• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

সহজ হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার

প্রকাশিত: ১৮:২০, ১৩ মে ২০২১

আপডেট: ১৮:২৭, ১৩ মে ২০২১

ফন্ট সাইজ
সহজ হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে যখন সবাই ঘরবন্দি হয়েছেন তখনও অনলাইনে সরকারি-বেসরকারি কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে, আদালত বন্ধ থাকলেও চলেছে বিচারকাজ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও না খুললেও বন্ধ হয়নি লেখাপড়া; এমনকি দৈনন্দিন কেনাকাটার মতো নৈমিত্তিক কাজগুলোও অনলাইনে সেরেছেন নাগরিকরা। এর সবই সম্ভব হয়েছে তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার কারণে। 

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সরকার যে রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেছিলো, সেই ঘোষণার আলোকে শুধু শহর নয়, এরইমধ্যে জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা, মোবাইল মানি ট্রান্সফার, বিমানের টিকিট, ই-টেন্ডারিংসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বাণিজ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান:

গত বছরের ডিসেম্বরে একসেস টু ইনফরমেশন-এটুআই প্রকল্পের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় জানিয়েছেন, প্রায় ১২-১৩ কোটি নাগরিক ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। এসবের পেছনে অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। তাঁদের কল্যাণেই শহর ছাড়িয়ে গ্রামের প্রতিটি নাগরিকের দোরগোড়ায় অর্থাৎ বাসা-বাড়ি অফিস-আদালতে পৌঁছেছে ইন্টারনেট সংযোগ। এসব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের অধীনে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো যুবকের। তাঁদের আয় একেকটি পরিবারের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। 

সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগ, সৌন্দর্য বর্ধনের কথা বলে প্রায়ই কাটা হয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ডিশ ও ইন্টারনেট কেবল। এতে একদিকে সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে কোটি কোটি গ্রাহকের, অন্যদিকে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকায় 'অলটারনেটিভ নেটওয়ার্ক'-এ কাজ করেন মেহরাব হোসাইন সাকিব। তিনি বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, গত অক্টোবরে রাজধানীতে ঝুলন্ত তার কেটে দেয়া হয়। পরে নতুন সংযোগ দিতে অনেক খরচ হয় মালিকের। মালিকের আর্থিক ক্ষতির প্রভাব আমাদের উপর পড়ে। নিয়মিত বেতন হয় না। এই ঈদে বেতন-বোনাস পাইনি। গ্রামে বাবা-মা রয়েছেন, তাঁদের জন্যও কিছু কিনতে পারিনি।

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)-এর সভাপতি আমিনুল হাকিম বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, আমরাও চাই মাটির নিচ দিয়ে বাসা-বাড়ি ও অফিসে সংযোগ দিতে। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না করে বিভিন্ন সময় হুটহাট লাইন কেটে দেওয়ায় বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। ফলে মাসকে মাস অফিস ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন বকেয়া থেকে যায়।

কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)-এর প্রতিষ্ঠাতা এস এম আনোয়ার পারভেজ বলেন, রাজধানীর ৫টি এলাকা ছাড়া কোথাও নেই ভূগর্ভস্থ কেবল লাইন। সেই লাইন কিছুদূর গিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সামনেই শেষ হয়েছে। এজন্য বাড়ি বাড়ি সংযোগ দেয়ার জন্য তারগুলো উপর দিয়েই টানতে হচ্ছে। সরকার যদি আমাদের তার টানার জন্য মাটির নীচে ভায়াডাক্ট বা কমন একটা রাস্তা করে দেয় তাহলে আমরা সেটাই ব্যবহার করবো, যেটা মানুষের বাড়ি বাড়ি পর্যন্ত যাবে। প্রয়োজনে ভাড়াও দেবো। কোনো অবকাঠামো তৈরি না করে যদি লাইন কেটে দেয়, আমরা তো পথে বসে যাবো। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে প্রতিশ্রুতি তা বাস্তবায়নও ব্যাহত হবে।

ইউটিউব:

ভিডিও প্রকাশের সবচেয়ে বড় অনলাইন মাধ্যম ইউটিউবে সময় দেন না এমন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারণ, এটি এখন বিনোদন, খবর, শিক্ষা, বিপণন ও আয়ের বড় উৎসও। এই মাধ্যমে বহুমাত্রায় আয়ের পথ থাকায় বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে প্রবল ঝোঁক সৃষ্টি করেছে, আয়ের বড় ক্ষেত্রও সৃষ্টি হচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী তরুণরাই এ ক্ষেত্রে অগ্রগামী। শুধু প্রতিষ্ঠান কিংবা শিক্ষিত বেকার নন, অনেকে চাকরি বা ব্যবসার পাশাপাশি বিকল্প আয়ও করছেন উদ্ভাবনী উদ্যোগের মাধ্যমে। ফলে জনবহুল এই দেশের বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দারুণ সুযোগও হাতছানি দিচ্ছে ইউটিউবে। ব্যক্তিগত চ্যানেল থেকেও শীর্ষ ইউটিউবাররা মাসে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করেন। এসব সহজ হয়েছে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কারণে।

ফেসবুক ও ফ্রিল্যান্সিং:

বিবিসি'র তথ্য অনুযায়ী, দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারী ৬ কোটির বেশি। গড়ে উঠেছে এফ-কমার্স বা ফেসবুক-ভিত্তিক ব্যবসা। এর বাইরে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের একটি বড় অংশ ফ্রিল্যান্সার। দেশে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। এর বাইরে রয়েছেন সফটওয়্যার খাতের উদ্যোক্তারা। এ খাতে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় আসছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আরেক বড় অগ্রগতি হয়েছে নারীদের তথ্যপ্রযুক্তিতে যুক্ত করার বিষয়টি। এ ছাড়া ই-কমার্স ও এফ-কমার্স খাত দেশে প্রসারিত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নারী উদ্যোক্তাদের উপস্থিতি বাড়ছে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) বলছে, এখন দেশে প্রায় ২০ হাজারের বেশি ফেসবুক পেজে কেনাকাটা চলছে। এর মধ্যে ১২ হাজারের বেশি পেজ চালাচ্ছেন নারীরা। ফেসবুককে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে স্বল্প পুঁজিতেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন নারীরা।

ই-ক্যাবের তথ্যমতে, গত এক বছরে ই-কমার্স খাতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। দেশে সফটওয়্যার খাতের একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বা বেসিসে সদস্য কোম্পানি রয়েছে ১ হাজার ২০০টি। এর মধ্যে ৬০টি কোম্পানিতে শেয়ার ও কোম্পানির বোর্ডে রয়েছেন নারী উদ্যোক্তারা। দেশের তথ্যপ্রযুক্তিতে অন্যতম একটি খাত বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও। খাতটিতে কাজ করছেন অন্তত ৩৫ হাজার তরুণ-তরুণী।

রাজধানীর কল্যাণপুরে ফেসবুকভিত্তিক ই-কমার্স 'ড্রেস ডিলিং হার্ট'-এর সত্ত্বাধিকারী লাবনী আক্তার বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, ব্রডব্যান্ডের সংযোগ থাকায় আমাদের কাজ সহজ হয়েছে। লাইভ স্ট্রিমিংয়ে কোনো ধরণের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। ঈদুল ফিরতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি হয়েছে।

জীবনমানে পরিবর্তন:

দেশে মানুষের জীবনে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' ধারনার বড় প্রভাবও দেখা গেছে। বড় পরিবর্তন এনেছে উবার-পাঠাওয়ের মতো রাইড শেয়ারিং সেবা চালু হওয়ায়। এ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান যেমন বেড়েছে, তেমনি অনেকের যাতায়াতে সুবিধাও হয়েছে। স্মার্টফোন ব্যবহারকারী বাড়ায় নতুন উদ্যোক্তাও সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রেও ভূমিকা রেখেছে মোবাইল ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

তথ্য ডিজিটালাইজেশন:

জনগণের দোরগোড়ায় তথ্য ও সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের তথ্য ও সেবার ডিজিটালাইজেশনের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাস্তবায়ন হয়েছে। একইসংগে নিত্যনতুন প্রযুক্তিও চালু করছে। এরই অংশ হিসেবে ৬০০ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়েছে। অ্যাপসগুলো গুগল প্লে স্টোরে রয়েছে। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে এসব মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করছেন। সাইবার হয়রানি রোধে একটি সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে এবং এই কর্মসূচির আওতায় একটি হেল্পলাইনও চালু করা হয়েছে।

[media type="image" fid="136236" layout="normal" caption="1" infograph="1" parallax="0" popup="1"][/media]

এছাড়া করোনাকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস শাখার মাধ্যমে স্বাস্থ্য বাতায়ন নামে ন্যাশনাল হেলথ কল সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে, যার ডায়াল কোড ১৬২৬৩। এটি টেলিমেডিসিন সেবা এবং এ সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্যের জন্য জাতীয় হটলাইন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। গত এক বছরেরও বেশি সময়ে স্বাস্থ্য বাতায়নে (১৬২৬৩) এক কোটি ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৯৯ জন কল করে সেবা নিয়েছেন। এছাড়া ৩৩৩ নম্বরে এক কোটি ৫৫ লাখ ২২ হাজার ৬৬৭ জন এবং আইইডিসিআর-এর (১০৬৫৫) নম্বরে তিন লাখ ৭৩ হাজার ১৬২ জন কল করেছেন। এসব সুবিধা সম্ভব হয়েছে ইন্টারনেট ব্যবহার সহজ হওয়ায়।

জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন নম্বর ৯৯৯। যেকোনো প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে দ্রুত সেবা পাওয়া যায়। মানুষের বিপদে সহায় হিসেবে যুক্ত হওয়া এই সেবা পরিচালিত হয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে। 

বর্তমানে দেশের আইসিটি খাতের আয় ১০০ কোটি ডলার। ২০২১ সাল নাগাদ এই আয় ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এ জন্য দেশব্যাপী ২৮টি হাইটেক পার্ক করা হচ্ছে। সরকার চায়, অর্থনৈতিক-সামাজিক উন্নয়নে প্রযুক্তি ব্যবহার। পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট ফাইভ জি- এর হাত ধরেই আসবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিকস ও বিগ ডাটা অ্যানালিসিসের মতো নানান কাজ। কারণ দ্রুত গতিতে ইন্টারনেট তথ্য ডাউনলোড এবং আপলোড করা যাবে এই প্রযুক্তিতে। যার সেবার আওতা হবে ব্যাপক। এ ধরনের প্রযুক্তি আগামী এক দশক রাজত্ব করবে। 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ৯০ শতাংশ সরকারি সেবা ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার। মানুষ সেবার পেছনে ছুটবে না, সেবা পৌঁছে যাবে মানুষের হাতের মুঠোয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত ১২ বছরে দেশে একটি শক্তিশালী আইসিটি অবকাঠামো তৈরি হয়েছে, যা গ্রাম এলাকা পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে। দেশের ৩ হাজার ৮০০ ইউনিয়ন এখন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির আওতায় এসেছে।

বিভি/এমএস

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2