• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

১১ দিনেও নেই ঘাতকের সন্ধান, হীরার ভাইয়ের প্রশ্ন: দায় নেবে কে?

গবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ২ জুলাই ২০২৫

ফন্ট সাইজ
১১ দিনেও নেই ঘাতকের সন্ধান, হীরার ভাইয়ের প্রশ্ন: দায় নেবে কে?

ছবি: গণ বিশ্ববিদ্যালয়

একটা কাভার্ড ভ্যান হেঁচড়ে নিয়ে গেলো প্রায় ৫০ গজ। পিষ্ট হলো শরীর, ফেঁটে গেলো মাথা। আজ ১১ দিন ধরে হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) শিক্ষার্থী সুমাইয়া স্বর্ণা হীরা (২৪)। অথচ এতো বড় একটি সড়ক দুর্ঘটনার পরও আজও শনাক্ত হয়নি ঘাতক বাহন বা চালক, হয়নি মামলা। হীরার ভাইয়ের প্রশ্ন- ‘আমার বোনের এই অবস্থার দায় নেবে কে?’

ক্লাস শেষে গত ২২ জুন (শনিবার) দুপুর ২টার দিকে সাভার বাসস্ট্যান্ডে বাস থেকে নেমেছিলেন হীরা। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে ইউনাইটেড আবাসিক হোটেলের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির একটি কাভার্ড ভ্যান তাকে চাপা দিয়ে প্রায় ৫০ গজ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় হীরাকে উদ্ধার করে প্রথমে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, তবুও এখনও শঙ্কামুক্ত নন তিনি।

সুমাইয়া স্বর্ণা হীরা(২৪) গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের  ২৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। কিছুদিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রেও (আইসিইউ) ছিলেন তিনি, তবে এখন শঙ্কা  কিছুটা কমে এসেছে। হীরার পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখনও শরীরের বাম পাশ অসাড়, মাথায় রড। এখনও স্বাভাবিক খাবার খেতে পারছেন না তিনি। বাসায় কবে ফিরতে পারবেন তারও কোন ঠিক নেই। গতকাল থেকে একটু আধটু কথা বলা শুরু করেছেন। বয়সের ভারে বাবা-মা পরিচর্যা করতে পারছেন না হীরার। বড় ভাই মেহেদী হাসান মানিককেই সব করতে হচ্ছে। 

হীরা লড়ছেন জীবনের জন্য। আর পরিবারের সদস্যদের লড়তে হচ্ছে তার চিকিৎসার জন্য, তাকে পরিচর্যার জন্য। এসবের মধ্যেও ঘটনার পরপরই ভুক্তভোগীর ভাই সাভার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে এখনও চিহ্নিত হয়নি ঘাতক বাহনটি, রেকর্ড হয়নি কোন মামলা। থানা-পুলিশের কাজে গাফলতির অভিযোগ হীরার পরিবারের।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী লাবণ্য বলেন, রাস্তা পার হওয়ার সময় হঠাৎ করে একটি কাভার্ড ভ্যান হিরাকে চাপা দিয়ে টেনে নিয়ে যায়। মাথা ফেটে যায়, শরীর থেঁতলে যায়। আমরা চাই হীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক। ঘাতক চালকের শাস্তি চাই আমরা।

হীরার ভাই মো. মেহেদী হাসান মানিক বলেন, ‘১১ দিনেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। আমরা অভিযোগ করতে গেলে কেউ বলেন রমনা থানায় যান, কেউ বলেন হাইওয়ের মামলা। অথচ আমাদের দিয়ে স্বাক্ষর নেওয়া হয়, দেওয়া হয় এক কর্মকর্তার নাম ও নম্বর।’

বোনের শারীরিক অবস্থার কথা বলতে গিয়ে ভাই মানিকের কণ্ঠ কেঁপে ওঠে, ‘ছোটবেলায় যাকে কোলে করে সুজি খাওয়াতাম, আজ তাকেই নাকে নল দিয়ে দুধ খাওয়াতে হয়। মাথায় রড, বাম পাশ অবশ। আমি শুধু জানতে চাই, এই অবস্থার দায় কে নেবে?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনো ক্ষতিপূরণ চাই না, গাড়িও না। আমি চাই দোষী চালক অনুতপ্ত হোক, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো হীরা রাস্তায় না হারায়। তিন মাস পর হীরার খুলির অস্ত্রোপচার হবে। তখন যেন অন্তত একটি কেবিন পাই, এটাই একজন ভাইয়ের অনুরোধ।’

মানিক জানান, ‘বাবা-মা বয়সের ভারে ন্যুব্জ। আমি একাই সব সামলাই। ওষুধ, খাবার, হাসপাতাল সব কিছু। দোয়া করবেন, যেন হীরা সুস্থ হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুয়েল মিয়া বলেন, আমাদের কাছে আসা প্রতিটি অভিযোগ অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে তদন্ত করা হয়। সত্য-মিথ্যা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যে অভিযোগটি দেওয়া হয়েছে, সেটা যার কাছে দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গেই কথা বলতে হবে। অভিযোগকারী তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কি না, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে তদন্তে বিলম্বের কোনো প্রশ্ন নেই। কেউ যদি দেরি করেন কিংবা যোগাযোগ না করেন, সেটি তার বিষয়।

গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা আগামীকাল থানায় গিয়ে অভিযোগ গ্রহণে অগ্রগতি নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করবেন।

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2