• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

সিলেটের হাওরে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ চান পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১৭:৪৫, ২৭ অক্টোবর ২০২২

আপডেট: ১৮:১২, ২৭ অক্টোবর ২০২২

ফন্ট সাইজ
সিলেটের হাওরে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ চান পরিবেশমন্ত্রী

সিলেটের হাওরে অনেক বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়। নৌযানেও অনেক দূষণ হচ্ছে। এটা বন্ধে আমরা কঠোর হবো।  জলযানের কারণে নদী ও সমুদ্র এলাকায় শব্দ দূষণ যেন কম হয় সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে বলে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।

তিনি বলেন, শব্দ যোগাযোগের মাধ্যম। শিশুরা জন্মের পর কান্না করে, এতে আমরা বুঝি সে স্বাভাবিক আছে। শব্দ না করলে বা কান্না না করলে আমরা বুঝি শিশুটি স্বাভাবিক নেই, সুস্থ নেই। অর্থাৎ শব্দের মাধ্যমে আমরা নিজ অবস্থান বুঝাই। কিন্তু সেই শব্দ যখন বেশি হয়ে যায় তখনি সেটি দূষণের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এই দূষণের কারণে বধিরতাসহ প্রায় ৩০ ধরনের শারীরিক সমস্যাও হয়। 

বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) সিলেট জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সচেতনতামূলক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালিত  ‘শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারীত্বমূলক প্রকল্প’-এর আওতায় সারাদেশে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ণ করছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ণ কেন্দ্র (ক্যাপস) ও ইকিউএমএস কনসাল্টিং লিমিটেড। প্রকল্পের আওতায় অন্য জেলাগুলোর মতো সিলেট মহানগরীতে শব্দ দূষণের ওপর জরিপও করছে তারা।

পরিবেশমন্ত্রী আরও বলেন, গবেষকদের তথ্য মতে দেশে ২০ শতাংশ মানুষ এখন বধির। আমরা শব্দ দূষণ করে এদের বধির করে দিয়েছি। হাইড্রোলিক হর্ন আফ্রিকার জঙ্গলে প্রাণীদের সরাতে ব্যবহার করা হয় অথচ আমরা সভ্য জাতি হয়ে সেটি ব্যবহার করে মানুষকে বধির করে দিচ্ছি। ক্ষতি থেকে বাঁচতে হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে আমাদের সবাইকে প্রতিরোধ গড়তে হবে।

অনুষ্ঠানে গাড়ি চালক এবং সাধারণ জনগণকে হাইড্রোলিক হর্ন ও অহেতুক হর্ন বাজানো বন্ধে সোচ্চার হওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেন তিনি।

এছাড়াও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে রাত ১০টার মধ্যে সীমিত করা,  আতশবাজি গান বাজনা ও ডিজে পার্টির উনমগ্নতা থেকে সরে আসতে সবাইকে অনুরোধ জানান তিনি। নির্বিচারে গাছ যেন না করা হয় এ ব্যাপারে বন অধিদপ্তরকে আরও সোচ্চার হতেও বলেন শাহাব উদ্দিন। 

সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদেকের এই পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য আমাদের দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে আমরা পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে কম কার্বন ইমিশন করে থাকি। কিন্তু শব্দ দূষণের ক্ষেত্রে আমাদের অবদান কম নয়।

তিনি আরও বলেন, সিলেটের কদমতলী থেকে বিয়ানীবাজার পর্যন্ত প্রধান প্রধান সড়কের সারারাত ধরে বাস ট্রাক চলে তবে রাত্রিকালীন সময়ে প্রয়োজনে উচ্চ মাত্রার হর্ন দেওয়া অযৌক্তিক। ৭৫ ডেসিমেল এর উপরে শব্দ উৎপন্ন করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আমাদের উচিত নিজে আইন মেনে চলা তাহলে আর প্রশাসন কর্তৃক জোরপূর্বক আইন মানার জন্য বাধ্য করা হবে না। 

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন,  শব্দ দূষণ বিষয়ক কোন কার্যক্রম বা প্রোগ্রাম সিলেট শহরে এই প্রথম। আমি এই প্রকল্পকে সাধুবাদ জানাই যেন এর মাধ্যমে আমরা সিলেট শহরে শব্দ দূষণের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে পারি। রাতে যখন আমরা ঘুমাতে যাই প্রায় শহীদ তীব্র শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায় এটি আমাদের সামাজিক রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে বেশিরভাগ সময় উৎপন্ন হয়ে থাকে।

অতিরিক্ত ডিআইজি নাবিলা জাফরিন বলেন, পারিবারিক শিক্ষা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধই পারে আমাদেরকে সচেতন করতে। ছোটবেলা থেকে যদি আমাদের অন্তরের ভিতর শব্দ দূষণের ভয়াবহতা এবং থেকে পরিত্রাণের উপায় শেখানো যায় তাহলে তরুণ প্রজন্ম ভবিষ্যতে  শব্দ  দূষণ সৃষ্টি হয় এমন কাজগুলো করবে না।

উপ পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, আফ্রিকার জঙ্গলে বন্য হাতি বা বন্য পশু তাড়ানোর জন্য হাইডোলিক হর্ন বাজানো হতো। কিন্তু আমাদের দেশে এর কতটুকু প্রয়োজনীয়তা আছে তা বোধগম্য নয়।

সড়ক নিরাপত্তা আইনের ৮৪ দ্বারা হাইড্রোলিক হর্নের ব্যাপারে জরিমানার বিধান রয়েছে সেখানে আমরা সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারি। পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৩৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে তারপরও শব্দ দূষণ করার গাছ থেকে নগরবাসীকে বাঁচানো যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী কোন অনুষ্ঠান করার পূর্বে মাইকের ব্যবহার এবং কয়টি সাউন্ড সিস্টেম লাগবে তা স্থানীয় প্রশাসন বা পুলিশ প্রশাসন থেকে অনুমতির জন্য একটি ফর্ম রয়েছে, যা জমা দিয়ে আয়োজকরা মাইকের দোকান হতে প্রয়োজন মোতাবেক মাইক ভাড়া নিতে পারেন। আমি বিভাগীয় এবং জেলা প্রশাসনসহ পুলিশের ডিআইজিকে বলব যেন এই ফর্ম পূরণ বাধ্যতামূলক করা হয়।

বিভি/কেএস

মন্তব্য করুন: