তারাবিহ নামাজের নিয়ম, দোয়া ও মোনাজাত
মুসলিম উম্মাহর জন্য রমজান আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে মহা অনুগ্রহের মাস। অন্য মাসগুলোর তুলনায় এই মাসের মর্যাদা অনেক বেশি। এই মাসের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো কিয়ামুর রমজান তথা তারাবিহ নামাজ।
তারাবিহ নামাজ পড়ার নিয়ম:
তারাবিহ নামাজে দুই রাকাআত করে প্রতি ৪ রাকাআত পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম করা, এ সময় দোয়া করা এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা উত্তম।
আরও পড়ুন: চাঁদ দেখা গেছে, রোজা শুরু আগামীকাল
তারাবিহ নামাজের নিয়ত:
نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা, রাকাআতাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।
অর্থ: আমি কেবলামুখি হয়ে দু’রাকাত তারাবির সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করছি; আল্লাহু আকবার।
নিয়ত আরবিতেই করতে হবে-এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বাংলাতে নিয়ত করা যাবে।
তারাবিহ'র বিশেষ দোয়া:
তারাবিহ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘বিশ্রাম করা’। প্রতি চার রাকাআত নামাজ শেষ করে যাতে একটু বিশ্রাম গ্রহণ করা যায় তাই একে তারাবিহ বলা হয়। বিশ্রামের এই সময়ে নিচের এই দোয়াটি পড়ার প্রচলন রয়েছে। তবে এই দোয়াই পড়তে হবে-এমন বাধ্যবাধকতা নেই। এটি ছাড়াও যেকোনো দোয়া পড়া যাবে।
আরও পড়ুন: এক বছরে দুই রমজান!
سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ
উচ্চারণ : ‘সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।’
অর্থ: আল্লাহ পবিত্রময় সাম্রাজ্য ও মহত্ত্বের মালিক। তিনি পবিত্রময় সম্মান মহত্ত্ব ও প্রতিপত্তিশালী সত্তা। ক্ষমতাবান, গৌরবময় ও প্রতাপশালী তিনি পবিত্রময় ও রাজাধিরাজ যিনি চিরঞ্জীব, কখনো ঘুমায় না এবং চির মৃত্যুহীন সত্তা। তিনি পবিত্রময় ও বরকতময় আমাদের প্রতিপালক, ফেরেশতাকুল এবং জিবরাইলের (আ.) প্রতিপালক।
তারাবিহ নামাজের মুনাজাত:
তারাবিহ নামাজ শেষে (কেউ কেউ ৪ রাকাআত পরপর) একটি বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে মোনাজাত করার প্রচলন আছে। অনেকেই এই মোনাজাতটিকে আবশ্যক মনে করেন। কেউ কেউ এমনও মনে করেন যে, এ দোয়াটি ছাড়া তারাবিহ নামাজের মুনাজাত হবে না। তবে এটি মোটেও ঠিক নয়। আবার এই দোয়ার মাধ্যমে মোনাজাত করলে গুনাহ হবে তাও নয়। মুনাজাতটি হলো-
اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ - اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ
আরও পড়ুন: রোজা রাখলে স্বাস্থ্যের কী উপকার হয় জেনে নিন
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
অনেক জায়গায় তারাবিহ নামাজ তাড়াহুড়ো করে আদায় করা হয়। অথচ তারাবিহ নামাজ ধীর স্থিরভাবে আদায় করাই হলো নিয়ম। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর তারাবিহ নামাজ ছিলো অনেক দীর্ঘ। হাদিসে এসেছে-
হজরত সাঈর ইবনে ইয়াযিদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তারাবিহতে শত শত আয়াত পড়তেন। ফলে সুদীর্ঘ সময় দাঁড়ানোর কারণে আমরা লাঠির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। (মুয়াত্তা মুহাম্মদ)
তাই প্রতিযোগিতা করে তারাবিহ পড়ার প্রবণতা পরিহার করা উচিত।
বিভি/এমএস
মন্তব্য করুন: