• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ০১ মে ২০২৪

নোয়াখালীতে বিএনপির বিক্ষোভে সংঘর্ষ: ১৬ মামলায় আসামি ৪ হাজার

নোয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ১৩:০৮, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
নোয়াখালীতে বিএনপির বিক্ষোভে সংঘর্ষ: ১৬ মামলায় আসামি ৪ হাজার

তেল, গ্যাস, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে দেশব্যাপি কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছে বিএনপি। নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলায়ও গত কয়েকেদিন ধরে কর্মসূচি পালন করছে দলটি। গত ২২ আগস্ট জেলার সুবর্ণচর উপজেলায় বিশাল সমাবেশ করে বিএনপি। কিন্তু পর দিন জেলা সদরে বিএনপির একটি মিছিলে পুলিশি বাঁধাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। যা পরবর্তীতে অন্যান্য উপজেলাতেও প্রভাব ফেলে। এর পর জেলার কোম্পানিগঞ্জ ছাড়া আর কোনো উপজেলায়ই নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন করতে পারেনি দলটি। সংঘর্ষ হয়েছে চাটখিল, সোনামুড়ি, সেনবাগ উজেলায়। ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে বেগমগজ্ঞ উজেলায়।

এসব কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন উপজেলায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া , হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনায় জেলার বিভিন্ন থানায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনসমূহের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে বেগমগজ্ঞ মডেল থানায় ৩টি, সুধারাম মডেল থানায় ৪টি, সোনাইমুড়ি থানায় ৫টি, সেনবাগ থানায় ২টি ও চাটখিল থানায় ২টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় চার হাজার। এর মধ্যে এজাহারনামীয় প্রায় ১ হাজার ও অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৩ হাজারের মতো নেতাকর্মীকে। এ পর্যন্ত এসব মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ১২৪ জনকে।

এসব মামলার আসামির তালিকায় আছেন বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব এ এম এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমান ও মামুনুর রশিদ, জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আবদুর রহমানসহ জেলা পর্যায়ের জ্যেষ্ঠ নেতারা। এসব মামলায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ৬৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। এ ছাড়া জেলায় চলমান বিশেষ অভিযানে আরও অন্তত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) জেলা শহরে সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ ঘিরে শহরের জামে মসজিদ মোড় ও পৌর বাজারের সামনে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলার চেষ্টার অভিযোগে চারটি মামলা হয়। চার মামলায় জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার, সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানসহ ১ হাজার নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এইসব মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৬১ জনকে।

এরপর গত শুক্রবার (২৬ আগস্ট) চাটখিল উপজেলার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির সমাবেশের মঞ্চ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ওই সমাবেশে আসার পথে হামলায় আহত হন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু হানিফ, সদস্য সচিব শাহজাহান রানাসহ কমপক্ষে ৩৫ জন নেতা-কর্মী। এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন বিএনপি নেতারা। তবে শুক্রবার বিকেলের ওই ঘটনার পর রাতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে একটি ও আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান বাদী হয়ে দুটি মামলা করেন। মামলা দুটিতে আসামি করা হয় ৩৪৯ জনকে। এর মধ্যে ১৯ জন এজাহারনামীয় আসামি। বাকিরা অজ্ঞাতনামা। এই দুই মামলায় পুলিশ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে।

গত শনিবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে সোনাইমুড়ী উপজেলায় বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে হামলাকে কেন্দ্র করে বিএনপি-আওয়ামী লীগ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ নেতা-কর্মী আহত হন। এ ঘটনায় পাঁচটি মামলা হয়। মামলায় এজাহারনামীয় আসামি করা হয় ৩৪৫ জনকে। অজ্ঞাত আসামি করা হয় প্রায় ১ হাজার জনকে। এসব মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপির ১৭ জন।

সোমবার (২৯ আগষ্ট) সেনবাগ উপজেলার ডমুরুয়া ইউনিয়নের গাজীরহাট মোড় এলাকার বিএনপির একাংশ (জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমানের অনুসারী) বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। একই সময় গাজীরহাট মোড়ে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে সমাবেশের ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। বিকেল চারটার দিকে দুটি বিক্ষোভ মুখোমুখি হলে একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ নিয়ে সংঘর্ষের একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও তিনটি দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগানের ৮টি গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়। ওই দুই মামলায় বিএনপির প্রায় ১ হাজার নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭৪ জন এজাহারনামী আসামি। মামলা দুটিতে ১৮ জনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ।

এদিকে বুধবার (৩১ আগস্ট) বেগমগজ্ঞ উপজেলা স্টেডিয়ামে বিএনপি তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরে একই স্থানে আওয়ামী লীগও পাল্টা সমাবেশ আহবান করলে উপজেলার প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। ফলে বিএনপি তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। তবে ১৪৪ ধারা জারি এলাকার বাহিরে উপজেলার নরোত্তম ইউনিয়নে বিএনপি সংক্ষিপ্তভাবে একটি সভা করে। যেখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্যাহ বুলু বক্তব্য রাখেন। ওই উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে স্থানীয় বিএনপি একটি মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটে। বিএনপিও পাল্টা প্রতিরোধ করে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে দায়ী করা হলেও থানায় হওয়া ৩টি মামলায় আসামি করা হয়েছে অন্তত ৪৫৮ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে। এর মধ্যে এজাহারনামীয় ৫৮ জন ও অজ্ঞাত ৪০০ জন। গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ২২ জনকে।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, সুবর্ণচরে বিএনপির সমাবেশে জনসমাগম হয়েছিল আশাতীত। এতে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ প্রশাসনের চোখ কপালে উঠে যায়। তারা বিএনপির অন্যান্য উপজেলার কর্মসূচি বানচাল করার নীলনকশা করে। যার অংশ হিসেবে চাটখিল, সোনাইমুড়ী ও সেনবাগে বিএনপির বিক্ষোভে হামলা করে। বেগমগজ্ঞে ১৪৪ ধারা জারি হরা হয়।

আবদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ ও আওয়ামী লীগ এখন একই এজেন্ডা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে। তারা নিজেরা ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা দিচ্ছে। 

মামলাগুলোকে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক দাবি করে অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানান তিনি।

বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক খায়রুল আনম সেলিম বলেন, বিএনপি যে অভিযোগ করেছে তা মিথ্যা। তারা আন্দোলনের নামে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। বিভিন্ন সভায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তি করে জঘন্য ভাষায় কথা বলেছে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনসমূহের বিরুদ্ধে আপত্তিজনক মন্তব্য করেছে। তারপরও আমরা ধৈর্য্য ধারণ করছি। কোথাও কোথাও বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে গত কয়েক দিনের ঘটনাগুলো ঘটেছে।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে মন্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

বিভি/কেএস

মন্তব্য করুন: