রংপুরে এলপিজি স্টেশনে বিস্ফোরণ: ‘ড্রিম এলপিজি’র কাছে ২ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি

রংপুরের সিও বাজারে অবস্থিত মেসার্স সিও বাজার এলপিজি স্টেশনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রাণ গেছে একজনের, আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন। এ ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। বর্তমানে এলপিজি স্টেশনটি টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে প্রশাসন। এ ঘটনায় বিস্ফোরক অধিদফতর ও জেলা প্রশাসন আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
শনিবার (১৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে স্টেশনটি মেরামতের কাজ চলাকালে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তেই শব্দের তীব্রতা ছড়িয়ে পড়ে পুরো পাম্পজুড়ে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশপাশের বহু বাড়িঘর, দোকানপাট ও যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কম্পনে মনে হচ্ছিল ভূমিকম্প হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে কমপক্ষে দুই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির কথা জানানো হয়েছে।
সোমবার (২১ জুলাই) সকালে নগরীর আইডিয়াল মোড়ে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ অটো গ্যাস অনার্স এসোসিয়েশন রংপুর জোনের নেতারা। এসোসিয়েশন সভাপতি খোন্দকার মাহমুদ ইলাহী জানিয়েছেন, রংপুর নগীর মের্সাস সিও বাজার এলপিজি অটোগ্যাস অ্যান্ড কনভার্শন সেন্টার বিস্ফোরিত হওয়ার ঘটনাটি পাম্প কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ঘটেনি। বরং এই ব্যবসায় উদ্যোক্তাদের পূর্ববর্তী কোন অভিজ্ঞতা নেই। পুরো নির্ভর করতে হয় গ্যাস কোম্পানিগুলোর ওপর। তারা কি ধরনের গ্যাস সিলিন্ডার ও অন্যসব উপকরণ সরবরাহ করছে তার যাচাই করার কোনো সক্ষমতা নেই পাম্প মালিকদের। সিও বাজার এলপিজি অটোগ্যাস অ্যান্ড কনভার্শন সেন্টারে সব উপকরণ সরবরাহ করেছে ‘ড্রিম এলপিজি’ কোম্পানি। এই দূর্ঘটনার সকল দায়ভার নিতে হবে কোম্পানিকে। ক্ষতিপুরণ দিতে হবে দুই কোটি টাকা। এছাড়া মের্সাস সিও বাজার এলপিজি অটোগ্যাস অ্যান্ড কনভার্শন সেন্টার সংলগ্ন এলাকায় যে সব বাসা-বাড়ি ও পরিবহণ ক্ষতি হয়েছে সেসব ক্ষতিপুরণও দেওয়ার দাবি জানান। নিম্নমানের উপকরণ সরবরাহে প্রাণহানিসহ হতাহতের ঘটনায় ‘ড্রিম এলপিজি’ কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলার করার কথাও জানান তিনি।
অটোগ্যাস অনার্স এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক আহাম্মেদ রহমান সাগর জানিয়েছেন, সিও বাজার এলপিজি স্টেশন বিস্ফোরনের ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি সামাজিকভাবে সম্মানহানি হয়েছে সিও বাজার এলপিজি স্টেশনের মালিকসহ পুরো এসোসিয়েশন। রংপুরসহ দেশে আর কোন এলপিজি পাম্প যাতে বিস্ফোরণ না হয় সেজন্য লাইসেন্স প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, সিও বাজার এলপিজি অটোগ্যাস অ্যান্ড কনভার্শন সেন্টারের পরিচালক আরিফুজ্জামান আরিফ ও ফারুক আহমেদ বিপুল জানিয়েছেন, প্রাথমিক অনুমতি নিয়ে মের্সাস সিও বাজার এলপিজি অটোগ্যাস অ্যান্ড কনভার্শন সেন্টারের কার্যক্রম শুরু হয় গেল বছরের জুন মাসে। পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাস সরবরাহ করা হয় পরিবহণগুলোতে। এরপর ছোট-খাটো কিছু সমস্যা দেখা দিলে সরবরাহকারী ‘ড্রিম এলপিজিকে’ অবগত করলে তারা সেসব সমস্যা সমাধান করে দেন। বিস্ফোরণের দিন তারাও পাম্পে অবস্থান করছিলেন। ‘ড্রিম এলপজি’ এর পক্ষে দুইজন টেকনিশিয়ান সিলিন্ডারে কাজ করছিলেন। কিছু বোঝার আগেই খালি সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এঘটনায় পরিচালক ফারুক আহমেদ বিপুলসহ পাম্প স্টাফরা গুরুতর আহত হন।
বিস্ফোরক অধিদফতর রংপুরের সহকারী পরিচালক অশোক কুমার দাস জানিয়েছেন, ঘটনার পর রবিবার (২০ জুলাই) বিস্ফোরিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়। প্রাথমিকভাবে নানা দিক নিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। ২০ হাজার লিটার ধারন ক্ষমতা মের্সাস সিও বাজার এলপিজি অটোগ্যাস অ্যান্ড কনভার্শন সেন্টার প্রাথমিক অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছিলো। তবে চূড়ান্ত অনুমোদন ছিলো না। বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য রংপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানিয়েছেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এদিকে আহতদের স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার পর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিভাগের ১৩৫ টি অটো গ্যাস স্টেশনে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
বিভি/এসজি
মন্তব্য করুন: