‘মাদক নিয়ন্ত্রণে পরিবার হলো প্রথম শিক্ষাঙ্গন’

প্রতীকী ছবি
‘মাদক নিয়ন্ত্রণে পরিবার হলো প্রথম শিক্ষাঙ্গন। পরিবার যদি তার সদস্যদের প্রতি খেয়াল রাখে তবে মাদকাসক্তের হার কমে যাবে’- আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২২ উদযাপনের অংশ হিসেবে ৭ মার্চ রাজধানীর শ্যামলীস্থ আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের আয়োজনে নারী গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা একথা বলেন।
‘এমপাওয়ারিং ওমেন ইন রিকভারি’ এই স্লোগানে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের চিকিৎসা গ্রহণ করা নারীদের গত এক বছরের তথ্য প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক টিভির প্রধান প্রতিবেদক ও ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির যুগ্ম সম্পাদক শাহানাজ শারমিন এবং বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নাসিমা আক্তার সোমা। সভায় বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতির ২০ জন নারী সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার উম্মে জান্নাত। এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের সিনিয়র সাইকোলজিস্ট রাখী গাঙ্গুলী। মূল বক্তব্যে রাখী গাঙ্গুলী বলেন, নারী মাদকাসক্তি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে চিকিৎসা নিতে আসা নারীদের মাঝে মোট ৭৬ জন মাদক নির্ভরশীল ও ৪৫ জন শুধু মানসিক চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিলো। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে তাদের মাদক গ্রহণের ধরণ, মাদক নেওয়ার কারণ এবং মাদক নেওয়ার ফলে সৃষ্ট সমস্যার একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়। পরিসংখ্যানে দেখা যায় তাদের মাদকের
পছন্দের মাঝে ২২.৬% ম্যাল্টিড্রাগ গ্রহণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি (ঘুমের ঔষধ, ইয়াবা, গাঁজা, নিকোটিন, অ্যালকোহল)। এরপর ক্রমান্বয়ে যে সকল মাদকদ্রব্য গ্রহণের প্রভাব দেখা যায় তা হলো- ঘুমের ঔষধ ১০.৯%, সিগারেট ১০.১৪%, মদ ২৮%, গাঁজা ৮.৫৮%, ফেন্সিডিল ০৩.১২%, ইয়াবা ৩.১২%, পেথিড্রিন ১.৫৬%, মরফিন ০.৭৮%। মাদক গ্রহণের জন্য যে সব কারণ নারীরা উল্লেখ করেন তা হলো- কৌতুহলবশবর্তী হয়ে, এক্সপেরিমেন্ট, অসৎসঙ্গ, একাকিত্ব, সঙ্গীর চাপ, পরিবারের অন্য সদস্য বা বয়ফ্রেন্ড মাদক গ্রহণে অভ্যস্ত থাকলে, বিষন্নতা, হতাশাগ্রস্থ হলে, অতিরিক্ত রাগ-জেদ ইত্যাদি । এক্ষেত্রে তাদের মাদক পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় পরিবারের এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকাটাও একটা কারণ হিসেবে দেখা যায়। মাদক নির্ভরশীলতার ফলাফল হিসেবে বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা তৈরি হয়। এর ফলে নারীরা বিভিন্ন ধরণের সমাজ ও আইনবিরোধী কাজের সঙ্গেও যুক্ত হয়ে যাচ্ছেন।
নাগরিক টিভির প্রধান প্রতিবেদক ও ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির যুগ্ম সম্পাদক শাহানাজ শারমিন বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে পরিবার হলো প্রথম শিক্ষাঙ্গন। বাবা-মা যদি তাদের সন্তানদেরকে গাইড করেন তবে তাদের সন্তান মাদকাসক্ত হতে পারে না। ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সঙ্গে আমার ১৫ বছরের পথচলা। তারা অনেক কাজ করলেও প্রচারবিমুখ। আমরা গণমাধ্যমকর্মীরাই পারি তাদের কার্যক্রমকে সবার মাঝে প্রচার করে সাধারণ মানুষদেরকে জানার সুযোগ করে দিতে।
বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নাসিমা আক্তার সোমা বলেন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনকে ধন্যবাদ নারী দিবস উপলক্ষে নারী গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে এরকম একটি আয়োজনের জন্য। বিশেষত নারী মাদকাসক্তদের বিষয়টি আমাদের দেশে এখনো প্রায়শঃই প্রকাশ্যে আসে না। ফলে এই সমস্যাটির সমাধানও হয় না। এক্ষেত্রে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় যেভাবে কাজ করছে তার জন্য তাদেরকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ বলেন, বিশ্বব্যাপী নারী ও শিশুদেরকে স্পেশাল ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মাধ্যমে আমরা মাদকাসক্ত নারীদের জন্য পুর্ণাঙ্গ এই সেন্টারটি পরিচালনা করছি, যেখানে কেবল নারীদের দ্বারাই নারী মাদকাসক্তদের চিকিৎসা করা হয়। যেহেতু মাদকনির্ভরশীলতা একটি অসুস্থতা বিধায় মাদকমুক্তরাও পুনরায় আসক্ত হতে পারে, সেহেতু হতাশ না হয়ে পুনরায় চিকিৎসা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সমাজের সব পর্যায় থেকে সচেতনায় কাজ করতে হবে। তবেই মাদকনির্ভরশীল নারীদের চিকিৎসা শেষে সমাজের মূলধারায় সঠিকভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেন।
বিভি/এএন
মন্তব্য করুন: