সামরিক খাতে চাহিদা, মিয়ানমার থেকে খনিজ আমদানি বাড়াচ্ছে চীন

ছবি: সংগৃহীত
মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের দখলে থাকা অঞ্চলে বিরল খনিজ আহরণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। স্যাটেলাইট ছবি এবং পানি বিশ্লেষণের ফলাফলে এমনটাই দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা। এর ফলে থাইল্যান্ডের একাধিক নদীতে বিষাক্ত ভারী ধাতুর উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। থাইল্যান্ডের নদী ও তার শাখা নদীগুলোর পরিবেশের ওপর এই দূষণের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।
বিশ্বব্যাপী বিরল খনিজ পরিশোধনে চীন শীর্ষস্থানীয় হলেও এই খনিজের একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তারা তাদের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে আমদানি করে থাকে। বহু বছর ধরে এসব খনি স্থানীয় পরিবেশ এবং মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে।
মানবাধিকার সংস্থা এসএইচআরএফ-এর মুখপাত্র জানান, খনন কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। খননকারীরা পরিবেশ কিংবা নিচের দিকে অবস্থিত থাইল্যান্ডের বাসিন্দাদের প্রতি কোনো ধরনের দায়িত্বশীল আচরণ দেখাচ্ছে না।
মিয়ানমার থেকে আসা দূষণের প্রতিবাদে থাইল্যান্ডের চিয়াং রাই প্রদেশে জুন মাসে প্রায় ১,৫০০ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে এবং চীন ও থাই সরকারের সক্রিয় হস্তক্ষেপের দাবি জানায়। নদীর পানি হলুদ-কমলা রঙ ধারণ করলে থাই কর্তৃপক্ষ তা পরীক্ষা করে দেখে। পরীক্ষার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) জানায়, পানিতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে আর্সেনিক ও সিসা রয়েছে। এছাড়াও অঞ্চলের আরও কয়েকটি নদীতেও দূষণের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
গবেষকরা জানান, ৭টি ভিন্ন স্থান থেকে পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে। ফলাফলে দেখা যায়, পানির নমুনায় মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যে অবস্থিত বিরল খনিগুলোর ভারী ধাতুর একটি নির্দিষ্ট ধরণের অস্তিত্ব রয়েছে। বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, নদীর মোট দূষণের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই বিরল খনিজ উত্তোলন কার্যক্রম থেকে উদ্ভূত।
এই খনিগুলোর বেশিরভাগই এক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণাধীন। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী চীনের সীমান্ত ঘেঁষা এসব অঞ্চলে প্রবেশ করতে পারে না। স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে চীন ও থাইল্যান্ডের সীমানার কাছাকাছি এলাকায় প্রায় ২৮টি নতুন খনি পাওয়া গেছে।
ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির গবেষক প্যাট্রিক মিহান জানিয়েছেন, মিয়ানমারে খননকারী কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন বা তদারকির কোনো ব্যবস্থা নেই। এর ফলে পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা খুব বেশি।
এই খনিগুলোতে কেমিক্যাল ঢুকিয়ে বিরল খনিজ উত্তোলন করা হয়। এরপর ওই তরল মিশ্রণ বিশাল পুকুরে জমা রাখা হয়। সেখান থেকে পরে খনিজ আলাদা করা হয়। তবে এই পদ্ধতির কারণে প্রায়ই নদী ও ভূগর্ভস্থ পানির উৎস দূষিত হয়ে পড়ে। এর প্রভাবে অনেক ছোট নদী ও খাল শুকিয়ে গেছে, মাছ নিঃশেষ হয়ে গেছে, ধানের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে এবং অনেক বন্যপ্রাণী মারা যাচ্ছে।
এই সমস্যা সমাধান করতে থাই সরকার চীন ও মিয়ানমারের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি এবং সামরিক খাতে ব্যবহারের জন্য মিয়ানমারের বিরল খনিজের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীন পরিবেশগত কারণে নিজ দেশে খনিজ উত্তোলন হ্রাস করে এখন মিয়ানামার থেকে বেশি পরিমাণে এসব খনিজ আমদানি করছে। ২০২৩ সালে মিয়ানমার থেকে রেকর্ড পরিমাণে বিরল খনিজ আমদানি করেছে চীন।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: