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উদ্দীপন খামারটি নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বাকি টাকা আগামী ৯০ দিনের মধ্যে পরিশোধের জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড নামে দেশে প্রথম প্রতিষ্ঠিত এই কুমির খামারের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনাম হক জানান, খামার বিক্রির টাকায় পরিশোধ করা হবে পিকে হালদারের ঋণ। তিনি বলেন, চলতি বছরের শুরুতে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত পরিচালনা পর্ষদে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পান। তখন এই কুমির খামারের মূল্য ধরা হয়েছিল মাত্র ৫ কোটি টাকা। মাত্র ৮ মাসের ব্যবধানে এই পরিচালনা পর্ষদের তত্ত্বাবধানে খামারটি এখন উন্নতির দিকে। দায়িত্ব নেয়ার পর কুমিরের খাবার যোগান দিতে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে এই খামারে টিকিটের বিনিময়ে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

প্রায় ১৪ একর জমির উপর ২০০৪ সালে উথুরা ইউনিয়নের হাতিবের গ্রামে ৭৫টি কুমির মালয়েশিয়া থেকে এনে এই রেপটাইলস ফার্মটি প্রতিষ্ঠা করেন মেজবাউল হক ও মোস্তাক আহমেদ নামে দুজন ব্যবসায়ী। রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড নামে এই খামার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিলো কুমিরের চামড়া রপ্তানি করা। কিন্তু ২০১২ সালে আর্থিক প্রয়োজনে ফার্মটির মালিকানা হস্তান্তর করেন ঋণ ক্যালেঙ্কারির হোতা বহুল আলোচিত পি কে হালদারের নিকট।

কুমির খামারটি সম্প্রসারণ করতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড থেকে ৫৭ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেয় পিকে হালদার। জামানত হিসাবে ফার্মের জমি ব্যবহার করা হয়। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ফার্মের নামে ঋণ বাড়ানো হয়। ৪ কোটি ২৮ লাখ মূল্যের বন্ধকী জমির বিপরীতে এখন বকেয়া খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১০৮ কোটি টাকা।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এর আবেদন বিবেচনা করে এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৬ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে খামারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনাম হক আরো জানান, খেলাপী ঋণ পরিশোধে নিলামে তোলা হয় খামারটি। খামারটি কিনতে সর্বোচ্চ ৩৮ কোটি টাকা দামে আগ্রহী হয় উদ্দীপন নামক একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।

এদিকে ২০১৯ সালে অর্থ কেলেঙ্কারিতে পি কে হালদার জড়িয়ে পড়ায় এবং ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করায় খামারটিতে অচলাবস্থা দেখা দেয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বন্ধসহ চরম অব্যবস্থাপনায় কুমিরের খাদ্য সংকট দেখা দেয়। পরে বিষয়টি নিয়ে একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফার্মটি পরিচালনার জন্য সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ড. নাইম আহমেদকে চেয়ারম্যান ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কুমির বিশেষজ্ঞ এনামুল হককে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আরো চারজনকে পরিচালক করে ৬ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কুমির বিশেষজ্ঞ এনামুল হক জানান, নানা অব্যবস্থাপনা, টানাপোড়েন, অর্থনৈতিক সংকট ও খাদ্য সংকটে কুমির ফার্মটির অচলাবস্থা ছিলো। কুমিরগুলোর যথোপোযুক্ত পরিচর্যা না হওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে নানা রোগবালাই দেখা দিয়েছিলো। কুমির মারা যাচ্ছিলো। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের তড়িৎ পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করায় কুমিরের নানা রোগবালাই ও মৃত্যু রোধ সম্ভব হয়েছে। জীর্ণ এই খামারটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে এবং আয়ের উৎস বাড়াতে নানা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। ফার্মের খাদ্যের ব্যয় মেটাতে পর্যটকদের জন্য চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী থেকে উন্মুক্ত করা হয়। যেখানে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য টিকিটের মূল্য ১৫০/ এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০/- নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।

খামারটির ব্যবস্থাপক ডা. আবু সাইম মোহাম্মদ আরিফ জানান, ২০০৪ সালে খামারটি প্রতিষ্ঠার পর খামারটি থেকে ২০১০ সালে জার্মানিতে রিসার্সের জন্য ৬৭টি ফ্রোজেন কুমির এবং ২০১৪ সাল থেকে সর্বশেষ ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৫০৭ টি কুমিরের চামড়া জাপানে রফতানী করা হয়। যা থেকে আয় হয় আনুমানিক ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা। প্রতিটি কুমিরের চামড়ার আন্তর্জাতিক বিক্রয় মূল্য ৫শ থেকে ৬শ ডলার।

বিগত দুই দশকের ব্যবধানে খামারটিতে কুমিরের সংখ্যা এখন ৩হাজার ৭শ। উল্লেখ, ব্যাগ, বেল্ট, জুতা তৈরিতে কুমিরের চামড়া ব্যবহার করা হয়। এর দাঁতে তৈরি হয় গয়না, হাড় থেকে সুগন্ধি। কুমিরের পেটের দিকের চামড়া প্রতি সেন্টিমিটারের দামে ১৫ ডলার। কেজি প্রতি মাংস ৪০ থেকে ৫০ ডলারে বিদেশে রপ্তানি ও বিক্রি হয়। বন বিভাগের অনুমোদন পেলে খুব শিগগিরই কুমিরের চামড়ার পাশাপাশি মাংস, হাড়, দাঁত বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হবে। 

বিভি/রিসি

মন্তব্য করুন: