শরীরজুড়ে লোম, বোঝা দায় নারী না পুরুষ (ভিডিও)
ঘন লোমে ঢাকা পুরো মুখ। শরীর জুড়েও একই অবস্থা। দেখে বোঝার উপায় নেই তারা আসলে নারী নাকি পুরুষ। অথচ তারা আমাদেরই মতো মানুষ যারা স্বপ্ন দেখে, বাঁচতে চায়, চায় সমাজে মর্যাদা নিয়ে চলতে ।
জামালপুরের ইসলামপুর পৌর এলাকার উত্তর দরিয়াবাদ ফকিরপাড়া গ্রামের একই পরিবারের ১২ সদস্য ভুগছেন এক বিরল রোগে। জন্মের পর থেকে এই রোগে তাদের মুখমন্ডল ও শরীর জুড়ে অস্বাভাবিকভাবে গজিয়েছে লোম। সমাজের কাছে তারা পরিচিত এখন ‘লোম মানব’ নামে।
চরম অভাব-অনটন, সামাজিক বঞ্চনা আর কটু কথায় জর্জরিত এই পরিবার। প্রতিদিন তাদের ওপর নেমে আসে অমানবিক কষ্ট। লোমে ঢাকা মুখের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে তাদের হাসি-আনন্দ, স্বপ্ন আর জীবনের রঙ।
এই পরিবারেরই একজন শিরিন আক্তার। মুখভর্তি দাড়ি দেখে তাকে নারী না পুরুষ তা বোঝা মুশকিল। শুধু তিনি নন, তার বৃদ্ধা মা থেকে শুরু করে পরিবারের ছোট মেয়েটিও আক্রান্ত একই রোগে।
প্রতিবেশীরা তাদের এড়িয়ে চলে। সমাজের কেউ মিশতে চায় না এই পরিবারের সঙ্গে। এমনকি এই পরিবারের মেয়েদের বিয়ে হলেও শ্বশুরবাড়িতে জোটে কটুক্তি আর উপহাস। অনেক সময় মেয়েদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় বাবার বাড়িতে।
ছেলেদের বয়স বাড়লেও বিয়ের জন্য কেউ মেয়ে দিতে চায়না। কাজের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা কেউ কাজ দিতে চায় না, কেউ পাশেও দাঁড়ায় না। ফলে দারিদ্র্যের সঙ্গে চলছে তাদের এক কঠিন লড়াই।
কেউ দিনমজুর, কেউবা রিকশাচালক এভাবেই কোনোরকমে জীবন টেনে নিচ্ছিল পরিবারটি। কিন্তু বয়সের ভার, রোগে আর সমাজের বঞ্চনায় এখন সে জীবনও টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিরল এই রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। টাকার অভাবে কেউই নিতে পারেননি উন্নত চিকিৎসা। অথচ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হরমোনজনিত কারণে এই রোগ হয় এবং চিকিৎসা পেলে তা নিরাময়ের সম্ভাবনাও আছে।
একটু সাহায্য, একটু সহানুভূতি এটুকুই চাওয়া এই অসহায় পরিবারটির। সমাজ ও সরকারের সদয় দৃষ্টি পেলে হয়তো বদলে যেতে পারে এই পরিবারের জীবন। শরীর ও মুখের লোমে ঢাকা কষ্টের ছায়া মুছে তারা হয়তো আবারও হাসতে পারবে, বাচঁতে পারবে সমাজের আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মতোই।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: