‘সোনালী বিকেলগুলো আজ আর নেই’
হাসপাতালে গেলে মনে হয়, কেউ ভালো নেই। শপিং মলে গেলে বোঝা যায়, কারও টাকার অভাব নেই। কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন-বান্দরবানের মতো জায়গায় গেলে দেখা যায়, মানুষের কেবল সুখ আর সুখ। আবার এয়ারপোর্ট গেলে মনে হয়, প্রবাস জীবনের মত কষ্টের আর কিছু নেই। বিয়ে বাড়ি বা মরা বাড়ির চিত্রও কিন্তু ভিন্ন। এক জায়গায় যুগলবন্দির আনন্দ। অন্যত্র প্রিয়জন হারানোর সুর।
মগজে মহাপ্রলয় নিয়ে, তবুও ‘ভালো থাকার প্রেশক্রিপশন’ হাতড়ে বেড়ানো, অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে যাওয়া। আর মধ্যকার সময়টুকু বেইলি রোডের আগুনে রঙিন থেকে সাদাকালো হয়ে ‘খরচার খাতায়’ পড়ে যাওয়া।
এটা কী জীবন? এমন প্রশ্ন অনেকেই ভদ্রপল্লীর ঈশ্বরের দিকে ছুঁড়ছেন, ছোঁড়েন যখন ধরিত্রীর বুকে নেমে আসে নিমতলী, চুড়িহাট্টা, নিউমার্কেট, বঙ্গবাজারসহ সদ্য ঘটে যাওয়া বেইলি রোডের মতো ট্র্যাজেডি ঘটলে।
যারা এমন প্রশ্ন করেন বা করছেন, তাদের কাছে আমার পাল্টা প্রশ্ন, আপনারা কেন আগে আওয়াজ তোলেননি এসব নিয়ে? আর নগরবিদরাই বা এখন কেন অগ্নিকাণ্ড নিয়ে সরব হলেন? আর একটু আগে কথা বললে হয়তো, এতগুলো মায়ের কোল খালি হতো না।
দায় আছে মার্কেট কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ী সবারই কম বেশি। তা না হলে আবাসিক ভবনে কেন গড়ে উঠবে রেস্টুরেন্ট? আর কারাই বা দিলো সেই লাইসেন্স?
এসমস্ত অসাধু কর্তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। নইলে হয়তো একদিন তাদের স্বজনরাও তাদের খোঁড়া এসব মৃত্যুকূপে প্রাণ হারাবে। তখন কিন্তু হাজার কাঁদলেও আর প্রিয়জন ফিরবে না। গলা জড়িয়ে হাসবে না। ফিরবে নিথর লাশ হয়ে। শুভ্র-সাদা কাফনে।
দুর্ঘটনা বলে আসে না, এটা ঠিক। তাই বলে কী আমরা এভাবেই থাকবো? সচেতন হবো না? আর ঘটনা ঘটলেই সরকারের গুষ্টি উদ্ধার করে দিনের পর দিন গালিগালাজ করতে থাকবো?
এখনও সময় আছে, আসুন বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করি। এক্সিট গেটের সঙ্গে রাখি অগ্নিনির্বাপণের উন্নত ব্যবস্থাও। নইলে কিন্তু গাইতে হবে আবারও সেই গান ‘কোথায় হারিয়ে গেলো সোনালী বিকেলগুলো সেই, আজ আর নেই।’
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী, গীতিকার ও নির্মাতা
(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: