রংপুর সিটি নির্বাচন: পদে পদে ভাঙছে আচরণবিধি
রংপুর সিটি করপোরশন নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের প্রচারণা তুঙ্গে। মানা হচ্ছে না আচরণবিধি। প্রতীক বরাদ্দের আগে মিছিল-মিটিং, শোডাউনের ওপর দেওয়া নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা মানছেন না কেউ। বিশেষ করে নগরীর নতুন ওর্য়াডগুলোতে সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রার্থীদের সভা-সমাবেশ ও শোডাউনে মুখর থাকছে এলাকাগুলো। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে ভোটারদের। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে এ ব্যাপারে কোনো পক্ষ এখনো অভিযোগ করেনি।
পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনি ক্যাস্প। স্পোর্টিং ক্লাব, যুব সংঘ কিংবা উপ নির্বাচনি ক্যাম্প নামে গড়ে ওঠা এসব ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের। ঘর কিংবা চালা তৈরি করে প্রার্থীর ছবিসহ পোস্টার-ব্যানার লাগানো এসব ক্যাম্প জমজমাট থাকছে রাতভর। বিশেষ করে ক্যাম্পগুলোতে টিভি এনে খেলা দেখার সুযোগ করে দেওয়ায় বিশ্বকাপের উন্মাদনায় চলছে ভোটের প্রচারণা। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা। প্রচারাভিযান ও কার্যালয় স্থাপনের ক্ষেত্রে নিয়ম মানছেন না প্রার্থীরা। সচেতন মহল বলছেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় এখনই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তফশীল ঘোষাণার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রার্থীদের সকল প্রকার মিছিল-মিটিং ও শোডাউনের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া প্রার্থীদের লাগানো সকল ধরণের প্রচারণা সামগ্রী অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক আবদুল বাতেন রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এই নির্দেশনার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো নির্বাচন কমিশন থেকেও মনিটরিং করা হবে। কোথাও কোনাে ধরণের অনিয়ম হলে ভোট কেন্দ্র বন্ধসহ পুরো নির্বাচন বন্ধের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। সিটি নির্বাচন আইনবিধি অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের আগে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর এ ধরণের প্রচারের কোনো সুযোগ নেই। এসময় নির্বাচন সংক্রান্ত দেয়াল লিখন, পোস্টার, বিলবোর্ড, ব্যানার, তোরণ ও গেট তৈরি পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এছাড়া ভিডিও প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রচার, সড়কে যানজট থামিয়ে প্রচারণা এবং ভোটারদের মধ্যে খাবার বিতরণ নির্বাচনি আচরণবিধির লঙ্ঘন। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর পরিবেশে রংপুর সিটি নির্বাচন উপহার দেওয়া কমিশনের চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি এজন্য সবার সহযোগিতাও চান।
২০৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রংপুর সিটিতে পুরাতন পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন ১৮টি ওয়ার্ড। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি ওয়ার্ডেই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে অস্থায়ী নির্বাচনী ক্যাম্প গড়ে তোলা হয়েছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তিনটি মৌজা বাহাদুর সিংহ, কোবারু ও চব্বিশ হাজারী এলাকায় এমন ক্যাম্প রয়েছে ১৫টি। সে হিসেবে গড় করলে দেখা যায়, রংপুর সিটির ৩৩টি ওয়ার্ডে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ক্যাম্প রয়েছে ৪৯৫টি। নগরের পল্লী অঞ্চলের সেশিরভাগ ওয়ার্ড গুলোর একই চিত্র। আর পাশাপাশি একাধিক প্রার্থীর পক্ষে ক্যাম্প থাকায় প্রতি মুহূর্তে উত্তেজনাও ছড়াচ্ছে।
রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের উপ পরিচালক নাছির চৌধুরী বলেন, ৯ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের আগে এমন নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ নেই। তবে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে অভিযোগ করেনি। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে রংপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ১০ প্রার্থীসহ ২৪১ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ১১টি সংরক্ষিত আসনের বিপরীতে ৬২ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ৩৩টি সাধারণ আসনের বিপরীতে ১শ’ ৬৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন মোট ২৭৭ জন। এই সিটি নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী ৪ ডিসেম্বর আপিল আবেদনের শেষ দিন, ৮ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার । প্রতীক বরাদ্দ ৯ ডিসেম্বর। ভোটগ্রহণ ২৭ ডিসেম্বর।
বিভি/রিসি
মন্তব্য করুন: