চীবর উৎসর্গের মধ্যদিয়ে মাসব্যাপী কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু

পঞ্চশীল প্রার্থনাসহ ধর্মীয় আচার পালন ও কঠিন চীবর উৎসর্গের মধ্যদিয়ে রাঙামাটির আসামবস্তী বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণ থেকে মাসব্যাপী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড়ো ধর্মীয় অনুষ্ঠান দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু হয়েছে।
রবিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহার ও রাঙামাটি বড়ুয়া জনকল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে ২৪তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু হয়।
বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহার ও রাঙ্গামাটি বড়ুয়া জনকল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়ার পরিচালনায় ধর্ম সভায় উপস্থিত ছিলেন, রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বর, রাঙামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান রোমান, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রফিক তালুকদার প্রমুখ।
ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পঞ্চশীলের মাধ্যমে মঙ্গলাচরনের পর ভিক্ষুসংঘকে চীবর উৎসর্গ করা হয়। বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারে সমবেত প্রার্থনায় অংশ নিয়ে রাঙামাটি বড়ুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ ভিক্ষুসংঘকে চীবর দান করেন।
এর আগে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের রাঙামাটি পৌর শাখার সভাপতি ভদন্ত ধর্মকৃর্তি মহাথেরোর সভাপতিত্বে আয়োজিত দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসবে ধর্মসভায় পূণ্যার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রধান ধর্মদেশক হিসাবে ধর্মোপদেশ দেন হাটহাজারী নালন্দা বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষড, দেবপ্রিয় মহাথেরো, আশীর্বাদক হিসেবে দেশনা প্রদান করেন আসামবস্তী ধর্মচক্র বৌদ্ধ বিহারের বিহার অধ্যক্ষ শ্রীমৎ পাঞ্ঝাঞ বংশ মহাথেরো।
এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সনত কুমার বড়ুয়া, বিধান বড়ুয়াসহ অন্য নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে পবিত্র মঙ্গলাচরণ পাঠ করেন বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ করুনাপাল ভিক্ষু। এতে শত শত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল ভোরে পরিত্রাণ পাঠ, পুষ্প পূজা ও ভিক্ষুসংঘের প্রাতরাশ, জাতীয় পতাকা ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, বুদ্ধপূজা, শীলগ্রহণ, সংঘদান ও ভিক্ষু সংঘের ধর্ম দেশনা, অনুত্তর পুণ্যক্ষেত্র ভিক্ষু সংঘকে পিন্ডদান।
দুপুরে ছিল উদ্বোধনী সংগীত, দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান, পূজনীয় ভিক্ষু সংঘের ধর্মোপদেশ ও সন্ধ্যায় ফানুস বাতি উত্তোলন।
ধর্মসভা ও পঞ্চশীল গ্রহণের পর চীবর দানের মাধ্যমে ‘মুক্তির অহিংসা বাণী ছড়িয়ে যাক মানুষে মানুষে এবং সামনের দিনগুলোতে শান্তি ফিরে আসুক ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের’ এমন প্রার্থনার মধ্যদিয়ে চীবর দানের সমাপ্তি ঘটে। আর বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় প্রদীপ প্রজ্বলন ও ফানুস বাতি উত্তোলন।
উল্লেখ্য, মহামতি বুদ্ধের প্রজ্ঞাদীপ্ত শিক্ষা ‘বর্ষাবাস তথা বর্ষাব্রত’ পালনের সমাপনী অনুষ্ঠান শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা এবং দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব হলো বৌদ্ধদের অতি পবিত্র ও মাহাত্ম্যপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এ পূত-পবিত্র অনুষ্ঠান-উৎসবের মধ্যদিয়ে বৌদ্ধরা তথাগত গৌতম বুদ্ধের পরম কল্যাণময় শিক্ষা চর্চার ব্রত হয়। হিংসা ক্রোধ ও মোহের বদলে প্রেম দয়া ও ক্ষমায় মানুষের কল্যাণে তপস্যা ভিক্ষুদের। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্রকে বলা হয় চীবর। তাই এ বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের পরিধেয় বস্ত্রের অভাব দুর করতেই কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান। তাই বৌদ্ধদের কাছে প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান অত্যন্ত গুরুত্ববহ পূণ্যানুষ্ঠান।
বিভি/এনডি/এজেড
মন্তব্য করুন: