বাংলাদেশি দাবি করে ভারতীয় বাংলাভাষীদের আটক ও বাংলাদেশে পুশ-ইন করছে ভারত

ছবি: সংগৃহীত
ভারতে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে বাংলা ভাষাভাষী অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর চলমান নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার (১৬ জুলাই) কলকাতায় এই প্রতিবাদ মিছিলের নেতৃত্ব মুখ্যমন্ত্রী নিজেই দেন।
এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাস্তায় নেমে মিছিলে অংশ নেন। এই পদযাত্রা দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে কলকাতার কলেজ স্কয়ার থেকে শুরু হয়ে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং-এ গিয়ে শেষ হয়।
মিছিলের সময় প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রুট জুড়ে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল। রুটের দু’ধারে ব্যারিকেড স্থাপন করা হয়। আশপাশের ভবনগুলোতে মোতায়েন ছিল অন্তত ১,৫০০ পুলিশ সদস্য। এদিকে, মিছিলের কারণে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটলে শহরের কেন্দ্রস্থলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ট্রাফিক ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
ভারতের ওড়িশা রাজ্যে ৪০০ জন বাংলা ভাষাভাষীর নাগরিককে আটক করার পর এই প্রতিবাদ শুরু হয়। তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, আটক হওয়া ব্যক্তিদের ভেতর অন্তত ২০০ জন পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা অভিবাসী শ্রমিক, যারা বাংলাদেশের নাগরিক নন।
জনসমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, বিজেপি বারবার বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের বাংলাদেশি বা রোহিঙ্গা বলছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের বাসিন্দা। তাদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের মেলানো অনুচিত। তার দাবি, রাজ্যের প্রতিটি মানুষের সঠিক পরিচয়পত্র রয়েছে। তারা ভারতের বৈধ নাগরিক।
মমতা আরও বলেন, যারা কাজের জন্য রাজ্যের বাইরে গেছেন তারা স্বেচ্ছায় নয় বরং দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন। অথচ এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, কেউ বাংলায় কথা বললেই তাকে আটক করা হচ্ছে, জেলে পাঠানো হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তবে কি পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অংশ নয়?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপির বাঙালিদের প্রতি এই অবজ্ঞাসূচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখে তিনি গভীরভাবে মর্মাহত ও লজ্জিত। এদিকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা সদরেও তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়।
ভারত সরকার যাদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলে মনে করছে তাদের গণহারে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা শুরু করেছে। এদিকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, সরকার যাকে-তাকে খেয়ালখুশিমতো বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় অনেক ভারতীয় নাগরিকও আক্রান্ত হচ্ছেন।
সরকারি তথ্য অনুসারে, মে মাস থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যে বসবাসরত ৩০,০০০ মানুষের ভেতর ইতোমধ্যে ৩০৩ জনকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হয়েছে। এই সংখ্যাটি বিভিন্ন ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের রায় অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।
এই ঘটনাগুলোর প্রতিক্রিয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এগুলো রাজনৈতিক স্বার্থে প্ররোচিত। তিনি কেন্দ্র সরকারকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্কবার্তা দেন।
নির্বাচনে আর মাত্র এক বছরেরও কম সময় বাকি রয়েছে। ফলে তৃণমূল কংগ্রেস এখন সংগঠনকে মজবুত করে ভোটারদের মন জয় করতে সচেষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। অন্যদিকে তৃণমূলের দাবি বিজেপি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ভাষাভিত্তিক বৈষম্য সৃষ্টি করছে। বেআইনিভাবে মানুষকে আটক করছে এবং বাংলা ভাষায় কথা বলা মানুষদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: